শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে যা জানা জরুরি

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২

ইউরোপের কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন টিকবে কিনা, তা নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে প্রথম সাক্ষাৎকারেই। তাই এটি আশ্রয়প্রত্যাশীর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। আইনজীবীরা তাই শুরুতেই ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন, যেন পরে আবার আপিল করতে না হয়।

গ্রিসে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে রেফ্যুকম। এই সংস্থা আশ্রয়প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ও আশ্রয় বিষয়ে তথ্য দিয়ে থাকে। সংস্থাটি ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছে:

প্রথমত, আপনি যে দেশে আশ্রয়ের আবেদন জমা করেছেন, সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি ফোনকল বা চিঠি দিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকবে। তবে অসংখ্য আবেদন পড়ার কারণে সাক্ষাৎকারের তারিখ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে।

রেফ্যুকম জানায়, কোনো কোনো প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের আগে একটি লিখিত বিবৃতি নিয়ে আসতে বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আগে থেকে লিখিত বর্ণনা আনতে হবে। আর কোনো ফরম পূরণ করতে হবে কিনা তা সাক্ষাৎকারের আগে ভালো করে যাচাই করে দেখা উচিত।

আশ্রয়প্রার্থী যদি নারী হন এবং তিনি নারী কর্মকর্তা বা দোভাষীর মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে চান, তাহলে আলাদাভাবে আগেই আবেদন করতে হবে। কোনো পুরুষও যদি পুরুষ কর্মকর্তা বা দোভাষীর মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে চান, একইভাবে আগে আবেদন করবেন।

দোভাষী পাওয়ার অধিকার

একজন আশ্রয়প্রার্থী নিজের ভাষায় পুরো সাক্ষাৎকারটি সম্পন্ন করতে পারবেন। তিনি যে দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন সেখানকার ভাষা অথবা নিজের মাতৃভাষায় যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নাও করেন, তাহলে যে ভাষাতেই তিনি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সে ভাষার জন্য একজন দোভাষী চাইতে পারবেন।

কোনো কোনো দেশে সাক্ষাৎকারের সময় আশ্রয়প্রার্থীর পরিচিত বা বিশ্বস্ত কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। এটি যাচাই করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

যেসব প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়

আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের সময় আবেদনকারীর পূর্ববর্তী ঘটনাবলী এবং দেশ ত্যাগের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে থাকলে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যে কারণে তিনি নিরাপদে নিজ দেশে ফিরতে পারবেন না, তা বিস্তারিত জানতে চাওয়া হতে পারে।উত্তর দেওয়া কঠিন এমন প্রশ্নের জন্য আবেদনকারীকে প্রস্তুত থাকা উচিত।

বিশ্বাসযোগ্যতা

একজন আশ্রয়প্রার্থীকে অবশ্যই তার বক্তব্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে হবে। যদি সম্ভব হয় একজন আশ্রয়প্রার্থীর উচিত তার বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ হাজির করা, যেমন নথি বা ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও। এগুলো ওই ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে কী ঘটেছে এবং কেন তার আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন তা প্রমাণের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সব বিবৃতি রেকর্ড করবেন এবং আশ্রয়প্রার্থী আন্তর্জাতিক সুরক্ষার মানদণ্ড পূরণ করে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য একটি ‘স্বতন্ত্র, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন’ করবেন। আবেদনকারীর উচিত সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেওয়া এবং প্রাসঙ্গিক হতে পারে এমন সবকিছু খুলে বলা।

মানদণ্ড ও বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়ন

আশ্রয়প্রার্থীর উচিত তার কাহিনিকে পর্যায়ক্রমে বলার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং যতটা সম্ভব বিশদ ব্যাখ্যা করা। শুধু যে ঘটনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আবেদনকারীর উচিত পুরো ঘটনা বলা।

আশ্রয়প্রার্থীর দাবিকে সঠিক প্রমাণে সাহায্য করে এমন প্রমাণ থাকলে তা সাক্ষাৎকারের দিন নিয়ে আসা উচিত। রেফ্যুকমের মতে, প্রমাণ হিসেবে লিখিত, ভিজুয়াল, ডিজিটালসহ যে কোনো ডকুমেন্টস অথবা শারীরিক কোনো চিহ্ন ও অডিও জমা দেওয়া যেতে পারে।

সাক্ষাৎকারের সময় কোনো প্রকার ব্যক্তিগত নোট বা লিখিত প্রস্তুতি না নেওয়াই ভালো। কারণ সেটা দেখে দেখে মনে হতে পারে আপনি কোনো বানানো গল্প বলছেন যা আপনি তৈরি করেছেন।

আশ্রয়প্রার্থীর বর্ণনা সমন্বিত কিনা এবং যদি একসাথে পরিবারের অন্য কেউ থাকে সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্য মিলছে কিনা যাচাই করা হবে। আপনার বক্তব্যের মূল্যায়ন করা হবে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আবেদনকারীর দেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য যাচাই করবে, যাতে করে আবেদনকারী যে বিবরণ দেবেন তা সম্পর্কে যেন আগে থেকেই অবহিত থাকেন। সাক্ষাৎকারের সময় দেওয়া বিবরণগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত হওয়া উচিত।

বর্ণনায় এমন কোনও কিছু যুক্ত করা উচিত না যা পুরোপুরি সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি সঠিক দিন তারিখ মনে করতে না পারেন তবে বানিয়ে বা অনুমান করে বলা উচিত না।

সুরক্ষা বিভাগ

রেফ্যুকমের তথ্য অনু্যায়ী, ইউরোপীয় আইনে আশ্রয়প্রার্থীর সুরক্ষার জন্য তিনটি বিভাগ রয়েছে। সেগুলো হলো: শরণার্থীর অবস্থা, সহায়ক সুরক্ষা ও মানবিক আশ্রয়। প্রত্যেক বিভাগের জন্য কতগুলো মানদণ্ড রয়েছে।

গোপনীয়তা

সুরক্ষার জন্য আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন সম্পর্কিত সব তথ্য সবসময় নিরাপদ ও গোপনীয় রাখা হবে। আবেদনকারীর ক্ষতি হতে পারে এ রকম কোনো বক্তব্য বা তথ্য তার দেশের সরকারকে জানানো হয় না।

সাক্ষাৎকারের রেকর্ড ও প্রতিলিপি পাওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। প্রতিলিপিটি আবেদনকারীর নিজের ভাষায় দেওয়া হবে।

কীভাবে একজন আইনজীবী খুঁজে পাব এবং তার জন্য কী করা উচিত?

গ্রিস ও স্পেনসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে আশ্রয়প্রার্থীরা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেয়ে থাকেন। আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবী খুঁজে পেতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও এনজিওর সাহায্য নেওয়া উত্তম।

আইনজীবীর পরামর্শের মান নির্ধারণের জন্য রেফ্যুকম আশ্রয়প্রার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের তালিকা দিয়ে থাকে। প্রশ্নগুলো আইনজীবীর সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতির জন্য সহায়ক। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

আশ্রয়প্রার্থীর পূর্বের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া এবং সেগুলোর সারাংশ তৈরি করা।

আইনজীবী আশ্রয়প্রার্থীর জন্য কী ভূমিকা পালন করবেন তা স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করা উচিত।

আবেদনকারীর দেশের পরিস্থিতি আইনজীবীকে ভালোভাবে বোঝানো উচিত এবং আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের আগে একটি ভালো প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

আশ্রয় আবেদন গৃহীত হওয়ার মানদণ্ডগুলো আইনজীবীকে ব্যাখ্যা করা উচিত। কারণ সব আইনজীবী এক্ষেত্রে দক্ষ নাও হতে পারেন।

আইনজীবীর সঙ্গে প্রতীকী সাক্ষাৎকারের অনুশীলন করা উচিত।

আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যাওয়া উচিত।

আশ্রয়প্রার্থী যেসব প্রমাণ সরবরাহ করতে পারবেন সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের আগে ও পরে আবেদনকারীর আইনি অধিকারগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত, যেমন, আপিলসহ নানান আইনি সুযোগ ইত্যাদি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com