সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন

ইটালিতে অভিবাসী পাচারের অভিযোগ থেকে খালাস পেলেন কুর্দি অধিকারকর্মী

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ইটালিতে অভিবাসী পাচারের অভিযোগে আটক হওয়া ইরানি কুর্দি অধিকারকর্মী মাইসুন মাজিদিকে খালাস দিয়েছে দেশটির আদালত। আটকের পর ১০ মাস কারাবন্দি ছিলেন মাইসুন মাজিদি।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দিয়েছে দক্ষিণ ইটালির ক্রোটোনের আদালত। ইরানের দমন-পীড়নমূলক শাসন থেকে পালিয়ে আসা ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের শেষের দিকে অভিবাসী পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এই রায় মায়সুন মাজিদি এবং তার সমর্থকদের জন্য একটি বড় বিজয়। বিচারক রায় পড়ার সময় ২৯ বছর বয়সি এই নারী আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন৷ তার ভাই রাজহান তাকে সমর্থন দিতে জার্মানি থেকে এসেছিলেন৷ উপস্থিত সবার করতালির শব্দে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন৷

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইটালির মুখপাত্র রিকার্ডো নুরি বলেন, “একজন অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নির্যাতনের অবসান হলো আজ। তিনি ইটালিতে সুরক্ষা চেয়ে উল্টো মানবপাচারের অভিযোগে দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে ছিলেন৷”

২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তুরস্ক থেকে বিপজ্জনক উপায়ে সাগর পাড়ি দেয়ার পরদিন ইটালিতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইরানি কুর্দি অধিকারকর্মী মাইসুন মাজিদি৷

১০ মাস কারাগারে ছিলেন মেসুন মাজিদি৷ তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি কোনো ভুল করিনি৷’’

অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে, যা প্রমাণিত হলে তার ছয় থেকে ষোল বছরের কারাদণ্ড হওয়ার ঝুঁকি ছিল৷

২৮ বছর বয়সি এই তরুণী তুরস্ক থেকে সমুদ্রপথে ইটালিতে আসেন৷ ওই নৌকায় ৭৭ জন যাত্রী ছিলেন৷ ক্যালিব্রিয়ায় পৌঁছানোর পর দুই ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাকে অনিয়মিত পারাপার সংগঠিত করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়৷

যদিও ওই দুই ব্যক্তি পরবর্তীতে মাইসুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন৷ এমনকি উদ্ধার জাহাজের ক্যাপ্টেনও তিনি জড়িত নন বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন৷

দশ মাস কারাগারে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকবার অনশন করেছিলেন মাইসুন৷ দোভাষীর দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন৷

শেষ পর্যন্ত ইটালিতে বসবাসরত প্যারিসা নাজারি নামে একজন ইরানি নারী অধিকারকর্মী মাইসুন মাজিদিকে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন৷

কারাগারে মাইসুনের কষ্টের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে প্যারিসা নাজারি বলেন, “আমি তাকে জড়িয়ে ধরার সময় তার অনুভুতি অনুভব করতে পেরেছিলাম৷ তিনি আমাকে ক্রমাগত জিজ্ঞেস করতেন: ‘আমি এখানে কী করছি?’

২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান এই অধিকারকর্মী৷ মাইসুন ১৯৯৬ সালে ইরানের কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি থিয়েটার এবং সমাজবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন৷

তিনি একটি ছদ্মনামে লেখা বেশ কয়েকটি নিবন্ধে ইরানের পরিস্থিতির সমালোচনা করেছিলেন৷ এছাড়া একটি শর্ট ফিল্মও বানিয়েছেন তিনি৷ কুর্দিরা সাধারণত ইরান ও ইরাকের মধ্যে অবস্থিত পাহাড়ে পণ্য পরিবহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে৷ এটি ছাড়া সেখানে আর কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই৷

কুর্দিস্তানের এনজিও হানা স্থানীয় অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করে৷ এনজিওটি নিশ্চিত করেছে মাইসুন মাজিদি সংস্থাটির সক্রিয় সদস্যদের একজন৷

মাইসুন বলেন, ‘‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই অধিকার নিয়ে কাজ করেছি৷ ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং পরবর্তীতে আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল৷ ছেড়ে দিলেও আমি জানতাম যে তারা আমাকে অনুসরণ করছে এবং তারা মূলত আমার কার্যক্রম দেখার জন্য ছেড়ে দিয়েছে৷’’

এক পর্যায়ে তিনি ইরান থেকে ইরাকের স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তানের ইরবিলে শরণার্থী হিসেবে চলে যান৷ সেখানে তিনি সাংবাদিকতা করেন৷ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও নিহত কুর্দি ছাত্রী মাশা আমিনির মৃত্যুর পরে তিনি টানা বিক্ষোভে অংশ নেন৷

পরবর্তীতে নানা হুমকি পেয়ে তিনি তুরস্কে পালিয়ে যান৷ সেখান থেকে ইটালিতে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি অপেক্ষা করেন৷ শেষ পর্যন্ত ইউরোপে পৌঁছালেও তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল৷

এনজিও এবং অভিবাসন সংস্থাগুলোর মতে, এই তরুণী জর্জা মেলোনির অতি রক্ষণশীল সরকারের নীতির শিকার৷ ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মেলোনি ভূমধ্যসাগর অতিক্রমকারী অভিবাসীদের ঠেকাতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন৷

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইটালির মুখপাত্র রিকার্ডো নুরি বলেছেন, “অনেক সময় অভিবাসীদের বহনকারী নৌকায় থাকা এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয় যারা অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন৷’’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com