অনেকেরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা এবং যোগ্যতা থাকলেও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকে ভাবেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে অনেক টাকা লাগে। আবার অনেকে জানেন না কীভাবে কোথায় অবেদন করতে হয়। দেশ এবং সাবজেক্ট ভেদে Ielts/gre/ Duolingo স্কোর কত লাগে সেটিও একটি বড় বিষয়।
এ অবস্থায় বেলজিয়ামে উচ্চশিক্ষা ও এটি কেমন দেশ, এসব নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
বেলজিয়াম সেন্ট্রাল ইউরোপের একটি ছোট ও সুন্দর দেশ। দেখতে বেশ পরিপাটি এবং অবশ্যই ধনী দেশ। অনেকে বেলজিয়ামকে ইউরোপের রাজধানীও বলে থাকেন। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড কোয়ার্টার বেলজিয়ামে অবস্থিত। বেলজিয়ামে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। এখানে সব নাগরিকের চিকিৎসা খরচসহ আরো অনেক সুবিধা সরকার দিয়ে থাকে।
বেলজিয়ামের নাগরিকদের বেলজিক বলা হয়। এদের নিজেদের কোনো ভাষা নেই। সাধারণত ইংলিশ, ডাচ, জার্মান ও ফ্রেন্স ভাষায় কথা বলেন তারা। তবে ইংলিশ এবং ডাচ বেশি জনপ্রিয়।
বেলজিয়ামের চারপাশে জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবার্গ রয়েছে। তবে কোনো দেশের সঙ্গে কোনো বর্ডার নেই। যে কেউ চাইলে বাসে বা ট্রেনে যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। শুধু এই কয়েকটি দেশই নয়, সেনজেনভুক্ত যে কোনো দেশে ভ্রমণ করা যায় বিনা ভিসায় (যদি বেলজিয়ামে প্রবেশের বৈধ কাগজ থাকে)।
বেলজিয়ামের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। এক কথায় বলা যায়, ইউরোপের শিল্পোন্নত ধনী দেশ বেলজিয়াম। এ দেশের প্রধান তিনটি পণ্য হচ্ছে চকলেট, বিয়ার ও গ্লাস। চটলেট তৈরিতে বেলজিয়াম অন্যতম। আমাদের দেশের স্বনামধন্য নাসির গ্লাস বেলজিয়াম থেকেই তাদের গ্লাসের কাঁচামাল সংগ্রহ করে থাকে।
বেলজিয়ামে পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা অনেক ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো এখানে পার্ট-টাইম জব করে পড়ালেখার খরচ মেটানো সম্ভব।
আমি বেলজিয়ামের Howest University of applied sciences বিশ্ববিদ্যালয়ে Cyber security তে অর্নাসে পড়াশোনা করছি। বেলজিয়ামে পড়াশোনা উঁচু মানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ চমৎকার। শিক্ষা উপকরণ আধুনিক। এখানকার শিক্ষকরা অতিমাত্রায়ে সহযোগিতা করে থাকেন শিক্ষার্থীদের। বন্ধুর মতো ব্যবহার তাদের। এবার বেলজিয়ামের পড়াশোনা নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
এখানে পড়াশোনার মান নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ চমৎকার। শিক্ষা উপকরণ আধুনিক। শিক্ষকরা বন্ধুর মতো শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে থাকেন। সহপাঠীরাও যথেষ্ট আন্তুরিক। সবাই সবাইকে সম্মান করেন। এমনকি সব ধরনের কাজকেই তারা সম্মান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার বেশ কিছু দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখানে না আসলে হয়তো এমন অভিজ্ঞতা হতো না। মানুষ হিসেবে তারা অসাধারণ। কে কাকে কতটা হেল্প করতে পারে- তাদের এমন মানসিকতায় যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। তাদের চিন্তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একদমই আলাদা। হীনমন্যতায় ভোগেন না কেউ, তাদের স্বপ্ন অনেক বড়। তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই- দেশ এবং মানুষের সেবা করা।
বেলজিয়ামে ধনী গরীবের ভেদাভেদ করা হয় না। ধর্ম, বর্ণ, খাবার নিয়ে কারো কোনো সমস্যা নেই। ইউরোপীয়রা সময় পেলেই ঘুরতে যান। তারা খুব ভ্রমণ প্রিয় ও বিলাসী জীবন পছন্দ করেন। এখানে মানুষের জীবন সুন্দর ও নিরাপদ।
আগামী লেখায় বেলজিয়ামে পড়ালেখা করতে কীভাবে আবেদন করতে হবে, ব্যাংক অ্যামাউন্ট, আবাসন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য এবং বিদেশি ছাত্রদের সাক্ষাৎকার ও তাদের চিন্তা ভাবনা নিয়ে লেখার চেষ্টা করবো।
আরেকটি কথা বলবো, বেলজিয়ামরা ফুটবল খুব পছন্দ করেন। বিশ্বর্যাংকিয়ে তারা দুই নম্বরে, ব্রাজিলের পরেই। যদিও এবারের বিশ্বকাপে তারা ভালো করতে পারেনি। বেলজিয়ামের একটা ডিগ্রি থাকলে, কাজ জানলে আপনি ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে কাজ করার এবং বসবাসের সুযোগ পাবেন।