বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

ঈদে এক দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার আশপাশের কিছু মনোরম জায়গা থেকে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
ঈদের ছুটিতে অনেকে অনেক জায়গায় ঘুরতে যান। কেউ বন্ধু-বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে, কেউ-বা পরিবার নিয়ে। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার- যে কাউকে নিয়েই চাইলে এক দিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার আশপাশের কিছু জায়গা থেকে। কোন কোন জায়গায় যাবেন এবং কিভাবে যাবেন, তা জানাতেই এই প্রতিবেদন।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
আহসান মঞ্জিলবুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার নবাবদের আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত স্থান আহসান মঞ্জিল। এই ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নবাবদের আভিজাত্যের ছোঁয়া উপভোগ করার মতো মজা আর হবে না। এই আহসান মঞ্জিলে প্রথম ঢাকা শহরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলেছিল।

আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব দিকের অংশটি দরবার বা রংমহল  এবং পশ্চিম দিকের অংশটি ছিল অন্দরমহল। দুটি অংশে সংযোগ করা হয়েছে দোতলায়। দক্ষিণ পাশে রয়েছে খোলা চত্বর।
তারপর বুড়িগঙ্গা নদী।
1
আহসান মঞ্জিল। সংগৃহীত ছবি

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ভ্রমণ ও বিনোদনপ্রিয় শত শত মানুষের পদচারণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এ চত্বর। দোতলা থেকে সিঁড়ি চলে গেছে নদীর ঘাটে। প্রায় পাঁচ একর জমিসহ ঐতিহাসিক এই ভবনটি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করে জাদুঘরে রূপান্তর করে।

জাদুঘরের মোট ২৩টি গ্যালারিতে ঢাকার নবাবদের জীবনযাত্রা ও পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। 
লালবাগ কেল্লামুঘল আমলে নির্মিত একটি অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত লালবাগ কেল্লা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখর থাকে লাল ইটের দর্শনীয় কেল্লাটি। সেই সঙ্গে দেখে আসতে পারেন কেল্লার পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক লালবাগ শাহি মসজিদও। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুঘল সুবেদার মুহাম্মদ আজম শাহ এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দিল্লি চলে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার উত্তরসূরি মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। কারণ মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরিবীবী মারা যান। এ কারণে তিনি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

2
লালবাগ কেল্লা। সংগৃহীত ছবি

বলধা গার্ডেন

রাজধানীর ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির গাছ। এখানে একটি সুন্দর পুকুর আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই বাগানে নানা ধরনের গাছের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের জন্য গেস্ট হাউস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বন বিভাগ নব-উদ্যোগে উদ্যানের উন্নয়ন শুরু করে। ফলে বাগানের হারানো গৌরব অনেকটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর দুটি নতুন গ্রিনহাউস নির্মাণসহ সর্বসাধারণের জন্য বাগানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও গড়ে ওঠে।

বলধা গার্ডেন দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশের নাম সাইকী এবং অন্যটি সিবলী। সাইকী অর্থ আত্মা ও সিবলী অর্থ প্রকৃতির দেবী। দুটি শব্দই গ্রিক পৌরাণিক শব্দ। সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেকগুলো শাপলা হাউস, বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জপত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি, সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়াতর ঘর 

বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক

শান বাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখতে যেতে হবে বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে চাইলে এখানে নৌকায় করে ঘুরতে পারেন। জায়গাটি গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে পাকা রাস্তা। শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি। বুড়িগঙ্গা পার্ক বা উদ্যান বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সর্বজনীন স্থান। এই উদ্যানটি ২০১২ সালের অক্টোবরে পাবলিক উদ্যান হিসেবে স্থাপিত হয় যদিও পূর্বে মালবাহী জেটি ছিল।

ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

ঢাকা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনারগাঁয়ে অবস্থিত এই পানাম নগর। পানাম নগরকে চার শত বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের নগরভিত্তিক একটি প্রাচীন নগরীর মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রাচীনত্ব আরো গভীর হতে পারে। ফার্সি শব্দ পাইনাম থেকে পানাম শব্দটি এসেছে। অর্থ আশ্রয়। ধারণা করা যেতে পারে ঐতিহাসিক সড়কে-ই-আযম গ্রান্ড ট্রাংক রোডের সমাপ্তি এ পানাম নগরেই হয়েছিল। সে সুবাদে পানাম নগরী সরকার-ই-সোনারগাঁওয়ের পরগনার হেড কোয়ার্টার হিসেবেও বিবেচিত।

3
পানাম নগর। সংগৃহীত ছবি

পানামের প্রাচীনত্ব বহন করে ট্রেজারার হাউস, সেতু, কস্পানির কুঠি এবং প্রাচীন বনেদি ইমারতসমূহ। সোনারগাঁয়ের নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যে বিখ্যাত মসলিনের আড়ং ছিল পানাম নগর। পানাম নগরের বিভাশিত বর্ণাঢ্য-ইমারতসমূহ সাক্ষ্য দেয় একসময় সোনারগাঁয়ের অভিজাত নাগরিকদের বসবাসের কেন্দ্র ছিল। 

লোকজ শিল্পসমৃদ্ধ নান্দনিক ফুল, লতাপাতাসংবলিত দেয়াল, চিত্রিত চারুতায় ভরপুর মায়াবি নাচঘরকে কেন্দ্র করে লোকজ গানের আসর বসত। মায়াবি পর্দা দুলে ওঠার মতো মসলিনের পর্দা ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন পূজা উৎসবে মুখর নগরী আবহমান বাঙালির লোকাচার, জীবনাচার, আবহমান জীবন সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল ছিল পানাম নগর।

4
পানাম নগর। সংগৃহীত ছবি

লোকজ উপাদানের মোটিভসংবলিত একচালা দোচালা ছনের ঘরের মডেলসংবলিত ইমারত, বঙ্গীয় ‘একচালা দোচালা গৃহায়ণ’ সংস্কৃতির আদল রূপে সুদূঢ় দিল্লিতে সমাদৃত হয়েছিল। এ থেকে ধারণা করা যায়, প্রাচীন এ সোনারগাঁয়ের ছনে ছাওয়া কুঁড়েঘরের আদলই মোগল শিল্পকলাকে উৎসাহিত করেছিল। এসবেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সোনারগাঁয়ের পৃথিবীখ্যাত নান্দনিক চারু ও কারুশিল্পের জন্য।

জিন্দা পার্ক

গন্তব্য যদি হয় খানিকটা দূরে, আর হাতে যদি থাকে সারা দিনের সময়, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জের জিন্দা পার্ক থেকে। ঢাকাতে সময় কাটানোর মতো অনেক পার্ক আছে। ঢাকার যানযট, কোলাহল থেকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পেতে হলে ঘুড়ে আসা উচিত জিন্দা পার্ক থেকে। 

অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর ব্যাবহার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পার্কটিতে। পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যাগের ফসল নয়। আবার কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নির্মাণও নয়। পার্কটি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রাণান্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

এলাকার ৫০০০ সদস্য নিয়ে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’ ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে। এ দীর্ঘ ৩৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের ফসল এই পার্কটি। এ রকম মহাউদ্দেশ্য, এত লোকের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ত্যাগ স্বীকারের উদাহরণ খুব কমই দেখা যায়। অপস ক্যাবিনেট, অপস সংসদ এবং অপস কমিশন নামে পার্কটিতে ৩টি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। বর্তমানে জিন্দা গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রামও বলা হয়।

5
জিন্দা পার্ক। সংগৃহীত ছবি

জিন্দা পার্কের অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা জিন্দা পার্কে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, রয়েছে একটি রেঁস্তোরাও। ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারের বেশি গাছগাছালি আছে পার্কটিতে। গাছের এই সমারোহের পরিবেশকে করেছে শান্তিময় সবুজ, কলকাকলীতে মুখর করেছে অসংখ্য পাখি। শীতল আবেশ এনেছে ৫টি সুবিশাল লেক। তাই গরম যতই হোক পার্কের পরিবেশ আপনাকে দেবে শান্তির ছোঁয়া। 

ফ্যামিলি পিকনিকের জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ পরিচিত জায়গা। কাঠের ব্রিজ পার হয়ে দিঘির মাঝামাঝি তৈরি করা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকার সময়গুলো দারুণ উপভোগ করবেন। জিন্দা পার্কে প্রবেশের টিকিট মূল্য প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজন ১০০ টাকা। ৫ বছরের নিচে ছোট বাচ্চাদের টিকেট ৫০ টাকা। তবে খাবার নিয়ে প্রবেশ করলে টিকিটের মূল্য হবে ১২৫টাকা। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে প্রবেশমূল্য ২৫ টাকা এবং পুকুরে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খরচ পড়বে ৩০ মিনিট ২০০ টাকা।

6
জিন্দা পার্ক। সংগৃহীত ছবি

কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক

ঢাকা থেকে জিন্দা পার্কের দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। কুড়িল বিশ্বরোডের বিআরটিসি বাস কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজের টিকিট কেটে নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে জিন্দা পার্ক বাইপাসে যেতে লেগুনা বা অটো পাবেন। বাইপাসে নেমে ডিরেকশন অনুযায়ী হেটেই পৌঁছাতে পারবেন পার্কের গেট পর্যন্ত। তবে রিকশায়ও যেতে পারেন। 

ঈদের সময়ে ঢাকার এসব জায়গায় পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। ঈদের ছুটিও কাটবে, মনও ভালো হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com