বিমানের জগতে ‘সুপারসনিক’ শব্দটি সংযোজিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ২ মার্চ। সেদিন প্রথম আকাশে উড়েছিল ফরাসি ও ইংরেজদের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত সুপারস্টার বিমান কনকর্ড। শব্দের গতিকে ছাড়িয়ে ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার বা ১ হাজার ৩৫৪ মাইল গতিসম্পন্ন বিশ্বের প্রথম যাত্রীবাহী সুপারসনিক আকাশযান।
মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় প্যারিস বা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছে যাওয়ার বিস্ময়কর অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল কিংবদন্তির বিমানটি। অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ, দূষণ, গগনবিদারী প্রকট শব্দ ইত্যাদি কারণে সুপারসনিক বিমানটি ‘সুপারহিট’ হতে পারেনি। ফলে বাণিজ্যিক সাফল্য অধরাই থেকে যায়। এরপরও ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর আকাশ দাপিয়ে বেড়িয়েছিল দৃষ্টিনন্দন নকশার প্রযুক্তির বিস্ময় কনকর্ড।
সময়ের সঙ্গে এগিয়ে থাকতে বিমান নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন এবং প্রতিনিয়ত এমন চমৎকার আকাশযানের পাখায় উৎকর্ষের একটি একটি করে পালক গেঁথে চলছেন, তাঁরা অচিরেই আরেকটি শব্দ সংযোজন করতে যাচ্ছেন, তা হলো ‘হাইপারসনিক’।
সুইজারল্যান্ডের স্টার্টআপ ডেস্টিনাস এ বিষয়ে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তারা কনকর্ডের ত্রুটিগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিমানটি নির্মাণ করছে। জ্বালানি হিসেবে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হবে বলে শূন্য কার্বন নিঃসরণের নিশ্চয়তা রয়েছে। এ ছাড়া কনকর্ডের মতো প্রচণ্ড শব্দ করবে না এটি। সব থেকে বড় কথা, এর গতি শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি! একে নির্দেশ করা হয় এম৫ দিয়ে। এই গতিতে একসঙ্গে ৪০০ যাত্রী প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছে যাবে মাত্র ৯০ মিনিটে। তীব্র গতির কারণে বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানটি উত্তপ্ত হলে ঠান্ডা তরল হাইড্রোজেন তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। নির্মাতারা জানিয়েছেন, ডেস্টিনাসের প্রথম বাণিজ্যিক উড্ডয়ন শুরু হতে যাচ্ছে ২০৩২ সাল থেকে। তবে এর আগে দু-এক বছরের মধ্যে ২৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম একটি প্রোটোটাইপ নির্মাণ করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই হাইপারসনিক বিমানটি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পৌঁছাবে ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে। বর্তমানে সাধারণ বিমানে এই পথ পাড়ি দিতে ২০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
শুধু ডেস্টিনাস নয়, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উঠেপড়ে লেগেছে হাইপারসনিক জগতে প্রবেশের জন্য। তা ছাড়া ২০৫০ সালের পরে কার্বন নিঃসরণকারী বিমান নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। সে কারণে জ্বালানি হিসেবে এখন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম পছন্দের জ্বালানি তরল হাইড্রোজেন।