মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

ইসরায়েল ছাড়ছেন ইহুদিরা, দৈনিক হাজারখানেক যাচ্ছেন সাইপ্রাস

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

হলোকাস্ট থেকে বাঁচতে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানেই ফিরছেন ইসরায়েলি ইহুদিরা। দৈনিক প্রায় এক হাজার ইহুদি ইসরায়েল ছেড়ে সাইপ্রাসে পাড়ি জমাচ্ছেন। এখন তাঁরা এ দেশকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছেন।

এখানেই ছিল ব্রিটিশদের বন্দিশিবির, যেখানে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সালের দিকে ৫৩ হাজার ইহুদিকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা নাৎসিদের হলোকাস্ট থেকে প্রাণে বাঁচাতে দলে এখানে জড়ো হয়েছিলেন। সেখান থেকেই পরবর্তীতে নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রে তাঁদের শেষ ১০ হাজার জনকে স্থানান্তর করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর ইহুদিরা আর সেখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। ওদিকে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের এই সামরিক শক্তির প্রদর্শনীতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনের নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষেরা।

কিন্তু এরপরও ‘ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি’ ইসরায়েলকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না ইহুদিরা। হাজার হাজার ইহুদি দেশ ছাড়ছেন। মূলত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই দেশত্যাগী মানুষের স্রোত দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে।

সাইপ্রাসের মধ্য লারনাকায় ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার এখন লোকে লোকারণ্য। রীতিমতো সংকট পরিস্থিতিতে চলে গেছে এই কমিউনিটি সেন্টার। করিডর এবং বিনোদনের স্থানগুলো ভরে গেছে যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষে। ইসরায়েল থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে সাইপ্রাস দ্বীপে একটু নিরাপত্তা ও শান্তি খুঁজতে ছুটছেন ইহুদিরা।

দ্বীপের প্রধান রাব্বি অ্যারি জিভ রাসকিন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘দৈনিক প্রায় ১ হাজার লোক এখানে আসছে। সেই ভয়ানক দিন (৭ অক্টোবর) থেকে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ এখন মানসিক শান্তির সন্ধানে সাইপ্রাসে এসেছে।’

সংঘাত শুরু হওয়ার পর সেই মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবার সাইপ্রাসে গেছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রতিশোধমূলক পাল্টা আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অপরপক্ষের পাল্টা আক্রমণের ভয়েও অনেকে দেশ ছেড়ে সাইপ্রাসে পাড়ি জমিয়েছেন। যেখানে ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ।

সাম্প্রতিক সপ্তাহে সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের ঢল নেমেছে। কিন্তু সংকটকালে সাইপ্রাসে শরণার্থীদের এমন আগমন নতুন নয়। হামাস–ইসরায়েল সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার মধ্যে দেশটির সংঘাত–বিভক্ত রাজধানী নিকোসিয়াতে পশ্চিমা দূতাবাসগুলোও ‘কৌশলগত ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপটি আবারও মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি আশ্রয় কেন্দ্র এবং পরিচালনা কেন্দ্রে’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখে তৎপরতা চালাচ্ছে।

এর আগে ২০০৬‍ সালে লেবানন যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ৩০ হাজার বিদেশি নাগরিকের জন্য একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সবচেয়ে পূর্বের এ দেশটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে সুদান থেকে হাজার হাজার ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীকে উড়োজাহাজে করে দেশে ফেরানোর সময়ও সাইপ্রাসকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্ট্যান্টিনোস কম্বোস আশঙ্কা করছেন, গাজা–ইসরায়েল সংঘাত বাড়তে থাকলে লেবানন এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য অংশ থেকে সাইপ্রাসে ১ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। পার্লামেন্টে তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে থেকে ৩৫টি দেশের ১ হাজারেরও বেশি পুরুষ, নারী ও শিশুকে দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের এসএএস সৈন্য এবং অন্যান্য বিশেষ বাহিনীকে সাইপ্রাসে তাদের সামরিক ঘাঁটিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে সাবেক এই উপনিবেশে এখনো যুক্তরাজ্যের উপস্থিতি রয়েছে। এই অভিজাত বাহিনীগুলো মূলত জিম্মি উদ্ধার অভিযানে দক্ষ বলে জানা যায়।

গ্রিসের মতো, সাইপ্রাসের দৃষ্টিভঙ্গিও দীর্ঘ দিন ধরেই ইসরায়েলের চেয়ে আরবের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকার পক্ষে। ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি এবং ইসরায়েলের উপকূলে গ্যাসের মজুত আবিষ্কারের পর সমুদ্র পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হওয়ার পথ খুলে গেছে।

সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডস এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস ৭ অক্টোবরের ঘটনার পরপরই ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে’ প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে হামাসের আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন।

তবে দুই নেতা কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টাও করেছেন। মিৎসোতাকিস গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিরীহ বেসামরিক মানুষ নিহত, আহত এবং বাস্তুচ্যুত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ক্রিস্টোডৌলিডস প্রস্তাব করেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জন্য সাইপ্রাসে একটি মানবিক সামুদ্রিক করিডর স্থাপন করা যেতে পারে। ত্রাণ পরিবহনের জন্য এই করিডর হতে পারে তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। গাজায় বিপুল মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর একটি টেকসই ও নিরাপদ পথ হতে পারে সাইপ্রাস।

সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধ বিরতি এবং স্থল পরিস্থিতি অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাইপ্রাসের প্রধান সমুদ্রবন্দর লিমাসল থেকে মাত্র ২৫৫ মাইল দূরে গাজায় ত্রাণের জাহাজ পাঠানো যেতে পারে।

ব্রাসেলস–ভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ড ইউএস–এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ান লেসার গত বুধবার সাইপ্রাস সফরের সময় বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সাইপ্রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে জোর দেয় তবে প্রধান পরীক্ষাটিই দিতে হবে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com