মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন

আর্ট কোয়েস্ট কানাডার চিত্র প্রদর্শনী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

এই প্রথম বাংলাদেশ কনস্যুলেট টরন্টো আর্ট কোয়েস্ট কানাডার সাথে যৌথ উদ্যোগে চিত্র প্রদর্শনী উপহার দিলো টরন্টোর বাংলাদেশি ছবিপ্রিয় মানুষদের। আমার ভিডিওটি করার প্রধাণ কারণ কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ ফারুক হোসেনকে এজন্যে একটি চরম ধন্যবাদ জানানো। তিনি এই প্রথম কানাডায় থাকা বাংলাদেশি শিল্পীদের ‘আর্ট কোয়েস্ট কানাডা’র সঙ্গে যৌথ ভাবে উদ্যোগ নিলেন চিত্র প্রদর্শনী আয়োজনের। একটি মাইল ফলক নজির করলেন। অন্যান্য দূতাবাস বিশেষ করে ভারতীয় ও পাকিস্তান এরকম আয়োজন টরন্টোর আগা খান মিউজিয়ামে করেন।

আমাদের মিউজিয়ামে না হোক,,শুরুতো হলো। ফারুক হোসেন সাহেব আজ আছেন কাল হয়তো অন্যত্র বদলী হবেন তবে তার এই সাফল্য  টরন্টোর ছবি পছন্দ্ মানুষ মনে রাখবে। এর আগেও এরকম উদ্যোগ আটোয়া দূতাবাস থেকে কেউ কেউ নিয়ে ছিলেন তবে সফল হন নাই। তখনো টরন্টোতে বাংদেশ কনস্যুলেট খোলা হয়নি। দ্রুত বদলের কারণে দূতাবাসের দ্বিতীয় প্রধাণ মাসুদ খোন্দকার ভারপ্রাপ্ত কিংবা একটিং হাইকমিশনার হলেন। মার্জিত রুচির মানুষ শিল্পকলা সাহিত্য পছন্দ করেন ইংরেজী থেকে অনূবাদ করেন কবিতা,গদ্য সাহিত্য। অনূদিত বেশ কয়েকটি বইও আছে তার।

তিনি উদ্যোগ নিলেন কানাডার যে কোনো শহরেই বসবাস করুক বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীদের নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে একটি যৌথ প্রদর্শনী তিনি করবেনই! আবেদন করে ফান্ড ও পেয়ে গেলেন সরকার থেকে। দুর্ভাগ্য তখনি তার বদলি হয়ে গেলো কলকাতা বাংলাদেশ দূতাবাসে। এলেন নতুন হাইকমিশনার। আমার সৌভাগ্য আসার মাত্র ৬দিনপর সৌভাগ্যবশত দেখা হলো। টরন্টো ইউনিভার্সিটি মিসিসাগা ক্যাম্পসে বাংলাদেশি ছাত্ররা আয়োজন করেছিলো ‘বাংলাদেশ ডে’ নাচে গানে ভরা বড় মেলা বলা যায়।

ছাত্রদের প্রধাণ আমার পরিচিত। তীব্র আবদার গ্যালারী ফাঁকা পড়ে আছে যদি অনুমতি করেন আপনার স্টুডিও থেকে আমরাই পেইন্টিং এনে ইজেলে সাজিয়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশি আর্টিস্টের ছবির প্রদর্শনী থাকলে সার্থক হবে ‘বাংলাদেশ ডে’।নতুন হাই আসছেন চিফ গেস্ট হয়ে তিনিও ভাববেন আমরা সত্যি ভালো করেছি! সেই প্রথম আলাপ হলো। কানাডায় থাকা আর্টস্টদের যৌথ প্রদর্শনীর জন্যে মাসুদ খোন্দকার ফান্ড অনুমোদ করিয়ে রেখেছেন জেনে খুব খুশি হলেন। বল্লেন তিনি নিজেও আর্ট লাভার আর্ট কালেক্টার। ফান্ড দ্বিগুণ করার অনুমদন তিনি করিয়ে গ্র্যান্ড ভাবে এক্সজিবিশান করবেন। আমিতো খুশি। হলো ঠিক উল্টো। ওনার স্ত্রীর আত্মীয়া দেশের স্বনামধন্য কন্ঠশিল্পী।

ক্যানভাসে রঙমারা শিল্পীদের চেয়ে কন্ঠশিল্পীকে সেই জমা ফান্ড অটোয়া উড়িয়ে আনলেন। বেশ খরুচে গানের অনুষ্ঠান হলো দামী শাল দামী শারী দিয়ে স্বসন্মানে দেশে ফেরত পাঠানো হলো। ছবির প্রদর্শনী আর হলোনা। এসব কথা বলার নয়।কেউ বলেনা দেশের ভাবমূর্তির নাকি ক্ষতি হয়। আমিও বলতামনা শুধু বল্লাম সত্যিকার ভালো মানুষ ও দেশেবিদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সব দেশে-দেশের দূতাবাসে অনেকে আছেন যারা শিল্পকে প্রোমোট করতে কত কিছুই না করেন। একজন ফেরেস্তার মত মানুষ  পররাষ্ট্র সচিব প্রয়াত মিজারুল কায়েস আর্ট প্রোমটে যে নজির গড়ে দিয়ে গেছেন ভোলার নয়।

কনস্যুলেট টরন্টোতে তেমনি সাধ্যমত কনসাল জেনারেল শুরুতো অন্তত করলেন। টরন্টোতে ভারতীয় ও পাকিস্তানি দূতাবাস  আগা খান মিউজিয়ামে লাগাতার প্রদর্শনী করে। আমাদের শুরু হয়েছে আমারও হয়তো করবো-একদিন। আমাদের সরকারী পিয়নের যে মাসিক কামাই তার এক কিংবা দুইদিনের খরচে টরন্টোর আগা খান মিউজিয়ামে বাংলাদেশি আর্টিস্টদের ভালো প্রদর্শনী করা যেতে পারে। কয়েক বছর আগে আগা খান মিউজিয়ামের প্রধাণ রিচার্ড কিম আমার বন্ধু মানুষ ছিলেন।তার রুমে আমার আঁকা একটি লাল ও আল্ট্রামেরিনে আঁকা কৃষ্ণের পেইন্টিং সংগ্রহ করে টাঙ্গিয়ে রেখে ছিলেন। প্রায় বলতেন – ইন্ডিয়া পাকিস্তান আমাদের অফার নিয়ে কাড়াকড়ি করে এমন কি সুফি দলবদ্ধ গানের জন্যে আফগানিস্তান এসে ছিলো। অথচ বাংলাদেশকে সার্কেলে রাখতে বড় ডিস্কাউন্টে ডাকলেও কোনো সাড়া পাইনা।অন লাইনে আমাদের এক্সপ্লোলারেরা টরন্টোর অনেক বাংলাদেশী এসোসিয়েশানদের অফার চিঠি পাঠায় তারা কেউ রেস্পন্স করেনা। আমি কিমকে বলে ছিলাম- ওরা ভীষণ ব্যস্ত থাকে বিএনপি আওয়ামী লীগ আর হিন্দু মুসলিম ইসু নিয়ে। কিম অবাক হয়ে জানতে চেয়ে ছিলো- হোয়াট ইজ দিস ?

আমি বলে ছিলাম – গজব! কি বোঝো কিম? সে উৎফুল্ল হয়ে বল্লো-ইয়া! ইয়া! আইনো গজব। মানে হচ্ছে পানিস্মেন্ট। আগা খান মিউজিয়াম আমাকে উর্দু ফারসি হিন্দি এ্যারাবিক অনেক শব্দ শিখিয়েছে। আমি বলেছিলাম- ঠিক বলেছো কিম,আমরা নিজদের নিজেরাই ভীষণ রকম চিট করি,তাই গড আমাদের পানিস্মেন্ট দিয়েছেন আমরা পরস্পর একে অন্যকে মারতে মারতে মরতে মরতে বিনাশ হয়ে যাবো। আর্ট=লিটারেচার-কালচার আর নেই আমাদের মধ্যে নেই! রিচার্ড কিম বুঝলো আমি সিরিয়াস হয়ে গিয়েছি। তাই সে চুপ মেরে থাকলো। তারপর বল্লো-ওহ মাই গস!গড ব্লেস্ট ইউ এন্ড বাংলাদেশ।আমি ওর রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলে ছিলাম- নো ওয়ে কিম! একবার গজব দিলে পানিস্মেন্ট দিলে আর ফেরানো যায়না। ধ্যাৎ কি সব বকে যাচ্ছি! তার চেয়ে আরেকজন ভালো হাইকমিশনারের কথা বলে শেষ করি। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে শুধু দেশে হাউ মাউ করেছে, দেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে বাংলাদেশি আর্টিস্টদের সরকারী ভাবে বড় যৌথ প্রদর্শনী করে উঠতে পারেনি।

স্বাধীনতার ৫০ বছর উপল্ক্ষ্যে আমি ও বন্ধু কানাডায় সাউথ এশিয়ান আর্ট  স্পেশালিস্ট আলি আদিল খান অনেক ধর্না অনেক কাঠ খড় পুড়িয় আর্ট গ্যালারী অফ মিসিসাগাকে রাজী করিয়ে ছিলাম তিন মাস ব্যপী বাংলাদেশি আর্টিস্টদের আর্ট এক্সজিবিশান করতে। অনেক খরচের ব্যাপার,ডিএইচ এলে বাংলাদেশ থেকে ছবি ভাষ্কর্য কানাডা আনা আবার ফেরত পাঠানো। আলি আদিল নিজে কিউরেট করবেন আশ্বাস দেয়াতে গ্যালারী অফ মিসিসাগা রাজী হলো। ৩৮জন মাস্টার্স আর্টিস্ট থেকে শুরু করে তরুণ শিল্পী। যেমন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন,.এস,এম,সুলতান, রশীদ চৌধুরী দেবদাস চক্রবর্তী,মুর্তজা বশীর,মোহাম্মদ কিবরীয়া,কাইয়ুম চৌধুরী,মনিরুল ইসলাম,মাহমুদুল হক,কালীদাস কর্মকার থেকে শুরু করে বিপাশা হায়াত এবং সবার বয়সে ছোট এম,ডি টোকন। মাঝে আমি আর আমার শিল্পীবন্ধু তাজউদ্দিন আহমেদ ও ছিলাম এই কানাডায় বাংলাদেশি ৩৮জন শিল্পীর ঐতিহাসিক এই চিত্র প্রদর্শনীতে।

আমার ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ে ডেভিড সুজুকীকে উৎসর্গ করা  পেইন্টিং Tears of Nature-122 সবারচেয়ে বড় ছিলো ৫ফুট বাই ১৮ ফুট। প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিলো Art of A Young Nation: Bangladesh. তখন গ্যালারীর সাথে ছয় মাস আগে থেকে আমাদের মিটিং এ বসতে হতো। মাঝে মধ্যে তারা চাইতো বাংলাদেশে হাইকমিশনারের উপস্থিতি। তখন ছিলেন মান্যবর খলিল রহমান। যখনই চেয়েছি তিনি অটোয়া থেকে মিসিসাগা ছুটে এসেছেন। অনেকবার মিটিং এর আগে এসে পড়ায় সারওয়ার ভাইয়ের ডেনফোর্থ ফার্নিচার এর বেসমেন্টে আমার স্টুডিতে  চলে আসতেন।

আমি বাইরে থাকলে কল করে বলতেন – শিল্পী ভাই আপনার ছবির জগতে এসে বসে আছি,জলদি চলে আসেন। দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে এসে দেখি মজাসে নতুন সোফায় বসে কফি কুকিস খাচ্ছেন পি,এস কে নিয়ে ডেনফোর্থ ফার্নিচারের মেনেজার হোসেনের সাথে বসে। আসলে পৃথিবীর যে কোনো দেশে থাকুক না বাংলাদেশিরা প্রথম প্রজন্মের মগজে শাখা প্রশাখায় ছেয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশে-দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশনারতো অভিভাবক। তার দূতাবাসে কিংবা কনস্যুলেটে যারা কাজ করেন তাদেরও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি নিবেদিত থাকা উচিৎ।

আছেনও অনেকে আমাদের টরন্টো কনস্যুলেটেই আমার দেখা দুইজন আছেন বিদ্যুৎ ও নাহিদ। মাঝেমধ্যে গেলে দেখি।  প্রতি হপ্তা মাস বছর  অফিস টাইম এত মানুষের চাপ ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন এরা কি ভাবে সামলাম ঠান্ডা মাথায়।অবাক লাগে। আবার মনে হয় যিনি গোটা কনস্যুলেট কিংবা গোটা দূতাবাস সামলান তাদের অবস্থা মন মেজাজ সব পর্দায় ঢাকা থাকে।সামনে গেলে হেসে হাত বাড়িয়ে দেন। আসলে ওনারা আমাদের লোক আমাদের জন্যেই দূরান্তে দেশে আত্মীয় স্বজন সবাইকে ফেলে আছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com