ইতালির সিসিলি অঞ্চলের মেসিনা প্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম কানেটো ডি কারোনিয়া। সাধারণত ইতালির অন্যান্য গ্রামের মতোই এটি শান্ত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে সমৃদ্ধ। কিন্তু ২০০৪ সাল থেকে এ গ্রামটি এক অদ্ভুত ঘটনার কারণে আলোচনায় আসে। গ্রামের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এমনকি খালি জায়গায়ও যখন তখন আগুন ধরে যেতো, যা আজও রহস্যাবৃত।
২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে হঠাৎ করেই কানেটো ডি কারোনিয়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগতে শুরু করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল আগুন লাগার জন্য কোনো দৃশ্যমান কারণ পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, এটি হয়তো বিদ্যুৎ সংযোগজনিত ত্রুটির কারণে ঘটছে। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, আগুনের সঙ্গে বৈদ্যুতিক লাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানীরা তখন ভৌগলিক ও পরিবেশগত কারণ খুঁজতে থাকেন। এমনকি গোপন সামরিক পরীক্ষা, ভিনগ্রহের প্রাণী বা কোনো অজানা প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।
ইতালির নৌবাহিনী এবং বিজ্ঞানীদের একাধিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গবেষণা করে। ২০০৭ সালে একটি সরকারি রিপোর্টে দাবি করা হয়, এসব আগুনের কারণ হতে পারে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ, যা ভূগর্ভস্থ কোনো অজানা শক্তি বা সামরিক পরীক্ষার ফলে সৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু এই তত্ত্বও পুরোপুরি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনার পর অনেকেই ধারণা করতে থাকেন, এটি কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা। গ্রামের কিছু মানুষ বিশ্বাস করতেন হয়তো কোনো অভিশাপ বা অতৃপ্ত আত্মার কারণে এসব আগুন লাগছে। স্থানীয়রা দাবি করেন আগুনের পাশাপাশি তারা রহস্যময় আওয়াজও শুনতে পেতেন। বিভিন্ন ধাতব বস্তু নিজের থেকেই গরম হয়ে যেত এবং কিছু ক্ষেত্রে অদৃশ্য শক্তি অনুভূত হতো।
অনেক বছর পার হলেও এই রহস্যের কোনো চূড়ান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষ ফিরে আসতে শুরু করলেও ভয় এখনো কাটেনি। মাঝে মাঝে আবারো অস্বাভাবিক আগুন লাগার খবর আসে, যদিও তা আগের মতো ভয়াবহ নয়।
কানেটো ডি কারোনিয়া গ্রামের এই রহস্য আজও বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয় হয়ে আছে। এটি কি প্রকৃতির কোনো গোপন শক্তির কাজ নাকি সত্যিই এখানে অতিপ্রাকৃত কিছু লুকিয়ে আছে? হয়তো একদিন বিজ্ঞান এই ধাঁধার সমাধান করতে পারবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত কানেটো ডি কারোনিয়া এক ‘রহস্যময় জ্বলন্ত গ্রাম’ হিসেবেই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।