আসামের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। ভারতের সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল রাজ্যগুলোর একটি হলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম। রাজ্যটির আসল সৌন্দর্য আপনি পাবেন তার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মধ্যে। কম খরচে যারা আসাম ভ্রমণ করতে চান, তারা চাইলে রাজ্যটির বিশেষ কিছু ঐতিহ্য স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন। জেনে নিন আসাম ভ্রমণে কোন কোন স্থান ঘুরে দেখতে ভুলবেন না-
রং ঘর হলো এশিয়ার প্রথম বড় আকারের অডিটোরিয়াম? শুধু এশিয়ার প্রথমই নয়, প্রাচীনতমও বটে। শিবসাগর জেলায় অবস্থিত রং ঘর ছিলো একটি রাজকীয় ক্রীড়া প্যাভিলিয়ন যেখানে রাজারা ও উচ্চশ্রেণির লোকেরা মহিষের লড়াই, ঘোড়দৌড়সহ আরও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। এর ইতিহাস প্রায় পৌনে পাঁচশত বছর আগের।
রং ঘর থেকে খুব বেশি দূরে নয় তলাতল ঘর যার আরেক নাম রংপুর প্যালেস। আহোম রাজা স্বর্গদেও রুদ্র সিংহর ঘাঁটি ছিল জায়গাটি। আসাম রাজ্যের আহোম স্থাপত্যকর্মের মধ্যে তলাতল ঘর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রাসাদটির নিচতলার ওপরের অংশ ‘কারেং ঘর’ হিসেবে পরিচিত ও এখানেই রাজপরিবার বসবাস করতো। সর্বমোট সাততলা তলাতল ঘর গোটা আসাম রাজ্যের বৃহত্তম ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলোর একটি।
গোলাপাড়া জেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সূর্য পাহাড় একটি বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ‘দ্য হিল অব সান’ কথাটি থেকেই সূর্য পাহাড় নামের উৎপত্তি। সূর্যের প্রতি ভালোবাসা নিবেদনের একটি সাবেক জায়গা হলো সূর্য পাহাড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায় যে, জায়গাটিতে প্রায় লাখখানেক শিবলিঙ্গ আছে।
আরেকটি তথ্য হচ্ছে, এই সূর্য পাহাড় একসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র ছিল। বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় এটিকে একটি ব্যতিক্রমী ভ্রমণ গন্তব্য বানিয়েছে। আসামের প্রধান শহর গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১২৭ কিলোমিটার দূরে সূর্য পাহাড়ের অবস্থান।
ভারতের বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী রাজ্য হলো আসাম। ১৮৩৭ সালে আপার আসামের চাবুয়ায় ব্রিটিশ মালিকানাধীন প্রথম চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় ও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৮৪০ সালের দিকে। রাজ্যের বিশ্বনাথ চারিআলিতে অবস্থিত ‘মনাবাড়ি টি এস্টেট’ হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম চা-বাগান।
বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন ডিগবই হচ্ছে গোটা ভারতের প্রথম তেল শোধনাগার। ‘অয়েল সিটি অব আসাম’ নামে পরিচিত ডিগবইয়ের অবস্থান তিনসুকিয়া জেলায়। ডিগবই শোধনাগারের যন্ত্রপাতি কিন্তু ভারতের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো যা এখনো চালু আছে। তবে জায়গাটির আকর্ষণ এতেই সীমাবদ্ধ নয়।
এখানে ব্রিটিশ শাসকদের নির্মিত কিছু নজরকাড়া ও চিরসবুজ বাংলোও দেখার মতো জিনিস। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিগবই সেন্টেনারি মিউজিয়ামে গেলে জানা যাবে আসামের পাহাড়ি এলাকার তেলশিল্পের ইতিহাস। ডিগবইয়ে প্রথমবার ক্রুড অয়েল পাওয়া গিয়েছিলো ১৮৬৬ সালে ও প্রথম শোধনাগার স্থাপিত হয় ১৯০১ সালে।
গ্রেট আহোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সুকাফার রাজধানী ছিলো পূর্ব শিবসাগর এলাকার চড়াইদেও। এছাড়া চড়াইদের ছিল আহোম রাজবংশের লোকদের শেষকৃত্য আয়োজনের স্থান। চড়াইদেওর পাহাড়চূড়া থেকে মোট ৪২টি স্মৃতিস্তম্ভ আবিষ্কৃত হয়েছিলো। আর এ কারণেই স্থানটির আরেক নাম ‘পিরামিডস অব আসাম’।
আসাম বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি রাজ্য এবং সেখানে যেতে হলে আপনাকে আগে যেতে হবে সিলেট জেলায়। ঢাকা শহর থেকে সড়ক, রেল কিংবা আকাশপথে সিলেটে পৌঁছে সেখান থেকে কার কিংবা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে সোজা চলে যাবেন তামাবিল চেকপোস্টে।
চেকপোস্টে ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে ডাউকি বাজার থেকে কার অথবা জিপে করে মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। রাস্তার দু’পাশের নয়নভিরাম দৃশ্য আপনার দুচোখে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেবে।
শিলং থেকে কার/জিপ কিংবা পাবলিক বাসে করে গুয়াহাটিতে যেতে পৌনে দুই ঘন্টার মতো সময় লাগতে পারে। এবারও যাত্রাপথে দেখবেন ছবির মতো সুন্দর সব পাহাড়ি দৃশ্য। একটু আরামে যেতে চাইলে বিমানে করে কলকাতা গিয়ে সেখান থেকে গুয়াহাটির ফ্লাইট ধরতে পারেন।
গুয়াহাটি শহরে বিভিন্ন বাজেটের আবাসিক হোটেল আছে। তবে রাজনৈতিক কারণে সব হোটেল বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত নয়। তাই সেখানে যাওয়ার আগেই ইন্টারনেটে হোটেল বুক করা উচিত।
খাওয়ার জন্য মুসলিম রেস্টুরেন্ট খুঁজলেই পাবেন কারণ, আসামে অনেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস হলো আসামে বেড়ানোর সেরা সময়।