পশ্চিম ইউরোপের দেশ ইটালির নানান শহরে প্রায়ই বাংলাদেশিদের দেখা মেলে৷ তার অবশ্য একটা কারণও আছে৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যতো বাংলাদেশি থাকেন তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকেন ইটালিতে৷ দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি আছেন বলে জানা গেছে৷
এসকল বাংলাদেশিদের অনেকেই কৃষিখাতের সাথে যুক্ত৷
তবে শুধু কৃষিশ্রমিক হিসেবেই যে বাংলাদেশিরা কাজ করছেন তা কিন্তু নয়৷ বাংলাদেশি অভিবাসীদের অনেকেই গড়ে তুলেছেন কৃষিখামার, হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা৷ ইটালিতে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের অবস্থা জানতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ভূমধ্যসাগর পাড়ে অবস্থিত সিসিলিতে আছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসের সংবাদকর্মীরা৷ সিসিলির ভিটোরিয়ার শহরে তাদের সাথে দেখা হয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির৷
তাদেরই একজন মোহাম্মদ আয়নাল হক৷ তিন বছর আগে সিসিলির এই শহরটিতে নিজের কৃষি তামার গড়ে তোলেন আয়নাল৷ জমিতে বাংলাদেশি শাক-সবজি চাষ করেন তিনি৷ বর্তমানে পাঁচজন কর্মী নিয়ে কৃষিকাজ চালাচ্ছেন৷ শ্রমিকদের সবায়ই বাংলাদেশিতিনি জানান, ‘‘এক বন্ধু বলল যে, এখানে কৃষি জমিতে ফসল ফলিয়ে ভালো আয় করা যায়৷ বন্ধুর পরামর্শে এখানে জমি ভাড়া নিয়ে আমি কৃষিকাজ শুরু করি৷আয়নাল জানান, চাষের উদ্দেশ্যে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বর্গমিটার জমি ভাড়া নিয়েছেন তিনি৷ এরমধ্যে ২০ হাজার বর্গমিটার গ্রিনহাউস এবং বাকি ১৫ হাজার বর্গমিটার খোলা জমিজমিগুলোতে নানা ধরনের সবজি যেমন, ঢেড়শ, লাউ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বরবটি, লালশাক, পালংশাক ও মরিচ চাষ করেন৷
এসব সবজির ভোক্তা মূলত স্থানীয় বাংলাদেশিরা৷ জানা গেছে, সিসিলিতে রয়েছেন বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি৷ সেই সাথে পুরো ইটালির প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি তো আছেনই৷ এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশি সবজি চাষের সিদ্ধান্ত নেন আয়নাল৷
আয়নাল জানান, পালেরমো, কাতানিয়া এবং মিলানোর বাজারে সবজি সরবরাহ করেন তিনি৷
কৃষিকাজে কেমন আয় হয় জানতে চাইলে আয়নাল বলেন, ‘‘আয়ের বিষয়টি আসলে নির্ভর করে উৎপাদন এবং পণ্যের বাজার দরের ওপর৷ কেউ যদি নিজে পরিশ্রম করে কৃষিকাজ করতে পারেন তাহলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার বর্গমিটার জমি চাষ করে বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার ইউরো বা ২৫ থেকে ৩০ রাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব৷সিসিলির ভিটোরিয়া শহরে বর্তমানে চার থেকে পাঁচশ বাংলাদেশি রয়েছেন৷ তাদের অনেকেই কাজ করেন কৃষিশ্রমিক হিসেবে৷ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশি শ্রমিক সাইদুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে তিনি ইটালি এসেছেন৷ আর গত এক বছর ধরে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন৷
দিনে আট ঘণ্টা করে কাজ করে তার মাসিক আয় হয় এক হাজার ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ টাকাবাংলাদেশে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন সাইদুল৷ বললেন, ‘‘দেশের সাথে এখানকার কাজের পরিবেশ মিলালে তো হবে না৷ দেশে একবার কাজ করতাম আরেকবার ঘুরতে যেতাম৷ এখানে তো এমন হয় না৷’’