ইরাক এয়ারওয়েজ (Iraqi Airways), যা আরবিতে الخطوط الجوية العراقية (আল-খুতুত আল-জাওয়াইয়া আল-ইরাকিয়া) নামে পরিচিত, ইরাকের জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন। এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পুরোনো এয়ারলাইন এবং ইরাকের বেসামরিক বিমান পরিবহনের প্রধান কেন্দ্র।
প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
ইরাক এয়ারওয়েজ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে।
- এয়ারলাইন্সটি মূলত ইরাক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি এবং ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
- তাদের প্রথম বিমান ছিল ভিকার্স ভিকিং।
উল্লেখযোগ্য মাইলফলক:
- ১৯৭০-এর দশকে এয়ারলাইন্সটি তাদের বহর সম্প্রসারণ করে এবং বোয়িং ৭৪৭ ও ৭২৭ সংযোজন করে।
- ১৯৯১ সালের গালফ ওয়ার-এর সময় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে এয়ারলাইন্সটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
- ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পর পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রধান হাব ও পরিচালনা
ইরাক এয়ারওয়েজের প্রধান হাব হলো বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়া সেকেন্ডারি হাব হিসেবে বসরা, এরবিল এবং সুলেমানিয়াহ বিমানবন্দর ব্যবহৃত হয়।
ব্যবস্থাপনা:
ইরাক এয়ারওয়েজ ইরাকের সরকার পরিচালিত ইরাকি সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (ICAA) এর অধীনে কাজ করে। এটি ইরাকের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ফ্লাইট পরিচালনা করে।
বহর (Aircraft Fleet)
ইরাক এয়ারওয়েজের বহরে আধুনিক এবং মাঝারি আকারের বিমানের একটি মিশ্রণ রয়েছে।
বর্তমান বহরে অন্তর্ভুক্ত:
- বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৭৭: আন্তর্জাতিক রুটে ব্যবহৃত।
- এয়ারবাস এ৩২০ ও এ৩২১: সংক্ষিপ্ত এবং মাঝারি দূরত্বের ফ্লাইটে ব্যবহৃত।
- বম্বারডিয়ার সিআরজে ৯০০: আঞ্চলিক ফ্লাইটের জন্য।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
ইরাক এয়ারওয়েজ তাদের বহরে নতুন প্রজন্মের বোয়িং এবং এয়ারবাস বিমান সংযোজনের পরিকল্পনা করছে।
রুট নেটওয়ার্ক
ইরাক এয়ারওয়েজ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে।
অভ্যন্তরীণ রুট:
- বাগদাদ থেকে বসরা, এরবিল, নাজাফ, এবং সুলেমানিয়াহ।
আন্তর্জাতিক রুট:
- মধ্যপ্রাচ্য: দুবাই, দোহা, আম্মান, এবং জেদ্দা।
- ইউরোপ: লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, এবং কিয়েভ।
- এশিয়া: দিল্লি, ইসলামাবাদ, এবং তেহরান।
যাত্রীসেবা
ইরাক এয়ারওয়েজ যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে।
সেবা:
- ক্লাসের ধরন:
- ইকোনমি ক্লাস: মানসম্মত আসন এবং খাবারের ব্যবস্থা।
- বিজনেস ক্লাস: আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, উন্নত খাবার এবং ভিআইপি সেবা।
- অনবোর্ড সুবিধা:
- বিনোদন ব্যবস্থা।
- বিনামূল্যে খাবার এবং পানীয়।
- বেশি লাগেজ বহনের অনুমতি:
ইরাক এয়ারওয়েজ অধিকাংশ রুটে যাত্রীদের বেশি লাগেজ বহনের সুবিধা প্রদান করে।
নিরাপত্তা এবং চ্যালেঞ্জ
ইরাক এয়ারওয়েজের কার্যক্রমে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, বিশেষত যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
- বিমানবন্দরে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
- বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা।
চ্যালেঞ্জ:
- অতীতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধের কারণে ফ্লাইট স্থগিত হয়েছে।
- আধুনিকীকরণের অভাব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এয়ারলাইন্সটির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইরাক এয়ারওয়েজ তাদের সেবা এবং নেটওয়ার্ক উন্নত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
- নতুন গন্তব্য সংযোজন।
- আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিমানের সংযোজন।
- আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ।
উপসংহার
ইরাক এয়ারওয়েজ ইরাকের গর্ব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও এটি ইরাকের জাতীয় পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। উন্নত মানের সেবা এবং বহরের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে এটি ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী এয়ারলাইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
