ইউরোপীয় বণিকেরা যখন থেকে আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে অবতরণ করেছে তখন থেকে তারা আমাদের শোষণ করেছে। এই শোষণের পাশাপাশি তাদের দ্বারা কিছু কিছু সুন্দর প্রাকৃতিক জিনিসও আবিষ্কার হয়েছে। যদিও এই সব প্রাকৃতিক নিদর্শন তারা আসার আগেই বিদ্যমান ছিলো। তবু এটা বললে ভুল হবে না যে তারা এটা বিশ্ববাসীর সামনে এনেছে যাতে আমরা তা অবলোকন করতে পারি। আর আজ তেমনি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করব এবং তাহলো ইয়াগুয়াজু জলপ্রপাত।
ইগুয়াজু জলপ্রপাত বা The Iguazu Falls বা Iguazú Falls বা Iguassu Falls বা Iguaçu Falls (Spanish: Cataratas del Iguazú)। যেহেতু স্থানীয় ভাষার সাথে ইউরোপীয় ভাষার মিল ছিলো না তাই এই অদ্ভুত নাম। আবার ব্রাজিল ইংলিশদের কলোনি ছিলো না, তাই পরে ইংরেজিতে এটা লিখা হয়েছে। তো Iguazu Falls বা Iguazú Falls বা Iguassu Falls বা Iguaçu Falls (Spanish: Cataratas del Iguazú) যা বলেই ডাকিনা কেনো। এর সৌন্দর্যের কোন তারতম্য হবে না!
এই ইগুয়াজু জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময় যা আজ হাজার হাজার মানুষ কে অবাক করে দেয়। পৃথিবীতে যত গুলো প্রাকৃতিক নিদর্শন বিদ্যমান তার মধ্যে এই জলপ্রপাত অন্যতম। এই জলপ্রপাত এর বিশালতার কারণে জলপ্রপাতটি ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের চেয়েও বিখ্যাত বলে মনে করা হয় এবং হয়তবা আসলেই তাই। অনেক পর্যটকদের মতে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম জলপ্রপাত।
আসলে এটি অনেক ছোট ছোট অংশ মিলে গঠিত। তাই অনেক বড় মনে হয়। আপনারা হয়ত জানেন পৃথিবীর কোন জলপ্রপাতই একক নয়। সব জলপ্রপাতই আনেক ছোট ছোট জলপ্রপাত দ্বারা সৃষ্টি। আর এটাই বা বাদ যাবে কেনো? তাই এটাও তার বিশালতা কে আরো বিশাল করতে কিছু অন্য অংশের সাহায্য নিয়েছে এবং আকারে ফুলে-ফেপে উঠেছে। ১৫৪২ সালে ইধনবুধ উধঠধপধ নামক এক ইউরোপীয়ান সর্বপ্রথম জলপ্রপাতটির আবিষ্কার করেন। খুঁজে পাওয়ার পর জলপ্রপাতের নাম দেন তিনি সেন্ট মেরির জলপ্রপাত (খ্রিষ্টীয় নাম)। কিন্তু পরে এটি ইগুয়াজু জলপ্রপাত নামে পরিচিতি পায়, স্থানীয় ভাষা।
ইগুয়াজু জলপ্রপাতটি সৃষ্টি হয়েছে ইগুয়াজু নামক নদী থেকে। এবং এই পানি যেয়ে পতিত হয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী এলাকায়। জলপ্রপাতটির বেশিরভাগ অংশই ব্রাজিলের সীমানায় অবস্থিত। এবং নদীর কিছু অংশ পড়েছে আবার প্যারাগুয়ের সীমান্তে। ইগুয়াজু জলপ্রপাতটির উচ্চতা প্রায় ৬০-৮০ মিটার বা ২০০ থেকে ২৬৯ ফুট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৭ কিলোমিটার।
ইগুয়াজু জলপ্রপাতের আর্জেন্টাইন পাশ থেকে যে কেউ হেটেই জলপ্রপাতটির নিম্নভাগে দেখতে পারবেন এবং বোট নিয়ে জলপ্রপাতটির মুখ থেকে ঘুরে আসতেও পারবেন। এছাড়াও জলপ্রপাতটির পাশে অবস্থিত ন্যাশনাল পার্কও ঘুরে আসতে পারবেন। আর ব্রাজিলিয়ান পাশ থেকে সম্পূর্ণ জলপ্রপাতটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য একসাথেই উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া ব্রাজিলের মধ্যে অবস্থিত “ন্যাশনাল পার্ক” ভ্রমণ করতে পারবেন। এই দুটি পার্কই ইউনেস্কো কতৃক স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান। এখানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৭৫৬ ঘনমিটার পানি নিচে পড়ে। বর্ষার সময় বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১২,৭৫০ ঘনমিটার পানি ওপর থেকে নিচে পড়ে।
ইগুয়াজু জলপ্রপাত দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হল বসন্তকাল। গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া গরম আর আর্দ্র থাকে এবং শীতকালে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে চলে যায়। বহু বছর ধরে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই ইগুয়াজু জলপ্রপাত। অবিশ্বাস্য আকারের কারনে ইগুয়াজু জলপ্রপাতটি বিখ্যাত বলে মনে করা হয়। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের উভয় দেশই এ জলপ্রপাতটির দ্বারা উপকৃত হয়েছে।
ইগুয়াজু জলপ্রপাতটি বিভিন্ন দ্বীপে বিভক্ত যা আলাদা আলাদা জলপ্রপাতে রুপান্তরিত হয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডেভিলস থ্রোট (Devils Throat), সান মার্টিন (San Martin), বোসেট্টি (Bosetti) ইত্যাদি জলপ্রপাত। এদের বেশির ভাগের উচ্চতাই প্রায় ২০০ ফুটের কাছাকাছি।