ইউরোপীয় ইউনিয়নের বরাত দিয়ে সোমবার (৭ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে জার্মানির একটি দৈনিক৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার বলেছেন, সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান ‘গোটা ইউরোপের পাশাপাশি জার্মানিতে অনিয়মিত অভিবাসন’ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপেরই প্রতিফলন৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা হওয়া দেশ নয়৷’’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্চে দশ হাজারেরও কম আশ্রয় আবেদন জমা হয়েছে জার্মানিতে৷
জার্মান দৈনিক ভেল্ট আম জনটাগ সোমবার ইইউ কমিশনের একটি গোপন প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ফ্রান্স এবং স্পেনে আশ্রয় চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে৷
ইইউ’র পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট-এর ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যানেও তেমন আভাস মিলেছে৷ দেখা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে ১২ হাজার ৭৭৫টি নতুন আশ্রয় আবেদন জমা হয়েছিল৷ সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬৫টি আবেদন জমা পড়েছে ফ্রান্সে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৯৭৫টি জমা হয়েছে স্পেনে৷
৭ এপ্রিল জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (বিএএমএফ) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে জমা হওয়া প্রথমবারের মতো আশ্রয়ের আবেদনের সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে৷ আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে বরাবরের মতোই শীর্ষে রয়েছেন সিরিয়া, আফগান এবং তুরস্কের নাগরিকেরা৷
সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে জার্মানিতে অন্তত ৪১ হাজার আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে৷ তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোর কোনো তথ্য তারা প্রকাশ করেনি৷
বিএএমএফ বলছে, মার্চে নয় হাজারেরও কম আবেদন জমা পড়েছে৷ বেশ কয়েক বছর পর এই সংখ্যাটি প্রথমবারের মতো দশ হাজারের নিচে নেমেছে৷
এমনকি গত বছরেও আশ্রয় আবেদনের হিসাবে শীর্ষে ছিল জার্মানি৷ ২০২৪ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৬১৫টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছিল দেশটিতে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে জমা হয়েছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ১৭৫টি আবেদন৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইটালিতে জমা হয়েছিল এক লাখ ৫৮ হাজার ৬০৫টি আবেদন৷
ফেব্রুয়ারিতে জার্মান পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে অভিবাসন ছিল দেশটির রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়৷ ওই সময় জার্মানিতে কয়েকটি সহিংস হামলার সঙ্গে অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীদের নাম৷ এর জের ধরে ভোটের মাঠে ভালো ফল করেছে অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)৷ সাধারণ নির্বাচনে ভোটের হিসাবে তাদের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়৷
ভোট শেষ হলেও অভিবাসন এখনও সমানভাবে আলোচিত৷ ভোটে তৃতীয় স্থানে থাকা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে জোট সরকার গঠনের আলোচনা করছে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ৷ সেখানেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির বিদায়ী সরকার৷ সিডিইউ/সিএসইউ চায়, নিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জার্মানির সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দিতে৷