বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ইন্দোনেশিয়ার দর্শনীয় স্থান

  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২

ধর্মীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে বহুজাতি সংস্কৃতি, আগ্নেয়গিরির দ্বীপাঞ্চল সহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ; এসব কিছু একসাথে পাওয়া যাবে ইন্দোনেশিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোতে। বিশ্বের এই ৪র্থ জনবহুল দেশটি এর দিগন্ত জোড়া সৈকত ও পাহাড়ের ল্যান্ডস্কেপ বিশ্ব পরিব্রাজকদের বিশালতা ও বিচিত্রতা অন্বেষণের খোরাক জোগায়। জুলাই থেকে আগস্টের শুষ্ক মৌসুম ইন্দোনেশিয়ার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এ সময় ২৫ থেকে ২৭ সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রা হাল্কা বৃষ্টিপাতের সাথে আরামপ্রদ অনুভূতি দেবে। এর কোন কোন দর্শনীয় স্থান সংস্পর্শ পেয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির, কোনটা মিশেছে মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইয়ের সাথে। ইন্দোনেশিয়ার সব চেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবারের ফিচারে।

ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমূহ

উবুদবালি

একদিকে ধান ক্ষেত্র চলে গেছে পাম-রেখাযুক্ত পাহাড়ের নিচে আর বাগান ঘেরা উপত্যকার বাতাসে বাজতে থাকে স্থানীয় গেমলান সঙ্গীত। এমনি দৃশ্য চোখে পড়বে বালির সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম উবুদে গেলে। সিমিয়ান দেখার জন্য যাওয়া যেতে পারে মাঙ্কি ফরেস্টে, অথবা স্থানীয় শিল্পের সাথে পরিচিত হতে প্রবেশ করা যেতে পারে আগুং রাই মিউজিয়ামে। অন্ধকারের নামলে স্থানীয় মন্দিরগুলোতে দর্শনার্থীদের সৌজন্যে শুরু হয় লেগং ব্যালে বা বন্য কেকাক ফায়ার নাচ।

সুলুবান সৈকতবালি

প্রকৃতির অপার বিস্ময় এই সুলুবান সৈকতে আছে রোমাঞ্চকর গুহা, যা যে কোন দক্ষ স্কুবা ডাইভারকে নিমেষেই চমকে দিতে পারে। সুলুবান সৈকত উলুওয়াতু বালির একটি দর্শনীয় সৈকত। ব্লু পয়েন্ট বিচ এবং পান্তাই সুলুবান বালি নামে পরিচিত এই সৈকতে সার্ফিয়ের সময় ঢেউগুলোকে মনে হবে যেন সঙ্গীতের তালে তালে স্পন্দিত হচ্ছে।

গিলি দ্বীপলম্বক

লোম্বকের উপকূলে প্রবাল সহ তাদের স্ফটিক ফিরোজা রঙের পানি, সাদা-বালির সৈকত, স্বাস্থ্যকর খাবারের রেস্তোরাঁ, অভিজাত সৈকত পার্টিগুলোর জন্য গিলি দ্বীপের কোন তুলনা হয় না। গিলি ট্রাওয়ানগান (ওরফে ‘গিলি টি’) হল দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উন্নত দোকান, ম্যাসেজ পার্লার এবং ক্যাফেতে ভরপুর। আর গিলি মেনো হল সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ।

বাটামরিয়াউ

রিয়াউ প্রদেশের বৃহত্তম শহর বাটাম একটি শৈল্পিক শহর। এটি ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেলের একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের অংশ। এখানে আছে বিখ্যাত বেরেলাং ব্রিজ, যার রয়েছে ছয়টি অত্যাধুনিক ফুল সুইং অংশ, যা বাটাম, রেম্পাং এবং গালাং দ্বীপ তিনটিকে সংযুক্ত করেছে।

বালি দ্বীপবালি

ইন্দোনেশিয়ায় সকল সৌন্দর্য যেন অল্প অল্প করে অঙ্গে ধারণ করে আছে ঈশ্বরের দ্বীপ নামে পরিচিত এই বালি দ্বীপ। যার কারণে সুন্দর মন্দির থেকে সুউচ্চ পর্বত, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি থেকে উত্তেজনাপূর্ণ নাইটলাইফের এই মিলনকেন্দ্রটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। বালির অভিমুখে গমনকারি ভ্রমণপিপাসুরা সানুর বিচ, পুরা লুহুর উলুওয়াতু এবং তুকাদ সেপুং ঝর্ণা দেখতে ভোলেন না।

ইয়োগিয়াকার্তাজাভা

ইয়োগিয়াকার্তা জাভার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রায় ৫ লাখ মানুষের এই শহরটি বোরোবুদুর এবং প্রম্বানানের মন্দিরগুলোর জন্য বিখ্যাত। এর জাভানিজ চারুকলা থিয়েটার থেকে শুরু করে ব্যালে পারফরম্যান্স বিশ্ব দরবারে সপ্রতিভভাবে তুলে ধরে। ছোট্ট এই শহরটি পায়ে হেঁটেই পুরোটা ঘোরা যেতে পারে। মেরাপি লাভা ট্যুরে শক্ত লাভা দ্বারা আটকে থাকা আশেপাশের শান্ত গ্রামগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।

কেলিমুতু হৃদসুমাত্রা

কেলিমুতু আগ্নেয়গিরি দ্বারা গঠিত তিনটি অংশে বিভক্ত হ্রদটিকে একসাথে কেলিমুতু ডাকা হয়। একই আগ্নেয়গিরির শিখরে অবস্থিত হলেও হ্রদ তিনটির রঙগুলোও ভিন্ন- লাল, নীল এবং সাদা। যথেষ্ট দুঃসাহসের পরিচয় দিতে হবে এই ক্রেটার হ্রদগুলো ঘুরতে যেতে হলে। কিন্তু দেখার পর মনে হবে যে, জীবন বোধ হয় ষোল কলা পূর্ণ হলো।

নুসা পেনিদাবালি

শামুকের খোলসের আবরণে গুপ্ত ঝিনুকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এই অফবিট জায়গাটিকে। বালির জাকজমক সৌন্দর্য্যে অনেকেই এ জায়গাটির কথা ভুলে যান। কিন্তু এর চমৎকার পর্বতময় উপকূলরেখাগুলো থেকে চোখ ফেরানো যায় না। বালি থেকে এক দিনের ক্রুজ নিয়ে এই দ্বীপটিতে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।

টোবা হৃদউত্তর সুমাত্রা

পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যালডেরাতে অবস্থিত টোবা হ্রদের সংস্পর্শে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে গঠিত হওয়া আগ্নেয়গিরির উৎস। এটি হয়ত একটি ধাঁধার মত শোনাতে পারে যে, এই টোবা হ্রদটি একটি দ্বীপে অবস্থিত, যেটি আবার জেগে আছে একটি হ্রদের মধ্যে। এই ধাঁধার উত্তর পেতেই উৎসকু পর্যটকরা ছুটে যান উত্তর সুমাত্রায়।

কমোডো ন্যাশনাল পার্কনুসা টেঙ্গারা তৈমুর

এই জায়গাটি পশ্চিম নুসা টেঙ্গারা তৈমুর বরাবর সুম্বাওয়া এবং ফ্লোরেসের মাঝে অবস্থিত। এখানে দেখা মেলে কোমোডো ড্রাগন নামে পরিচিত জায়ান্ট মনিটর লিজার্ডের। শুষ্ক, রুক্ষ এবং অনুর্বর দ্বীপটিতে পার্কটির পাশাপাশি মেরিন রিজার্ভের একটি অংশও পড়েছে। এছাড়াও ভ্রমণ অভিলাষীদের ভিড় জমতে দেখা যায় পিঙ্ক বিচ ও লাওয়া দারাত গিলিতে।

ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণকে উপভোগের সেরা এক্টিভিটিসগুলো    

স্নরকেলিং, সার্ফিং এবং ডাইভিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য ইন্দোনেশিয়াকে স্বর্গ বলা যেতে পারে। এছাড়া নৌকায় করে দ্বীপে দ্বীপে ঘোরা, মাছ ধরা অথবা সৈকতের পাশের ক্যাফে বা খুপরিতে বসে দৃষ্টিতে দিগন্ত ধরতে ধরতে সময়টা কাটিয়ে দেয়া যায়। পাহাড় ট্র্যাকিং এবং বিস্ময়কর লেক ঘুরে দেখার রোমাঞ্চটা পরিপূর্ণতা পেতে পারে পর্বত চূড়া থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার মাধ্যমে। সুপ্ত আগ্নেয়গিরির লেকের ঈষৎ উষ্ণ পানিতে সাঁতার কাটাটা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি অতুলনীয় অভিজ্ঞতার অবতারণা করবে।

গলফ উৎসাহীদের জন্য বাটাম নোংসা উপকূল এবং ওয়াটারফ্রন্ট সিটি বরাবর স্পোর্টস ক্লাব এবং রিসোর্টগুলো দারুণ পছন্দ হতে পারে।

দুর্লভ প্রাণী অভয়ারণ্যতেও সুযোগ আছে কায়াকিং, ডাইভিং, ট্রেকিং বা দ্বীপ ভ্রমণের। বহু রঙের হ্রদগুলো আর পর্বত চূড়ার মন্দিরগুলো অবশ্য কোন কার্যকলাপের দাবি রাখে না। শুধু সেগুলোর পাশে বসে থেকেই কাটিয়ে দেয়া ঘন্টার পর ঘন্টা।

হাইকিং, সাইক্লিং, বালি সুইং, জেটপ্যাকিং, রিভার রাফটিং-এর স্মৃতিগুলো ফ্রেমবন্দি করে রাখার জন্য ফটোগ্রাফির সময়টাও উপভোগ করার মত। যা বহু বছর পরেও অফিসের ডেস্কে কাজের বিরতিতে নিমেষেই নিয়ে যেতে পারে ইন্দোনেশিয়ার গোধুলি আর রাতের অভূতপূর্ব জনজ্জীবনে।

বাংলাদেশে থেকে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যেতে হলে মালয়শিয়া বা সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয়। কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট হয়ে বালি পৌছতে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে। এয়ার টিকেট মূল্য কত আগে টিকেটটি কাটা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। কমপক্ষে দুই মাস আগে কিনলে বালির টিকেটের দাম পড়তে পারে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

এয়ারপোর্টের যাবতীয় ঝামেলা শেষে ব্লু বার্ড ট্যাক্সিগুলো মিটারে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পৌছে দিতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার ম্রুদ্রা বা রুপিয়ার দাম বাংলাদেশের টাকার থেকে কম। বালিতে ভেতরে বিভিন্ন জায়গা মিটারে ট্যাক্সিতে যেতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপিয়া লাগে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মত।

মালয়শিয়া হয়ে লম্বকের বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা লাগতে পারে। এয়ারপোর্ট থেকে বাসে ও ফেরীতে করে গিলিসে যেতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। বাটাম ঘোরার জন্য সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দর হতে বাস বা ট্যাক্সিতে করে হারবারফ্রন্ট স্টেশনে আসতে হবে। ফেরিতে যাওয়া আসার খরচ পড়তে পারে মাথাপিছু ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। তবে এজন্য সিঙ্গাপুরের ডাবল এন্ট্রি ভিসা নেয়া আবশ্যক।

বাংলাদেশ থেকে ইয়োগিয়াকার্তা যেতে বিমান ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। সেখান থেকে বাসে করে দর্শনীয়স্থানে যেতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগতে পারে।

সুমাত্রা যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে মেদান। মালয়শিয়া ট্রানজিট হয়ে কুয়ালানামু পর্যন্ত যেতে বিমানভাড়া ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে মেদানের ট্রেন ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

কেলিমুতু আগ্নেয়গিরি লেক দেখতে হলে যেতে হবে এন্ডে শহরে। ৪৭ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে বিমান যোগে এন্ডেতে নামতে। অতঃপর ট্যাক্সি করে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘোরা যাবে।

কমোডো দ্বীপে যেতে প্রথমে নামতে হবে লাবুয়ান বাজো এয়ারপোর্টে, যেখানে বিমানভাড়া নিতে পারে ৩৭ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তারপরে লাবুয়ান বাজোতে নৌকায বা ফেরিতে করে কমোডো দ্বীপ।

পরিশিষ্ট

আজকের আলোচনায় আমরা ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো এবং ভ্রমণের  আনুষঙ্গিক খরচ তুলে ধরেছি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশের তুলনায় বালিকে সাধারণত একটি সস্তা গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খাবার থেকে আবাসন পর্যন্ত সবকিছুই সাধারণত সাশ্রয়ী এবং বাজেট ভ্রমণের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত বিষয়গত প্রশ্ন কিন্তু নুসা পেনিডা দ্বীপের দর্শকরা একমত হবেন যে এটিকে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। উবুদ ইন্দোনেশিয়ায় দেখার জন্য সেরা শহরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com