নীল সমুদ্র, পাহাড়ের ছায়া, সুবিস্তৃত বালিয়াড়ি, সব মিলিয়ে কক্সবাজার যেন প্রকৃতির এক খোলা চিত্রকর্ম। প্রতি বছর হাজারো পর্যটক ছুটে যান এই সমুদ্র শহরে। এবারের ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজার।
এবার কক্সবাজার যেতে চাইলে, শুধু কলাতলী, সুগন্ধা বা লাবণী সৈকতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বরং বেরিয়ে পড়ুন ভিন্ন স্বাদ পেতে। দেখে আসুন সমুদ্র-পাহাড়ের মিতালি, নির্জন সৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কিংবা দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ।
নাজিরারটেক: নির্জন সৈকতের আহ্বান
সাগরের গর্জন শুনতে চান, কিন্তু কোলাহল পছন্দ নয়? তাহলে কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরের নাজিরারটেক সৈকতই আপনার জন্য। যেতে হবে নাজিরারটেক শুটকি মহালের পাশ দিয়ে। শুটকির গন্ধ পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন শান্ত-নির্জন সৈকতে। কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে টমটম বা সিএনজিতে যেতে খরচ পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। বালিয়াড়িতে পা ডুবিয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে সময় কাটানো এখানে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা
শুঁটকি তৈরি এবং জেলেদের জীবনধারা সামনে থেকে দেখতে পাবেন এখানে এলে। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট
মেরিন ড্রাইভ: পাহাড় আর সমুদ্রের হাতছানি
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ এখন অনেকেরই পছন্দের গন্তব্য। এক পাশে নীল সাগর, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়—সড়কের দুপাশের সৌন্দর্য পথকেই গন্তব্য করে তুলেছে। এই পথেই দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকত। দরিয়ানগরে পাহাড়ের গুহা, হিমছড়িতে ঝর্ণা আর ইনানীতে প্রবালপাথরের মিতালি। চাইলে সারাদিনের জন্য সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন ১৫০০ টাকায়।
মহেশখালী: একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপের টানে
কক্সবাজার থেকে স্পিডবোটে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। নদীর বুকে বাতাসের শীতল স্পর্শ, ঢেউয়ের খেলা আর দূরে পাহাড়ের সারি মন ভরিয়ে দেবে। মহেশখালীতে গেলে দেখতে পাবেন আদিনাথ মন্দির, শুটিং ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির ও লবণের মাঠ। আবার ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ঘুরে নিতে পারেন সুন্দরবনের স্বাদও।
রামু: বৌদ্ধবিহার আর ইতিহাসের গল্প
ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য রামু হতে পারে চমৎকার গন্তব্য। এখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। রাংকোট বৌদ্ধবিহার কিংবা কেন্দ্রীয় সীমাবিহারও চোখে পড়ে। আর এখানেই রয়েছে কক্স সাহেবের বাংলো। ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামে কক্সবাজারের নামকরণ। ইতিহাসের টুকরো ছুঁয়ে দেখতে চাইলে এখানে একবার যেতেই হবে।
হিমছড়ি-ইনানী: সমুদ্র আর পাহাড়ের মিতালি
সমুদ্রের পাশ দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে এগোলেই হিমছড়ি। এখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় দর্শনীয় ভিউ পয়েন্ট আর ঝর্ণা। এরপর ইনানী সৈকতে গেলে দেখা মিলবে স্বচ্ছ জল আর ছড়িয়ে থাকা প্রবালপাথরের। সূর্যাস্তের সময় এখানে বালিতে পা ডুবিয়ে দাঁড়ালে মনে হবে, সময় থমকে গেছে।
কক্সবাজার শুধু সমুদ্র নয়, পাহাড়-নদী-ঐতিহ্যেরও শহর। এবার ঈদের ছুটিতে সেখানে গেলে তালিকায় রাখুন এই ৫টি গন্তব্য। সমুদ্রের ঢেউ, পাহাড়ের ছায়া আর ইতিহাসের গল্প—সব মিলিয়ে ফিরতে হবে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে।