কিন্তু বাস্তবতাটা ভিন্ন৷ কারণ, ইউরোপজুড়ে উচ্চশিক্ষিত এবং কর্মদক্ষ অভিবাসীরা তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না, ফলে টিকে থাকার জন্য কম দক্ষতার শ্রমেও যুক্ত হতে হচ্ছে তাদের৷ শুধু তাই নয়, স্থানীয়দের তুলনায় অভিবাসীরা বেতনও পাচ্ছেন কম৷
এমন তথ্য উঠে এসেছে লাইটহাউস রিপোর্টস, দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, এল পাইস এবং আনবায়াস দ্য নিউজ-এর যৌথ অনুসন্ধানে৷
এতে দেখা গেছে, শিক্ষিত এবং দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও অভিবাসীরা যে রকম কাজের সুযোগ পাচ্ছেন তাতে ইউরোপজুড়ে বড় পরিসরে ব্রেইন ওয়েইস্ট বা মেধার অপচয় ঘটছে৷ মেধার অপচয় বলতে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, কাঙ্ক্ষিত সময়ের চেয়ে কম কর্মঘন্টা কাজ করা বা একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে বেকারত্বকে বোঝানো হয়৷
অনুসন্ধানী প্রতিবদেনটি তৈরিতে ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ইউরোস্ট্যাটের শ্রমশক্তি জরিপের ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ এই জরিপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবকটি দেশ এবং নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ডের তথ্যও আছে৷ তবে যুক্তরাজ্যের তথ্য আছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত৷
এতে দেখা গেছে, ইউরোপে অবস্থানরত শিক্ষিত অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকে যে কাজটি করছেন, সেই কাজের তুলনায় তারা অনেক বেশি দক্ষ৷ তারা কর্মদক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না৷ স্থানীয়দের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতা থাকার পরও তাদের বেকার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ৷ সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষিত নারী অভিবাসীরা৷ অভিবাসীদের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের অবস্থা আরো শোচনীয়৷ আর এভাবেই ইউরোপজুড়ে মেধার অপচয় হচ্ছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে৷
ক্ষতির মুখে অর্থনীতি ও অভিবাসীরা
বার্ধক্য কবলিত জনসংখ্যা, ব্রেক্সিট নীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতের কারণে ইউরোপজুড়ে দেখা দিয়েছে শ্রমঘাটতি৷ ইউরো জোনে অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও, অনেক ইউরোপীয় দেশ নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে অভিবাসী শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছে৷ বিদেশি দক্ষ কর্মীদের কাছে টানতে কিছু কিছু দেশ তাদের অভিবাসন নীতিও শিথিল করছে৷
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, মজুরির প্রশ্নে উদার নীতিগুলোও দক্ষতা অনুযায়ী কাজের সমতা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে৷
অনুসন্ধান আরো বলা হয়েছে, সমান ডিগ্রি থাকার পরেও ইউরোপের অভিবাসী গ্র্যাজুয়েটরা স্থানীয় গ্র্যাজুয়েটদের তুলনায় প্রতি বছর দুই হাজার ইউরো কম আয় করেন৷ আর এই আয়ের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার একশো কোটি ইউরোতে৷
উচ্চ আয়ের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের তুলনায় আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন অ্যামেরিকা ও সেন্ট্রাল অ্যামেরিকা থেকে আসা অভিবাসীরাই মেধার অপচয়ের শিকার হচ্ছেন বেশি৷
শ্রমবাজারে শ্রম দিয়েও কম আয় করার কারণে অভিবাসী কর্মীরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, বরং অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে৷ এতে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের যদি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেয়া হয় এবং স্থানীয়দের সমান বেতন দেয়া হয়, তাহলে ইউরোপের অর্থনীতিতে অন্তত ৩৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো যুক্ত হবে৷
সব দেশ সমান নয়
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইটালি, গ্রিস, স্পেন এবং সুইডেনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মেধার অপচয় হচ্ছে৷
শিক্ষিত অভিবাসীদের কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে প্রথম দিকেই আছে পর্তুগালের নাম৷ পশ্চিম ইউরোপের দরিদ্রতম এই দেশটিতে শিক্ষিত অভিবাসীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন এবং বেকারত্বের হারও কম৷ এছাড়াও, পর্তুগালে অভিবাসী এবং স্থানীয় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে তুলনামূলক সমতা রয়েছে৷ শিক্ষকতা, নার্সিং, প্রকৌশল এবং আর্থিক খাতে কাজ করা সেখানে স্থানীয় ও অভিবাসীদের জন্য সাধারণ পেশায় পরিণত হয়েছে৷
অভিবাসীরা যে অর্থনৈতিক সূচকে ভূমিকা রাখছে সেটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে পর্তুগালের সরকার৷ এছাড়াও, বিনা খরচে ভাষা শিক্ষার সুযোগ দেয়া, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দেয়ার কারণেই পর্তুগাল এই সাফল্য পাচ্ছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে৷