স্বপ্নের ইউরোপ যেতে কে না চাই? মধ্যপ্রাচ্যের ভিসানীতিতে আটকেপড়া প্রবাসীদের কাছে ইউরোপ মানেই স্বাধীনতা ও সফলতা। যখন এই সুযোগ চালু হয় তখন তো স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে চেষ্টা চালাতে হবেই। আর সেই সুযোগ লুফে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটককে পুঁজি করে চলছে এই প্রতারণা।
নামে বেনামে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি ইউরোপ পাঠানোর লোভনীয় অফার দিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে ইউরোপের স্বপ্ন দেখা তরুণরা। যার বিশাল একটা অংশ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ যাওয়ার দারুণ সুযোগ চালু হওয়ায় অনেকে বৈধপথে ইউরোপ পাড়ি জমাচ্ছেন। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন প্রতারক চক্র।
মাত্র ৩ মাসে পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া, পর্তুগালসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এসব এজেন্সিগুলো শতকরা দুই চার জনকে ইউরোপ পাঠালেও বেশিরভাগ প্রবাসীর স্বপ্ন মধ্যপ্রাচ্যেই থেকে যায়।
এর মধ্যে যারা ইউরোপ পাড়ি দেয় তারাও বনে যায় এক একটা এজেন্সি। ইউরোপভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে ভিসা নিয়ে কাজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ। যেহেতু তারা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ইউরোপ পাড়ি দিয়েছেন তাই সহজসরল প্রবাসীরা সহজেই তাদের বিশ্বাস করে নেয়।
এমন একজন ভুক্তভোগী কুয়েত প্রবাসী ইমরান হোসেন। ৮ বছর যাবত কুয়েতে আছেন তিনি। তার স্বপ্ন এখন ইউরোপ। আর সেই স্বপ্ন পূরণে দুই বছরে প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা খুইয়েছেন বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে। এজেন্সিগুলোর লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে তাদের অফিসে ফাইল জমা দেন। ফাইল জমা দেওয়া মানেই হচ্ছে প্রথম ফাঁদে পা দেওয়া। ফাইলের সাথে তারা প্রথম পেমেন্ট হিসেবে নেয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
‘এরপর দুই এক মাসের মধ্যে তারা ওয়ার্ক পারমিট বের হওয়ার নামে ফের নেন এক থেকে দেড় লাখ। পরবর্তীতে দূতাবাস থেকে দেখা যায় এসব ওয়ার্ক পারমিট ভুয়া। ফলে ভিসা রিজেক্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে একেকটা এজেন্সি হাতিয়ে নেয় ২-৩ লাখ টাকা। যা অফেরতযোগ্য। এভাবে দুই বছরে ইমরান চারবার রিজেক্ট হয়েছেন পোল্যান্ড দূতাবাস থেকে।’
এসব ভিসা প্রতারকদের কাছ থেকে সতর্ক হতে আহ্বান জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে যারা ভিসা প্রতারণার কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের খোঁজ নিচ্ছি, যদি জানতে পারি তারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে যারা না জেনে না বুঝে ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন তাদেরও সতর্ক করছি। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আপনারা যুক্ত হবেন না, কারণ টাকা নেওয়া যেমন অবৈধ, তেমনি টাকা দেওয়াও অবৈধ।