ইতিহাসের পাতা ওলটপালট করলে যে শহরটি নাম সবচেয়ে মনে দাগ কাটে আমার, সেটাঅবশ্যই বার্লিন। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ এই শহরেই রোপণ করা হয়েছিল ১৯৪২-এ এবং এই শহরকে দু’ভাগে দ্বিখন্ডিত হতে হয়েছিল সে কথা তো সকলেই জানেন। তারপর অনেক বছর কেটে গিয়েছে, অনেক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে এই শহর। ইউরোপের অনেক শহর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু কখনও বার্লিন যাওয়া হয়নি। এবার একটা সুযোগ এল তাই আর দু’বার না ভেবে রওনা দিলাম দেখতে এই একবিংশ শতাব্দীর বার্লিন কেমন? বেশ কৌতুহল নিয়ে আইস ট্রেনে করে পৌঁছে গেলাম বার্লিনে স্টুটগার্ড থেকে। জমজমাট আধুনিকও প্রাচীনের সমন্বয়ে তৈরি একটি শহর, যা ইউরোপের কোনও শহরের চেয়ে কম নয়। স্প্রি নদীর ধারে গড়ে উঠেছে ইউরোপের ও জার্মানির বৃহত্তম সবুজ শহর ও রাজধানী। উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, ফ্যাশন সব দিক থেকে জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ। চোখ জুড়িয়ে গেল, কলকাতার বা অন্যান্য প্রাচীন শহরের মতোই এই শহরের ও একটা পুরনো ও আধুনিক রূপ আছে যা সময়ের তালে তালে গড়ে উঠেছে। আমার মতো যারা পুরনো দিনের স্থাপত্যের ভক্ত, তাদের জন্য অন্যতম বেড়ানোর জায়গা। হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম পায়ে হেঁটে। এখানে হেঁটে বা সাইকেল করে যাতায়াতের বেশ সুবিধা। এই শহর কিন্তু সাইকেল আরোহীদের স্বর্গ। আলাদা সাইকেল যাওয়ার পথ বেশিরভাগ রাস্তায়। শহরে প্রায় পাঁচ লক্ষের অধিক সাইকেল আরোহী।
একবিংশ শতকের আধুনিক বার্লিনের মধ্যে চোখে পড়ল Potsdamer Platz ও Alexanderplatz।
এখানকার প্রাচীন চিড়িয়াখানাও দেখার মতো, জানা যায় প্রায় ১৩৮০ ধরনের প্রজাতির প্রায় কুড়ি হাজারেরও বেশি পশুপক্ষীর বাসস্থান। সঙ্গে ছোটরা থাকলে উপভোগ করবে অবশ্যই।
বিশ্ব সংগীত জগতে বার্লিন অন্যতম স্থান গ্রহণ করে। সাড়া বছর বিভিন্ন সংগীত উৎসব হয় ও বার্লিন অর্কেস্ট্রা খুবই বিখ্যাত। এখানকার ফিলহারমোনিক বিশ্বের অন্যতম স্থান অধিকার করে। সময় ও টিকিট পেলে অপেরা দেখার সুযোগ হারাবেন না।
শহর দেখার সাথে সাথে শপিং করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই তার শখ মিটিয়ে নেবেন। ছোটখাটো স্মারক, চকলেট কিনে ফেললাম, এছাড়া বই বা ডিজাইনার জামাকাপড়ও কিনতে পারেন। এখানে সব দোকানে ইউরো নেবে সুতরাং কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া এখানকার বার্গার, কারি সসেজ, গ্রিন্ড স্টেক আর নানা ধরনের চিজ়ের স্বাদ খুব ভাল ও অন্য ধরণের। বেড়াতে এসে আমি সবসময় স্থানীয় খাবারের সন্ধানে থাকি যার স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
বছরের সব সময়েই বার্লিন যাওয়ার প্ল্যান করতে পারেন তবে মে থেকে অক্টোবরই গ্রীষ্মের মনোরম সময় উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে মে মাসে music কার্নিভাল দেখার মতো। শীতে বেশ ঠান্ডা সুতরাং প্ল্যান করে পরিকল্পনা করলে ভাল।
ভাল হোটেল প্রতিদিন ৩৫০০-৪০০০ থেকে শুরু থেকে ঘর পাবেন। অনলাইন বুকিং এর মাধ্যমে করাই ভাল।
জার্মানির মধ্যে যে কোনও শহর বা নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক শহর যেমন প্যারিস, জুরিখ, লন্ডন ইত্যাদি থেকে ট্রেনে সুন্দর যোগাযোগ আছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক যেকোনও শহর থেকে বিমানে যোগাযোগ আছে।