আলিতালিয়া (Alitalia) একসময় ইতালির জাতীয় বিমান সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের অন্যতম প্রধান এয়ারলাইন্স হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। যদিও ২০২১ সালে আলিতালিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং তার পরিবর্তে ITA এয়ারওয়েজ কার্যক্রম শুরু করে, আলিতালিয়ার ইতিহাস এবং তার সেবা অনেক ভ্রমণকারীর মনে অমলিন থেকে গেছে।
আলিতালিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ইতালির পুনর্গঠনের সময়, আলিতালিয়া দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল রোম থেকে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক গেমসের সময় আলিতালিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
আলিতালিয়া তার ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যেমন অর্থনৈতিক সমস্যা ও পরিচালনা নিয়ে জটিলতা। অবশেষে, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর, আলিতালিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তার কার্যক্রম বন্ধ করে এবং ITA এয়ারওয়েজ (Italia Trasporto Aereo) এর স্থলাভিষিক্ত হয়।
আলিতালিয়ার বহরে বিভিন্ন ধরনের বিমান ছিল, যেগুলো ছোট থেকে বড় দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা করত। এর মধ্যে বোয়িং এবং এয়ারবাস মডেলের বিমান ছিল। সংস্থার কর্মক্ষম সময়ে এর বহরে প্রায় ১০০টি বিমান ছিল, যার মধ্যে ছিল:
আলিতালিয়া প্রায় ৬০টিরও বেশি দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করত। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার প্রধান শহরগুলোতে সংস্থাটির ফ্লাইট ছিল। এর বড় রুটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রোম থেকে নিউইয়র্ক, মিলান থেকে টোকিও, এবং রোম থেকে দুবাই পর্যন্ত ফ্লাইট।
আলিতালিয়ার ইনফ্লাইট সেবা সবসময়ই ভ্রমণকারীদের কাছে প্রশংসিত ছিল। বিভিন্ন ফ্লাইট ক্লাস অনুযায়ী সেবা প্রদান করা হত:
আলিতালিয়া যাত্রীদের সেবা প্রদানে সবসময়ই গুরুত্ব দিয়েছিল। ফ্লাইট বুকিং থেকে শুরু করে সমস্যা সমাধান পর্যন্ত, সংস্থার কাস্টমার সার্ভিস সবসময় যাত্রীদের সহায়তা প্রদান করত। টেলিফোন, ইমেল, এবং এয়ারপোর্ট ডেস্কের মাধ্যমে যাত্রীরা দ্রুত সহায়তা পেতেন।
আলিতালিয়ার ফ্লাইটে পরিবেশিত খাবারগুলোর বিশেষত্ব ছিল ইতালিয়ান রন্ধনশৈলী। যাত্রীরা সাধারণত পাস্তা, লাসাগনা, রিসোটো এবং ইতালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে পারতেন। খাবারের মান এবং বৈচিত্র্য অনুযায়ী অনেক ভ্রমণকারীর কাছে এটি একটি বড় আকর্ষণ ছিল। এছাড়া প্রিমিয়াম যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওয়াইন এবং ডেজার্টও সরবরাহ করা হতো।
আলিতালিয়ার ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা ছিল। দীর্ঘ লেআভার থাকলে যাত্রীরা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে আরাম করতে পারতেন, যেখানে খাবার, Wi-Fi, এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা ছিল।
আলিতালিয়া বিমানবন্দরে প্রিমিয়াম যাত্রীদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ সুবিধা প্রদান করত। এখানে ব্যবসায়িক যাত্রীরা কাজ করার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ, বিনামূল্যে খাবার, এবং বিনোদনের সুবিধা উপভোগ করতে পারতেন। এই লাউঞ্জগুলো প্রধানত রোম, মিলান এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে পাওয়া যেত।
আলিতালিয়ার ইকোনমি ক্লাসের টিকিটগুলো সাধারণত সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যেত। বিশেষ করে অফ-পিক মৌসুমে বা প্রমোশনাল অফারের সময় যাত্রীরা সস্তায় টিকিট কিনতে পারতেন। তবে, যাত্রীরা প্রায়শই বেশি সুবিধা এবং আরামের জন্য প্রিমিয়াম ক্লাসের টিকিটও কিনতেন।
আলিতালিয়া মূলত তিনটি প্রধান শ্রেণিতে সেবা প্রদান করত:
আলিতালিয়ার কেবিন ক্রু এবং পাইলটরা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার ছিলেন। তারা সবসময় যাত্রীদের সেবা এবং নিরাপত্তার প্রতি নজর দিতেন। কেবিন ক্রুরা বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ ছিলেন, যা আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
আলিতালিয়ার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল এককথায় চমৎকার। যাত্রীরা প্রধানত নিম্নলিখিত কারণে আলিতালিয়া বেছে নিতেন:
আলিতালিয়া একসময় ইতালির জাতীয় গর্ব ছিল এবং এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ছিল। যাত্রীদের জন্য এর উন্নতমানের সেবা, আরামদায়ক ফ্লাইট এবং ইতালিয়ান খাবার সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও এটি এখন আর কার্যকর নয়, তবে আলিতালিয়ার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অনেক ভ্রমণকারীর মনে আজও জায়গা করে আছে।