1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ইয়েলো ক্যাবের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাব
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ১০:১০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ঘুরতে গেলেও হতে পারে ত্বকের ক্যানসার অ্যাপে টিকিট কাটলে ১০ শতাংশ ছাড় জাজিরা এয়ারওয়েজে চাঁদে যাচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশি নারী ভারতের যেসব জায়গায় গ্রীষ্মেও দেখা মেলে তুষারপাত আবুধাবি বিমানবন্দর হয়ে ভ্রমণ? দেরি ও বাতিলের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা ট্রানজিট যাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত? আঞ্চলিক উত্তেজনায় এমিরেটস ফ্লাইট বাতিলের মেয়াদ বাড়াল এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডি : স্ত্রীর শেষ বিদায়ের পর নিজেই হারিয়ে গেলেন দূর আকাশে নাগরিকত্ব পেতে ৫ মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’, ওয়েবসাইট চালু করলেন ট্রাম্প সিলেটে প্রত্যাশার চেয়ে পর্যটক কম, ৫০ শতাংশ হোটেল-মোটেলই খালি ভিয়েতনামের জনপ্রিয় দ্বীপ ফুঁককে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৭ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি বিদেশি পর্যটক

ইয়েলো ক্যাবের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাব

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

তখনও দিনের আলো পূব আকাশকে রাঙিয়ে দেয়নি- একজন ট্যাক্সি চালক তার কার কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই জ্যামাইকা থেকে এফ ট্রেনে জ্যাকসন হাইটস সাবওয়ে স্টেশনে এসে এলিভেটর দিয়ে উপরের প্ল্যাটফরমে এসেছে সেভেন ট্রেন ধরতে। ততক্ষণে একটু একটু করে দিনের আলো ফুটছে–এই প্ল্যাটফরমটা তার খুব প্রিয় কারণ এর অবস্থান অনেক উপরে বলে সেখান থেকে লাল সূর্যটাকে উঠতে দেখে, আস্তে আস্তে আড়মোড়া ভেঙ্গে শহরটাকেও জেগে উঠতে দেখে, দৃশ্যটা ওর খুব ভাল লাগে। দুইটি স্টেশন পার হলেই তার ইয়েলো ট্যাক্সির গ্যারেজ। সে দিনের শিফটে গাড়ি সকাল ছয় টা থেকে সন্ধ্যা ছয় টায়।

অনেক সময়ই যাত্রী উঠাতে লাগরডিয়া অথবা কেনেডি এয়ারপোর্টে অন্যান্য কেবীদের সাথে পরিচয় হয়, এর মাঝে আছেন বাংলাদেশে বড় সরকারী চাকুরী করতেন মমিনুল, সেনাবাহিনীতে ছিলেন জামান, স্কুলের শিক্ষক মতিন, বাংলাদেশের শিল্পী কামনরুল। অনেক সময় ফ্লাইট আসতে দেরী হয় তারা তখন জমিয়ে আড্ডা দেন। একজন আরেক জনের সুখ দু:খকে ভাগ করে নেন, গড়ে তোলেন এক ভিন্ন কমিউনিটি।

নিউইয়র্ক সিটির ব্যস্ত রাস্তায়, আইকনিক ইয়েলো ক্যাব একটি গতিশীলতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসাবে কাজ করে। এই ট্যাক্সিগুলির চাকার পিছনে, অভিবাসীরা শুধুমাত্র শহরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, এর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অর্থনৈতিক প্রভাব:
নিউইয়র্কের ইয়েলো ক্যাব শিল্পে অভিবাসী চালকদের অর্থনৈতিক অবদানকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। অনেক অভিবাসী অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে নিজের দেশ ছেড়ে এই শহরে আসে। অনেকেই ইয়েলো ক্যাব চালানো মাধ্যমেই কর্মশক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ বিন্দু হিসাবে কাজ করে। এই চালকরা অত্যাবশ্যক পরিবহন পরিষেবা প্রদান করে, বিশাল শহুরে ল্যান্ডস্কেপ জুড়ে মানুষ, পণ্য এবং পরিষেবার চলাচলের সুবিধা প্রদান করে শহরের অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

অভিবাসী চালকরা প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন, জীবিকা অর্জনের জন্য শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসর্গ শুধুমাত্র তাদের পরিবারকে টিকিয়ে রাখে না বরং শহরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক জীবনীশক্তিতেও অবদান রাখে। আয় রোজগারের পাশাপাশি, অভিবাসী চালকরা জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং খাবারের মতো পণ্য ও পরিষেবাগুলিতে ব্যয়ের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে আরও উদ্দীপিত করে।

এমন অনেক বাংলাদেশী অভিবাসীদের উদাহরণ দেওয়া যাবে যারা এই দেশে আসার পর ট্যাক্সি চালিয়েই তাদের জীবনের ভিত কে শক্ত করেছেন। পাশা পাশি পড়াশুনা বা ব্যবসা করে আজ সমজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। হয়েছেন সিটি’র গুরুত্বপূর্ণ কর্মী, হয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী বা ব্যবসায়ী। দেশেও তাদের আত্মীয় পরিজন কে সাহায্য করে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

সাংস্কৃতিক প্রভাব:
নিউইয়র্ক সিটি তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত, এবং অভিবাসী চালকরা এই সাংস্কৃতিক বিকাশ সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি হলুদ ক্যাবের চাকার পিছনে, বিভিন্ন পটভূমির চালকরা জীবনের সকল স্তরের যাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে, একটি অনন্য মিশ্র-সাংস্কৃতিক বিনিময় তৈরি করে। এই মিথস্ক্রিয়াগুলি শহরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বোঝাপড়া, সহানুভূতি এবং উপলব্ধি বৃদ্ধি করে।

অভিবাসী চালকরা তাদের সাথে তাদের নিজস্ব ভাষা, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে আসে, যা শহরের দৈনন্দিন জীবনের বুননে প্রতিফলিত হয়। রেডিওতে মিউজিক বাজানো থেকে শুরু করে ড্রাইভার এবং যাত্রীর মধ্যে ভাব বিনিময় কথোপকথনের মাধ্যমে হলুদ ক্যাব শহরের সাংস্কৃতিক মোজাইকের একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। অভিবাসী চালকরা প্রায়শই তাদের সংস্কৃতির দূত হিসাবে কাজ করে, সারা বিশ্বের যাত্রীদের সাথে গল্প, অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়।

সামাজিক প্রভাব:
অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মাত্রার বাইরে, অভিবাসী চালকদের নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক প্রভাব রয়েছে। ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসাবে, তারা সম্প্রদায়গুলিকে সংযুক্ত করতে, ব্যবধানগুলি পূরণ করতে এবং সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাত্রীদের সাথে তাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যমে, অভিবাসী চালকরা শহরের সামাজিক কাঠামোতে অবদান রাখে, বন্ধন তৈরি করে এবং সংযোগ স্থাপন করে যা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বাধা অতিক্রম করে।
অধিকন্তু, অভিবাসী চালকরা প্রায়ই হলুদ ক্যাব শিল্পের মধ্যে নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ একটি সম্প্রদায় গঠন করে, প্রয়োজনে একে অপরকে সমর্থন, সংহতি এবং বন্ধুত্ব প্রদান করে। এই নেটওয়ার্কগুলি অনেক ড্রাইভারের জন্য লাইফলাইন হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে যাদের ভাষার বাধা, বৈষম্য বা অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এইভাবে, অভিবাসী চালকরা শুধুমাত্র শহরের ভৌত রাস্তায় চলাচল করে না বরং সামাজিক ল্যান্ডস্কেপও চলাচল করে, নিজেদের অন্তর্ভুক্তির পথ তৈরি করে।
উপসংহারে, নিউ ইয়র্কের ইয়েলো ক্যাব শিল্পে অভিবাসীদের গভীর এবং বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় চালনা থেকে শুরু করে সামাজিক সংহতি এবং সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, অভিবাসী চালকরা শহরের প্রাণবন্ত বুননের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা কখনই ঘুমায় না। তারা নিউ ইয়র্কের রাস্তায় চলার সময়, তারা তাদের সাথে অতীত এবং বর্তমান প্রজন্মের আশা, স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা বহন করে, যে শহরের ভবিষ্যতকে তারা গর্বের সাথে বাড়ি বলে ডাকে।

ইয়েলো ট্যাক্সির ইতিহাস
আপনি যদি কখনও নিউইয়র্ক সিটিতে গিয়ে থাকেন, আপনি নিশ্চয়ই ট্যাক্সি ক্যাবে দেখেছেন এবং চড়েছেন। তাদের মিস করা প্রায় অসম্ভব। বহু বছর ধরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে চিত্রায়িত টেলিভিশন শো এবং চলচ্চিত্রগুলিতে এই হলুদ ট্যাক্সি প্রদর্শিত হচ্ছে। তাদের ইতিহাস ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ট্যাক্সি ক্যাব নিউ ইয়র্ক সিটির রাস্তায় প্রথম নেমেছিল ১৮৯৭ সালে। স্যামুয়েলের ইলেকট্রিক ক্যারেজ এবং ওয়াগন কোম্পানি সেই বছরের জুলাই মাসে এক ডজন বৈদ্যুতিক (বৈদ্যুতি বলা হলেও এরা ছিল আসলে ব্যাটারি চালিত) হ্যানসম ক্যাব নিয়ে শুরু করেন ভাড়ায় চালিত গাড়ির ব্যবসা। এক বছর পর এই কোম্পানি গাড়ির সংখ্যা দাড়াঁয় ৬২।

১৯০০ এর দশকের গোঁড়ার দিকে, ১০০০ টি বৈদ্যুতিক ক্যাব প্রতিদিন নিউ ইয়র্ক সিটির আশেপাশের বাসিন্দা এবং যাত্রীদের পরিবহন করত। কোম্পানিটি ১৯০৭ সালে একটি ধাক্কা খায় যখন তাদের ৩০০ টি গাড়ি আগুনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতির করণে কোম্পানিটি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।

ইলেকট্রিক ভেহিকাল কোম্পানির অপমৃত্যুর পর নিউইয়র্কে ঘোড়ায় টানা গাড়ি জনপ্রিয়তায় ফিরে আসে। তবে হ্যারি এন. অ্যালেন নামের এক ব্যবসায়ী ঘোড়ায় টানা ভাড়া গাড়ির পছন্দ করেননি, তাই তিনি নিজের ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। অ্যালেনের নিউইয়র্ক ট্যাক্সি-ক্যাব কোম্পানি ১৯০৭ সালে ফ্রান্স থেকে ৬৫ টি গাড়ি আমদানি করে গড়েন নতুন ক্যাব কোম্পানি। গাড়ি গুলিগুলি যাতে দূর থেকে আরও লক্ষণীয় হয় তাই সেগুলি রঙ করা হয় হলুদ।

এক বছর পরে, নিউইয়র্ক ট্যাক্সি-ক্যাব কোম্পানি ৭০০ টি ট্যাক্সি দিয়ে শহরে পরিষেবা শুরু করে। পরবর্তী দশকে আরও বেশ কিছু কোম্পানি নিউ ইয়র্ক সিটি ট্যাক্সি বাজারে প্রবেশ করে। ১৯২৫ সালে শহরের ট্যাক্সি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গঠিত হয়েছিল নিউইয়র্ক “হ্যাক ব্যুরো”।

১৯৩০ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা ছিল ৩০০০০০ টির মতো। বেশিরভাগ এলাকায় যাত্রীর চেয়ে ট্যাক্সি চালকের সংখ্যাই বেশি ছিল। নাগরিকরা সেই ট্যাক্সিগুলি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেন। সেই সময় সিটি মেয়র জিমি ওয়াকার ঘুষ নিয়ে ট্যাক্সি কোম্পানি গুলিকে অনুমোদন দানের অভিযোগ উঠে এবং পরে অনেক ট্যাক্সি লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

নতুন মেয়র ফিয়েরেলো লাগরডিয়া ১৯৩৭ সালে ‘হ্যাস’ নামে নতুন ট্যাক্সি আইনে স্বাক্ষর করলে বিশেষ ট্যাক্সি লাইসেন্স এবং ‘মেডেলিয়ন’ (মেডেলিয়ন হলো-বড় সিলমোহর যুক্ত চাক্তি)প্রথা চালু হয় যা বহাল আছে আজও। শহরে ট্যাক্সির সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হয় ১৬৯০০। এই সংখ্যাটি শেষ পর্যন্ত ১২০০০-এর নিচে নেমে আসে। অনেকেই কিছু ব্যক্তিগত গাড়িকে ট্যাক্সি হিসাবে চালানো শুরু করলে সিদ্ধান্ত হয় ট্যাক্সিগুলির রঙ হবে হলুদ।

১৯৭১ সালে, শহরের ট্যাক্সি-ক্যাব, এবং কমিউটার লিমোজিন, লিভারি যান এবং প্যারাট্রান্সিট কার এবং ট্রাকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গঠিত হয় নিউ ইয়র্ক ট্যাক্সি এবং লিমোজিন কমিশন।

দুর্ভাগ্যবশত, পরবর্তী দুই দশক ধরে শহরে অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে অনেক ট্যাক্সি চালকর ছিনতাই, আহত বা এমনকি নিহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটে। পুলিশ রিপোর্ট থেকে জানা যায় ১৯৭০ সালের প্রথমার্ধে ৩০০০ টিরও বেশি চালককে ছিনতাই করা হয়েছিল এবং হত্যা করা হয়েছিল সাতজন চালককে।

এই সব কারণে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত দশকে ড্রাইভারের ঘাটতি দেখা দেয়। অবশেষে, ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে অভিবাসীদের আগমনের কারণে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ট্যাক্সি ড্রাইভারের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পায়।

সিটির এই ট্যাক্সি গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে সিটির নয় সদস্যের একটি কমিশন। ট্যাক্সি সংক্রান্ত যত আইন-কানুন তাও প্রণয়ন করে এই কমিশন। ট্যাক্সি গুলি হলো নিউইয়র্ক সিটির রাজস্ব আয়ের একটি বিরাট উৎস। কারো কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন ট্যাক্সি থাকলেও মূলত ট্যাক্সি গুলি থাকে একটি গ্যারেজের আওতায়। ২৫টির বেশি ট্যাক্সি একটি গ্যারেজে থাকলে তাকে আবার ফ্লিট বলে। গোড়াতে ইহুদি সম্প্রদায় এই ট্যাক্সি চালানোকে পেশা হিসাবে নিলেও আজ তারাই বড় বড় সব ফ্লিটের মালিক। ইয়েলো ক্যাব এর লাইসেন্স পাওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমেই বৈধভাবে বসবাসের কাগজপত্র থাকতে হয়। তারপর সিটির নির্ধারিত কেন্দ্রে ট্যাক্সি সংক্রান্ত আইন-কানুন-এর ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি পাস করতে হয় একটি পরীক্ষার। মোটা মোটি ভালো ইংরেজি জানতে হয়। এটিও ঐ পরীক্ষার একটি প্রয়োজনীয় অংশ।

সিটিতে প্রায় ৪০ হাজার লোকের এই ট্যাক্সির লাইসেন্স আছে। যদিও সবাই নিয়মিত ট্যাক্সি চালান না। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে ট্যাক্সিগুলি চলে। দিনের শিফট আরম্ভ হয় ভোর পাঁচ টায় শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়, আর তখনই বিকেলের শিফট আরম্ভ হয়। দুই শিফটের জন্য ড্রাইভার হলো প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে কম পক্ষে ৫০০০ ড্রাইভার হলেন বাংলাদেশী। এছাড়াও আছেন ভারতীয়, পাকিস্তানি, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার ড্রাইভার। একজন ড্রাইভার গাড়ির লিজের টাকা ও তেলের খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০০ ডলারের বেশি আয় করতে পারেন।

বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্টদের জীবনে ট্যাক্সি একটি বড় অবদান আছে। আজ দেশে যে রেমিটেন্স যায় তার সিংহভাগই পাঠান এই ট্যাক্সি চালকরা। অনেকেই পার্টটাইম ট্যাক্সি চালিয়ে নিজের পড়ার খরচ চালান। বাংলাদেশী ট্যাক্সি চালকদের অনেকেই সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। এদের ভাল ব্যবহার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশী ট্যাক্সি চলকগণ সৎ ড্রাইভার হিসাবে পরিচিত এবং তাঁরা অনেক সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশী ট্যাক্সি চলকদের অনেকেই ট্যাক্সি চালিয়ে পুঁজির জোগাড় করে আজ ভাল ব্যবসা করছেন। নিউইয়র্কের ইয়েলো ট্যাক্সি যেমন এই শহরের একটি আইকন তেমনি ভাবে ইমিগ্রেন্টদের জীবনে স্বচ্ছন্দের হাতিয়ার।

যদিও উবার-এর মতো স্বাধীন রাইড-শেয়ারিং পরিষেবা কার্যক্রমের জনপ্রিয়তার কারণে গত কয়েক বছরে হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা কিছুটা কমেছে,বেড়েছে প্রতিযোগিতা তবুও তারা শহর ঘুরে দেখার জন্য একটি দক্ষ, সাশ্রয়ী উপায়। ইমিগ্রান্টদের বৈদ আয়ে উৎস।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com