ন্নত মানের শিক্ষার ভিত্তিতে যুগ যুগ ধরে মেধার সুষ্ঠু বিকাশের মঞ্চ হয়ে আসছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়গুলো। বছরের পর বছর ধরে দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এই মহান মঞ্চগুলোরই রূপকল্পের ফসল। শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সগর্বে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। প্রতিটির মতো ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রতিবছর পরিণত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বজোড়া শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়। তেমনই একটি দেশ চেক প্রজাতন্ত্র, যেটি ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার এবং মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরিণত হয়েছে শিক্ষার স্বর্গভূমিতে।
জনপ্রিয়তার কারণ
বিগত দশকে বিশ্বজুড়ে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান মধ্য ইউরোপের দেশটিকে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্পে পরিণত করেছে। সবচেয়ে মোক্ষম কারণটি হচ্ছে দেশটির নিরাপদ পরিবেশ। বিশ্বব্যাপী ১৬৩টি দেশের মধ্যে ১ দশমিক ৪৫৯ গ্লোবাল পিস ইনডেক্স স্কোর নিয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। বিশ্বের শীর্ষ নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানের দেশটির ক্রাইম ইনডেক্স স্কোর ২৬ দশমিক ৮। শেনজেনভুক্ত দেশ হওয়ায় অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণের আকর্ষণেও অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর গন্তব্য এই দেশ।
পড়াশোনার জন্য স্থানীয় ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি চাকরি ক্ষেত্রে অধিকাংশ চাহিদাসম্পন্ন কোর্সগুলো ইংরেজিতেই পড়ানো হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের পূর্বশর্তটিও শিথিল করা হয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী একাডেমিক ডিগ্রি ইংরেজি মাধ্যমে করা হয়েছে কি না, তার জন্য এমওআই (মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন) চাওয়া হয়।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে ভর্তি হওয়ার জন্য ভাষার জন্য সিইএফআর বা কমন ইউরোপীয় ফ্রেমওয়ার্ক অব রেফারেন্স পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের এই দেশ নির্বাচনের আরও একটি কারণ হচ্ছে চেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহজ ভর্তিপ্রক্রিয়া। এখানে প্রবেশিকা পরীক্ষা বা ইন্টারভিউর যথেষ্ট বিকল্প রয়েছে, যেখানে শুধু সঠিক কাগজপত্র এবং ফি প্রদানের মাধ্যমেই ভর্তির কাজ সম্পন্ন করা যায়।
কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ২৪৮ নম্বরে রয়েছে সুপরিচিত চেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪০০ নম্বরে, চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৪৫৪ এবং কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাগ ৫৫৬-তে। ব্রনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রয়েছে ৬১১, প্যালাস্কি ইউনিভার্সিটি অলোমৌচ ৬৩১-এ এবং চেক ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাগ ৭০১ নম্বরে।
উচ্চশিক্ষার জন্য পূর্বশর্ত কী
এখানকার কোর্সগুলোতে পড়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত হলো পূর্ববর্তী প্রাসঙ্গিক একাডেমিক ডিগ্রিগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়া। যেমন আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য উচ্চমাধ্যমিক, ডিপ্লোমা বা সমমানের একাডেমিক পরীক্ষার সনদ থাকা প্রয়োজন। মাস্টার্সের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল স্টাডি প্রোগ্রামের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দরকার হয়।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেক ভাষায় পড়ানো কোর্সগুলোতে কোনো খরচ নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চেক ভাষায় পড়ার জন্য এক বছরের একটি ফাউন্ডেশন কোর্স করায়। এরপর প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে ভর্তি নেওয়া হয়। এখানে ভাষা টেস্ট পরীক্ষায় ন্যূনতম স্কোর বি-২, কিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সি-১ থাকতে হয়।
আর ইংরেজিতে পড়ানো কোর্সের ক্ষেত্রে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাষা দক্ষতা সনদ চায়, তারা সচরাচর আইইএলটিস বা টিওইএফএল স্কোরকে গুরুত্ব দেয়।
সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স কোনগুলো:
*চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়
· *মাসারিক বিশ্ববিদ্যালয়
· *চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
· *ইউনিভার্সিটি অব কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রাগ
· *ব্রনো ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
· *প্যালাস্কি ইউনিভার্সিটি অলোমৌচ
· *চেক ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সায়েন্সেস প্রাগ
· *মেন্ডেল বিশ্ববিদ্যালয় ইন ব্রনো
· *অস্ট্রাভা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি
· *সাউথ বোহেমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইন চেক বুডিজোভিচ
সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো হলো:
· *মেডিসিন ও হেলথকেয়ার
· *ব্যবসা ও অর্থনীতি
· *মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান
· *তথ্যপ্রযুক্তি
· *প্রকৌশলী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
ভর্তির জন্য আবেদনের মৌসুম শুরু হয় সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। অনলাইনে ভর্তির আবেদনের জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব পোর্টাল। সেখানে কাঙ্ক্ষিত কোর্স খুঁজে বের করার জন্য রয়েছে যাবতীয় তথ্য।
অনলাইনে আবেদন সম্পন্নের সময় কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হতে পারে। ইলেকট্রনিক আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তা প্রিন্ট করতে হবে। অতঃপর তা সই করে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকযোগে পাঠাতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র:
ভর্তির আবেদনের সঙ্গে যে কাগজপত্রগুলো সংযুক্তি হিসেবে দিতে হয়, তা হলো:
*ডিপ্লোমা বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণের সত্যায়িত অনুলিপি
*সনদ এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় হলে সেগুলো চেক বা ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিতে হবে
*প্রশাসনিক ফি প্রদানের প্রমাণ: ৩ হাজার চেক কোরুনা
ফি প্রদানের প্রমাণ:
*শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে এর পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০ ইউরো থেকে শুরু হয়ে ৫০ ইউরোর অধিক হতে পারে।
*মোটিভেশন লেটার
*২ থেকে ৩টি রেফারেন্স লেটার
*সিভি বা পোর্টফোলিও
*বৃত্তি পেলে বা অন্য কেউ পড়াশোনার খরচ বহন করলে তার প্রমাণ
*ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা (সাধারণত পিটিই একাডেমিক, টিওইএফএল ও আইইএলটিএস স্কোর দেখা হয়)।
আবেদন–পরবর্তী প্রক্রিয়া:
পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালের মাধ্যমে এবং চিঠি বা ই–মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। এখানে প্রার্থীর আবেদন ও কাগজপত্রগুলো যাচাইকরণে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আবেদনের প্রাথমিক ধাপে উতরে গেলে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জুম বা স্কাইপের মাধ্যমে মৌখিক সাক্ষাৎকার নিতে পারে। যাবতীয় যাচাই-বাছাই শেষে সাধারণত জুনের শেষের দিকে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়।
ফলাফল ইতিবাচক হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রথম সেমিস্টারের জন্য টিউশন ফি দিতে বলা হয়। আর এই ফি প্রাপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীকে তার কাঙ্ক্ষিত অফার লেটারটি পাঠানো হয়। এটি পরে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
অফার লেটার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিসার কাজ শুরু করে দিতে হবে। চেক প্রজাতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ডি-টাইপ ক্যাটাগরিই হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসা, যেখানে ৯০ দিনের বেশি সময় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ভিসার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত; এরপর ভিসা আবার রিনিউ করতে হয়। আবেদনের জন্য https://frs.gov.cz/en/forms-and-documents/-এই লিঙ্কে যেয়ে অনলাইন আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া ফর্ম ডাউনলোড করে কম্পিউটারের মাধ্যমে অথবা প্রিন্ট করে হাতে লিখেও পূরণ করা যেতে পারে। ফর্মের সব তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদানের পর সবশেষে সই করতে হবে। ইলেকট্রনিকভাবে এই আবেদনের সময় ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সঙ্গে থাকা দরকার।
দরকারি কাগজপত্র
*চেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ভর্তির অফার লেটার
*দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট, যার মেয়াদ থাকতে হবে চেক প্রজাতন্ত্রে উপস্থিত হওয়ার দিন থেকে ন্যূনতম ৩ মাস পর্যন্ত
*সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
*দেশটিতে থাকার জন্য আর্থিক তহবিলের প্রমাণপত্র (কমপক্ষে ৭৮ হাজার ২৫০ কোরুনা)
*মেডিকেল রিপোর্ট
*আবাসন নিশ্চিতকরণের প্রমাণ
*পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (অফিশিয়াল রাবার স্ট্যাম্পসহ চেক ভাষায় অনুবাদ করা হতে হবে)
*চেক প্রজাতন্ত্রে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৯০ দিনের জন্য ভ্রমণ চিকিৎসা বিমার প্রমাণপত্র
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পাসপোর্ট ছাড়া আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত সব নথি চেক ভাষায় হতে হবে। পাসপোর্ট ও ছবি ছাড়া কোনো নথি ১৮০ দিনের বেশি পুরোনো হতে পারবে না।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট পদ্ধতি
বাংলাদেশের জন্য চেক স্টুডেন্ট ভিসার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে। তাই আবেদনপত্রসহ ভিসার সমুদয় নথি সেখানেই জমা দিতে হবে। তবে আবেদন জমা দেওয়ার আগে ই-মেইলের মাধ্যমে চেক দূতাবাসের কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি ডি-টাইপ ভিসার আবেদনকারীদের জন্য দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট বুকিং সিস্টেম রয়েছে। বুকিং সিস্টেম প্রতি মাসের প্রথম সোমবার (কর্মদিবস হতে হবে) ভারতীয় সময় বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে চালু করা হয়। আবেদনকারীকে এ সময়ের মধ্যে [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় অ্যাপয়েন্টমেন্টের আবেদন পাঠাতে হবে।
দূতাবাসে ভিসার কাগজপত্র জমা প্রদান
ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো তারিখে মূল কপিসহ ভিসার সব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে সশরীর উপস্থিত হতে হবে। দূতাবাসের ঠিকানা: ৫০-এম, নীতি মার্গ, চাণক্যপুরী, নতুন দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত। দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে চেক, ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আগে থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে হবে।
ভিসার ফি ২ হাজার ৫০০ কোরুনা। এই ভিসা প্রক্রিয়ার সমুদয় কার্যক্রমে সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ কর্মদিবস লাগে। আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেলে ই-মেইলের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হবে।
পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ
ইউরোপীয় দেশটিতে অধ্যয়ন খরচ গড়পড়তায় ২ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার ইউরো। তবে প্রকৌশলী, মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রির মতো বিষয়ে ইউনিভার্সিটিভেদে আরও বেশি খরচ হয়ে থাকে। মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সাধারণত প্রতিবছর ৪ থেকে ১০ হাজার ইউরো খরচ হতে পারে।
জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে আবাসন, খাবার এবং পরিবহন সব মিলিয়ে সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ থেকে ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। অবশ্য অর্থ সংকুলানের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষার্থীর চলাফেরা ও অভ্যাসের ওপর। অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রী ওই খরচের মধ্যেই প্রাগের মতো অত্যাধুনিক শহরে বসবাস করছে।
উচ্চশিক্ষায় সেরা স্কলারশিপগুলো
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও আছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা। তার মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত উপায়টি হচ্ছে ইরাসমাস মুন্ডাস, যেটি শুধু মাস্টার্সের জন্য দেওয়া হয়। এখানে ১ থেকে ২ শিক্ষাবর্ষের ব্যয়ভারের জন্য স্পনসরশিপ পাওয়া যায়।
সিইইপিইউএস বা সিপাস প্রোগ্রাম একটি সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। এর রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটির নেটওয়ার্ক। স্কলারশিপটির উদ্দেশ্য এই ইউনিভার্সিটিগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা হলেও, অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও মেধার ভিত্তিতে এটি অর্জন করতে পারে। এটি মূলত ৩ থেকে ১০ মাসের অধ্যয়ন খরচ বহন করে।
এ ছাড়া রয়েছে মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য চেক সরকার বৃত্তি, যা প্রায় পুরো অধ্যয়নের ব্যয়ভার বহন করে।
পড়াশোনার সময় আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপায়
ইউরোপের এই দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টার ওপর নির্দিষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অধ্যয়নকালে কাজ করার জন্য তাদেরকে একটি পারমিট বা ব্লু কার্ড নিতে হয়। এটি স্থানীয় কর্মসংস্থান অফিস থেকে আবেদনের ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়। কার্ডটি প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর রিনিউ করতে হয়।
ইউনিভার্সিটির ক্লাস ও পড়াশোনার সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে গড়ে প্রায় ২১ দশমিক ৫ ঘণ্টা কাজ করে থাকে। এই চাকরিগুলো থেকে গড় আয় প্রতি ঘণ্টায় ১১০ থেকে ২৫০ কোরুনা। তবে কাজের দক্ষতা এবং পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বেতন পরিবর্তিত হয়।
ডিগ্রির পর চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সম্ভাবনা
স্নাতক শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা চাকরি খোঁজা বা ব্যবসা শুরুর জন্য অতিরিক্ত ৯ মাসের রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারে। দেশজুড়ে কাজের বৈচিত্র্য এবং প্রতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভ্যাকেন্সি থাকায় এই সময়টুকুর মধ্যে গ্র্যাজুয়েটরা নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা করে নিতে পারে।
এ ছাড়া এখানে টানা পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাসের পর স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করা যায়। এই অনুমতির ক্ষেত্রে সময়ের তুলনায় প্রার্থীর বৈধ নথিপত্রকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্ক প্রার্থীদের জন্য পারমিটের নথি জারি করা হয় ১০ বছরের জন্য। আর ১৫ বছরের কম বয়সীদের নথির মেয়াদ থাকে ৫ বছর। মেয়াদান্তে নথির বৈধতা আবার রিনিউ করা যায়। তথ্যসূত্র: ইউএনবি নিউজ