বর্তমানে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় সকল শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় সর্বপ্রথমে রয়েছে ইউরোপ। ইউরোপের দেশ ও সংস্কৃতি অনেক উন্নত। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। ইউরোপে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকা থাকতে পারে ইউরোপের অন্যতম একটি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র। শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং উচ্চতর একাডেমিক মানের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই দেশটিতে পাড়ি জমায় উচ্চশিক্ষার জন্য। চেক প্রজাতন্ত্রে জীবন যাত্রার খরচ ও টিউশন ফি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছু কম।
বর্তমানে চেকের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রায় ৪৪,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এখানকার বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে চেক এবং ইংলিশ দুই মিডিয়ামে ব্যাচেলর, মাস্টার এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু আছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো শাখায় রয়েছে শিক্ষার সুযোগ । রয়েছে পড়াশুনা শেষে চাকরির সুবিধা। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আপনি কেন চেক প্রজাতন্ত্রকে বেছে নিবেন।
চেক প্রজাতন্ত্র মধ্য ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। রূপকথার গল্প, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং দুর্দান্ত স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত চেক প্রজাতন্ত্র। দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম প্রাগ। ঐতিহাসিক বোহেমিয়া অঞ্চল, মোরাভিয়া অঞ্চল ও সাইলেসিয়া অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে দেশটি গঠিত। ইউরোপের অনেক দেশই শরণার্থী সংকটে বিপর্যস্ত। তবে কয়েকটি দেশ এ সংকট থেকে নিজেদের বাইরে রেখেছে। তেমনই এক দেশ চেক প্রজাতন্ত্র। চেক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। গথিক, রেনেসাঁস, বারোক ও আধুনিক ধাঁচের স্থাপত্যকলা, নৈসর্গিক দৃশ্যাবলিসমৃদ্ধ গ্রামাঞ্চল, প্রাচীন প্রাসাদ, স্বাস্থ্যসম্মত খনিজ ঝরনা বা স্পা, ফ্রান্ৎস কাফকার লেখা আর আন্তোনিন দ্ভোরাকের সংগীতের জন্য দেশটি বিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশটি সোভিয়েত প্রভাবাধীন ছিল।
চেক প্রজাতন্ত্রে প্রায় ২৭ টি সরকারি ও ৪০ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্যা চার্লস ইউনিভার্সিটি ইন প্রেগ। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৩৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রথম চেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। এদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একই রকম এবং আন্তর্জাতিকভাবে সকল চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বীকৃত প্রাপ্ত। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ চেক মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন এবং ইয়থ এন্ড স্পোর্টস নিয়ন্ত্রণ করে। চেক প্রজাতন্ত্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বর্যাঙ্কিং শীর্ষ সারিতে রয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
* চার্লস ইউনিভার্সিটি (Charles University)।
* চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (Czech Technical University)।
* মাসারেক ইউনিভার্সিটি (Masaryk University) ।
* ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্স (University Of Economics) ।
* বিয়ারেনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (Brno University of Technology) ।
২. কাজের সুযোগঃ-
ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পাবেন। চেক প্রজাতন্ত্রে বিভিন্ন রেস্তোরা বা মিনি মার্কেটে কাজ পাবেন। কিন্তু আপনি চাইলে চেক প্রজাতন্ত্রে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার অধিক কাজ করতে পারবেন। এতে আপনার ভিসা বা অন্য কোনকিছুর জন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ শিক্ষার্থীরা কত ঘণ্টা কাজ করছে তার কোনো হিসাব রাখা হয় না এবং চেক সরকার শিক্ষার্থীদের আয়ের উপর ট্যাক্স ফ্রি করেছে। তবে মনে রাখবেন, ক্লাস কিন্তু নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। ক্লাস নিয়মিত করে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার অধিক কাজ করলেও সমস্যা নেই।
৩. আইটিঃ-
চেক প্রজাতন্ত্রের আইটি শিল্পের আকার গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বেশ কয়েকটি বহুজাতিক আইটি প্রতিষ্ঠান দেশটিতে তাদের শাখা খুলেছে। এতে পেশাদারদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল রূপান্তরের ওপর জোর দেওয়ার কারণে দেশটিতে সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। ডেটা বিশ্লেষক, সাইবার নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ এবং আইটি প্রকল্প পরিচালকদের চাহিদা বেশি রয়েছে দেশটিতে।
৩. নিরাপদ দেশঃ-
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৩ জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের নিরাপদ দেশের তালিকায় চেক প্রজাতন্ত্রের স্থান ১২তম।এছাড়াও প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ‘ইন্টারন্যাশনস’ নামক প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে গবেষণা জরিপ করে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। ১৮৮ অঞ্চলে কর্মরত ১৩ হাজার প্রবাসীর জীবনযাপন ও তাদের কাজের পরিবেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
৪. ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিংঃ-
চেক প্রজাতন্ত্রে উৎপাদন বা শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনশিল্প, মোটরগাড়ি, মহাকাশ এবং যন্ত্রপাতির শিল্পকারখানা রয়েছে। ইউরোপের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষ শ্রম জনসংখ্যা এবং সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে দেশটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং উত্পাদন সংস্থাগুলোর জন্য পছন্দসই একটি জায়গা।
৫. ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে বসবাসঃ-
চেকপ্রজাতন্ত্রে বসবাস করা মানে ইউরোপের কেন্দ্রে বসবাস করা, কারণ চেক প্রজাতন্ত্রকে চারটি দেশ ঘিরে রেখেছে। দেশটির উত্তরে পোল্যান্ড, পূর্বে স্লোভাকিয়া, দক্ষিণে অস্ট্রিয়া এবং পশ্চিমে জার্মানি। মাত্র দুই তিন ঘণ্টার প্লেন অথবা বাসে ভ্রমণ করে পৌঁছে যেতে পারবেন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।
৬. স্বাস্থ্যসেবা এবং বায়োটেকনোলজিঃ-
বয়স্ক জনসংখ্যা, স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং চিকিৎসা গবেষণায় ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি উন্নতি করছে। জৈবপ্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, বায়োটেকনোলজি গবেষক এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে দেশটি অনেক এগিয়ে।
৭. ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিংঃ-
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী শহর প্রাগ মধ্য ইউরোপের একটি প্রধান আর্থিক কেন্দ্র। দেশটিতে আর্থিক বিশ্লেষক, হিসাবরক্ষক এবং ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞসহ আর্থিক পেশাদারদের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, দেশটি তার আর্থিক পরিষেবা শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রেখেছে। উপরন্তু ফিনটেক কোম্পানিগুলোর বৃদ্ধি এই খাতে অসংখ্য কাজের সুযোগ উন্মুক্ত করেছে।
৮. ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটিঃ-
চেক প্রজাতন্ত্র সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসহ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এর ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ভ্রমণসংস্থা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়।
চেক প্রজাতন্ত্রের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই পাঁচ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কোর্স অফার করেঃ
* চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ইন প্রাগ
* ব্রনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
* ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট বোহেমিয়ার ইন পিলসেন
* ইউনিভার্সিটি অব ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
* অ্যাংলো-আমেরিকান ইউনিভার্সিটি
* প্রাগ ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস