সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৪ অপরাহ্ন

ইউরোপে পড়ালেখার জনপ্রিয় বৃত্তির সুযোগ

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

ইউরোপে পড়ার জন্য ইরাসমাস মুন্ডাস বেশ জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ একটি বৃত্তি। ইউরোপের নামী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সমন্বিতভাবে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে আমি এই বৃত্তি পাই। সেবার বিশ্বজুড়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। শেষে ৪৪টি দেশ থেকে আমরা ৮১ জন নির্বাচিত হই। পরে জেনেছি, এর আগের পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে কেউই এই প্রোগ্রামে আসেনি। এখন অবশ্য অনেকেই ইরাসমাস মুন্ডাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে চান, তাঁদের সহায়তা করার জন্যই আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।

আছে নানা সুবিধা

২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি) ভর্তি হয়েছিলাম। স্নাতক শেষে চাকরিও শুরু করি। তবে আগে থেকেই আমার দেশের বাইরে মাস্টার্স করার পরিকল্পনা। তাই খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। এক সহকর্মীর কাছ থেকে ইরাসমাস মুন্ডাসের খোঁজ পেয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আবেদন করি।

ইরাসমাস বৃত্তির বড় সুবিধা হলো, ইউরোপের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ। আমার হোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ডেনমার্কের আরহুস ইউনিভার্সিটি ও ড্যানিশ স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজম। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুন্ডুসিয়ান হিসেবে আরহুসে শিক্ষা যাত্রা শুরু করি। এখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে, যা যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। প্রাগ, মিউনিখ, অ্যামস্টারডাম ও লন্ডনের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। এখন বিজনেস ও ইনোভেশনের ওপর মেজর করছি। এখানেও আমি একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। আমাদের ক্লাসের বেশির ভাগ শিক্ষকই গার্ডিয়ান, বিবিসি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসসহ নানা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। যেহেতু অভিজ্ঞ সব মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাচ্ছি, তাই মাস্টার্স শেষে পিএইচডি করার পরিকল্পনা আছে।

নতুন নতুন দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, গবেষণা এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ করে দেয় এই বৃত্তি। ক্লাসে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের দেখি। আমার অনেক বন্ধু ইরান, চীন থেকেও এসেছে। শিক্ষার্থীর যাতায়াত, স্বাস্থ্যবিমা ও গবেষণা-সম্পর্কিত খরচ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, সবই বৃত্তির আওতায় পড়ে। নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিতে হয় আমাদের।

ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা। নির্বাচিত হলেই যে সব খরচ দেওয়া হয় বা প্রতিটি প্রোগ্রামের বৃত্তি একই রকম—তা কিন্তু নয়। সেলফ ফান্ডেড বা নিজ অর্থায়নে পড়ার জন্যও অনেকে নির্বাচিত হন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকেই তাঁর খরচ বহন করতে হয়।

কীভাবে আবেদন করবেন

জয়েন্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামের চারটি সেমিস্টারে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের হিসেবে, সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই বৃত্তি নিয়ে তিন শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।

ইরাসমাস মুন্ডাসের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। স্নাতকের শেষ বর্ষেও আবেদন করতে পারবেন। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা আইইএলটিএসে প্রোগ্রাম ভেদে স্কোর থাকতে হবে ৬.৫ থেকে ৭.০। পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো, তবে বাধ্যতামূলক নয়।

আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রতিটি প্রোগ্রামের নাম ও ঠিকানা পাওয়া যাবে। তারপর কোর্স, আবেদনপ্রক্রিয়া ও বৃত্তি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি ‘কন্টাক্ট প্রজেক্ট পারসন’ অপশনে ক্লিক করে যোগাযোগ করা যাবে।

ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তির তিনটিতে আবেদনের সময় তিন রকম। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশন ও ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স (ইএমজেএম) অ্যাকশনের জন্য বিভিন্ন সেশনে আবেদন করতে হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com