২৬ মার্চ থেকেই কার্যত শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। এই ছুটি চলবে টানা দশদিন। মাঝে ২-১ দিন অফিস খোলা থাকলেও অনেকে ছুটি নেবেন আগেই। তাই দীর্ঘ এ ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থেকে। ঈদের আগে কিংবা পরে কোথায় ঘুরতে যাবেন? এখনই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর সড়কের কাছাকাছি করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক স্থান ও অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। মৌড়, গুপ্ত ও সেন রাজবংশের শাসনামলে এটি রাজধানী ছিল। এখানে দেখতে পাবেন গোবিন্দ ভিটা মন্দির, মানকালির কুন্ড, পরশুরাম প্রাসাদ, জিয়াত কুন্ড প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থান।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ’ এ সুন্দরবন। বনের বিস্তৃতি প্রায় ৬০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে। পর্যটন মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকে সদা মুখরিত থাকে সুন্দরবন।
কুমিল্লা জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর জন্য সুপরিচিত। জেলার উত্তর পাশের পাহাড়ি অংশ ময়নামতি ও দক্ষিণ পাশে লালমাই নামে পরিচিত। লালমাই ও ময়নামতির মধ্যবর্তী শালবন বিহার একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। শালবন বিহার ও তার আশপাশে আছে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালা পাহাড় উচ্চতায় ১ হাজার ১০০ ফুট। এর ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে, বাকি অংশ ভারতের উত্তর ত্রিপুরায়। সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির নীল পানি দেখা যায়। একে স্থানীয় ভাষায় ‘লংলা পাহাড়’ ডাকা হয়। পাহাড়টি ‘হারারগঞ্জ পাহাড়’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন এক্সট্রিম অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিং ট্রেইলের ট্রিপ দেওয়ার জন্য। আরও আছে অপূর্ব সুন্দর আজগরাবাদ চা বাগান।
পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহরের সমুদ্রসৈকত যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বন্দরনগরী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি ও নেভাল একাডেমি এখানে অবস্থিত।
বগাকাইন লেক বা বগা লেক নামে পরিচিত প্রাকৃতিক লেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার অন্তর্গত। সম্ভবত ২০০০ বছর আগে মৃত কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে লেকটি তৈরি হয়েছিল। ‘ড্রাগন লেক’ নামে খ্যাত ১৫ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে বগা লেক। লেকের গভীরতা ১২৫ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৪৬ ফুট উপরে থাকা লেকটি আকাশ, সবুজের চাদরে ঢেকে থাকা পাহাড়, নীল জলের অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে আছে।
বাংলদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রেমাক্রিতে পাহাড় ও বনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে অবস্থান নাফাখুমের। নাফাখুম আবার রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। একবার এখানে গেলে বারবার যেতে মন চাইবে। এখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনও বান্দরবান জেলা শহরেই পাওয়া যাবে।
বাংলার কাশ্মীর অর্থাৎ সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ হ্রদ বা শহীদ সিরাজ লেক বা নিলাদ্রী লেকে যেতে পারেন। একদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ অন্যদিকে সবুজ নীলাভ রঙের জল খেলা করছে। তার অন্যপাশে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। আর নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর। এ যেন শিল্পীর হাতে আঁকা অসাধারণ এক ছবি।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘির বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে মহামায়া লেক। ১১ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত এটি একটি সেচ প্রকল্প। মহামায়া প্রকল্পে আছে লেক, পাহাড়, ঝরনা ও রাবার ডেম। চট্টগ্রাম সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে মিরসরাই উপজেলার অবস্থান। একে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারও বলা যায়।