আলজেরিয়া (Algeria) আফ্রিকার উত্তরাংশে অবস্থিত একটি বৃহৎ রাষ্ট্র। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই দেশটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ফরাসি উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আলজেরিয়ার জনগণের দীর্ঘ সংগ্রাম আজও বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক। চলুন, এই প্রবন্ধে জেনে নিই আলজেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত।
অবস্থান: উত্তর আফ্রিকা
রাজধানী: আলজিয়ার্স (Algiers)
আয়তন: প্রায় ২৩,৮১,৭৪১ বর্গকিলোমিটার (আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ)
সীমান্তবর্তী দেশ: তিউনিসিয়া, লিবিয়া, নাইজার, মালি, মৌরিতানিয়া, পশ্চিম সাহারা, মরক্কো
ভূপ্রকৃতি: সাহারা মরুভূমি এর একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে, তবে উত্তরে পাহাড় ও ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী উর্বর জমিও রয়েছে।
মোট জনসংখ্যা: প্রায় ৪ কোটিরও বেশি (২০২৫ অনুযায়ী আনুমানিক)
জাতিগোষ্ঠী: প্রধানত আরব এবং বারবার (Berber) জাতিগোষ্ঠী
ভাষা: সরকারি ভাষা আরবি ও বারবার। ফরাসি ভাষাও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় প্রশাসনিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে।
ধর্ম: প্রায় ৯৯% মুসলমান (সুন্নি মতবাদ)।
আলজেরিয়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন। এটি একসময় ফিনিশীয়, রোমান এবং ইসলামিক শাসকদের অধীনে ছিল। তবে ১৮৩০ সালে ফ্রান্স আলজেরিয়া দখল করে এবং ১৩২ বছর শাসন করে। এই শাসনকাল ছিল অত্যন্ত দমনমূলক।
১৯৫৪ সালে শুরু হয় আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধ, যা ১৯৬২ সাল পর্যন্ত চলে। ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (FLN) এর নেতৃত্বে দীর্ঘ আট বছর ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে আলজেরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে।
আলজেরিয়া একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন প্রধান নির্বাহী, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। এছাড়া একটি সংসদীয় কাঠামোও বিদ্যমান।
আলজেরিয়ার অর্থনীতি মূলত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটি তেল ও গ্যাস রপ্তানিতে আফ্রিকার অন্যতম প্রধান দেশ।
মূল পণ্য: প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, ফসফেট
শিল্প: তেল ও গ্যাস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেক্সটাইল
চ্যালেঞ্জ: বেকারত্ব, বৈচিত্র্যহীন অর্থনীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
আলজেরিয়ার সংস্কৃতি আরব ও বারবার ঐতিহ্যের মিশ্রণে গঠিত। সংগীত, নৃত্য, সাহিত্য এবং স্থাপত্যে এই মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট।
রাই সংগীত (Rai Music): বিশ্ববিখ্যাত একটি সংগীতধারা, যার উৎপত্তি আলজেরিয়াতেই।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক: পুরুষরা ‘জেলাবা’ এবং নারীরা ‘হায়েক’ পরেন।
খাদ্য: কুসকুস (Couscous), তাজিন, হারিসা, বিভিন্ন ধরনের গ্রিলড মাংস জনপ্রিয়।
আলজিয়ার্স: রাজধানী শহর, যেখানে পুরনো ইসলামিক স্থাপত্য ও আধুনিক স্থাপনার মিল রয়েছে
ঘারদায়া (Ghardaïa): ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহর
সাহারা মরুভূমি: ক্যামেল সাফারি, মরুভূমির রাত, তারাভরা আকাশ—সবই এক অনন্য অভিজ্ঞতা
তিমগাদ (Timgad): প্রাচীন রোমান শহরের ধ্বংসাবশেষ
আলজেরিয়া আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরব লীগ ও জাতিসংঘের সদস্য। এটি বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে। ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক ইতিহাসের জটিলতার কারণে কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ, কখনও উত্তেজনাপূর্ণ।
আলজেরিয়া একটি বৈচিত্র্যময়, সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সাহারা মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশটির সংগ্রামী ইতিহাস, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সত্যিই প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে উন্নয়নের পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আলজেরিয়াকে বিশ্ববাসী শুভকামনা জানায়।