ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণপর্যটনের বিরুদ্ধে চলছে প্রতিবাদ। স্পেনের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ, ভেনিসে এক ধনকুবেরের বিয়েতে বিক্ষোভকারীদের হানা, লুভর মিউজিয়ামের কর্মীদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে সেখানে। সব মিলিয়ে ইউরোপে পর্যটনের বিরুদ্ধে জনরোষ এখন চোখে পড়ার মতো।
করোনা মহামারির পর
বার্সেলোনার লাস রামব্লাসে মহামারির সময় নির্জন অবস্থা ছিল। কিন্তু এখন চারদিকে শুধু ভিড় আর কোলাহল। বার্সেলোনার অধ্যাপক মাইতে দোমিঙ্গো আলেগ্রে বলেন, ‘আগেও পর্যটক ছিল। কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ বছরে চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন আর মৌসুমভিত্তিক নয়, সারা বছর ভিড় লেগে থাকে। পর্যটকের সংখ্যা শহরের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।’ ভেনিসেও একই অবস্থা। সংগীতশিল্পী অর্নেল্লো এক ভিডিওতে নিজেকে মহাকাশচারী সাজিয়ে শহরের ভিড়ে হাঁটছেন, নিজ শহর তাঁর কাছেও এখন যেন অচেনা।
নির্জন সৌন্দর্য থেকে জনাকীর্ণ শহর
ইউরোপের নিরিবিলি দ্বীপ বা শহর এখন পর্যটকের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। শুরুতে ছোট ট্যুর অপারেটররা অচেনা জায়গায় ভ্রমণ করাতেন।
কিন্তু ধীরে ধীরে বাজেট এয়ারলাইনগুলো রুট চালু করে, তারপর দাম কমিয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটক টেনে আনে। ফলে স্থানীয় মানুষের জীবনে শান্তি হারিয়ে যায়, ভাড়া বেড়ে যায় আর সংস্কৃতির জায়গা নেয় ভিড় ও বাণিজ্য।
কিছু শহরের পাল্টা ব্যবস্থা
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগও চলছে। স্পেনের পালমা শহর পর্যটনশিল্পকে নতুনভাবে সাজাচ্ছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনটি ক্রুজ জাহাজ ভিড়তে দেওয়া হয় এই শহরে। এয়ারবিএনবি ও শহরের ভেতরে নতুন হোটেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুরোনো সস্তা হোটেল কিনে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, যেন অতিরিক্ত বাজেট ভ্রমণকারী না আসে।
স্থানীয়দের কেন্দ্র করে পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সংখ্যা কমানো নয়, স্থানীয় লোকজনের সন্তুষ্টি ফেরানো জরুরি। কারণ, স্থানীয় লোকজন শহর ছেড়ে গেলে শহর পর্যটকদের কাছে আর আকর্ষণীয় থাকবে না। ইতালির পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘ভিজিট ইতালি’র প্রধান রুবেন সান্তোপিয়েত্রো বলেন, ‘রোম, ফ্লোরেন্স বা নেপলসে এখন পর্যটকে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই অর্ধেক ইতালিয়ান শহর স্থানীয় লোকজনের জন্য অপ্রবেশযোগ্য হয়ে উঠবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পর্যটনের চাপ শুধু সংখ্যায় বেশি বলে নয়, সমস্যা হচ্ছে একই জায়গায় অতিরিক্ত ভিড়। তাই ইতালিতে চালু হয়েছে ‘নাইনটি নাইন পারসেন্ট অব ইতালি’ ক্যাম্পেইন, যেখানে কম পরিচিত কিন্তু সুন্দর শহরগুলোতে ভ্রমণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ইউরোপের এই সংকটে পর্যটন বন্ধ না করে বরং এটিকে নতুন করে সাজানো দরকার। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকে কেন্দ্রে রেখে একটি সুপরিকল্পিত পর্যটন মডেল তৈরি করা জরুরি।
এর মাধ্যমে শুধু কয়েকটি জনপ্রিয় জায়গায় ভিড় না জমিয়ে পর্যটকদের কম পরিচিত গন্তব্যগুলোতে উৎসাহিত করা হবে। সব মিলিয়ে, ইউরোপ চাইছে এমন একটি পর্যটনব্যবস্থা, যেখানে অর্থনৈতিক লাভ এবং স্থানীয় মানুষের সুস্থ জীবনযাপন পাশাপাশি চলতে পারে।
সূত্র: সিএনএন