রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

আরবের মরুভূমিও একসময় হ্রদ, নদী, বনে পূর্ণ ছিল

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
A beautiful view of tranquil desert under the clear sky captured in Morocco

বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক স্থানের মধ্যে একটি হচ্ছে আরব মরুভূমি। তবে এখানেও একসময় হ্রদ, নদী ও রেইনফরেস্ট বা সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্যে পূর্ণ ছিল বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

প্রায় ৯ হাজার বছর আগে এ অঞ্চলটিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সবুজ পরিবেশ ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষণায় এ বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। এজন্য ‘রুব আল খালি’ নামের এক মরুভূমি নিয়ে গবেষণা করেছেন তারা, যা ‘খালি কোয়ার্টার’ নামেও পরিচিত।

গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ জেনিভা’র অধ্যাপক ড. আবদাল্লাহ জাকি ও অধ্যাপক সেবাস্তিয়ান ক্যাসেলটর্ট। এতে আরও নেতৃত্ব দিয়েছেন সৌদি আরবের ‘কেএইউএসটি’র অধ্যাপক আবদুল কাদের আফিফি।

অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্রিফিথ’-এর অধ্যাপক মাইকেল পেট্রাগ্লিয়ারের সঙ্গে আরব মরুভূমির ভূমি ও এর প্রাচীন ইতিহাস গবেষণার জন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন তারা।

গবেষণায় একটি প্রাচীন হ্রদ, নদী, এমনকি প্রবাহিত পানির স্রোতের চিহ্নওয়ালা এক দীর্ঘ উপত্যকার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, এ মরুভূমি একসময় এমন এক অঞ্চল ছিল, যেখানে বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হত।

ড. জাকি বলেছেন, প্রায় ৯ হাজার বছর আগে হ্রদটির আকার ছিল বিশাল। গবেষকরা এটিকে ‘সবুজ আরব’ যুগ বলে বর্ণনা করেছেন। এই আর্দ্র সময়কাল স্থায়ী ছিল প্রায় ১১ হাজার থেকে ৫ হাজার পাঁচশ বছর আগে পর্যন্ত।

এ প্রাচীন হ্রদটি ছিল এক হাজার একশ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ও প্রায় ৪২ মিটার গভীর। অধ্যাপক ক্যাস্টেলটর্ট বলেছেন, ওই সময় এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ার কারণে হ্রদটির আকার এত বড় হয়ে উঠেছিল, যার ফলে শেষ পর্যন্ত এর ভেতরের পানি উপচে পড়েছে।

হ্রদটির পানি উপচে পড়ার কারণে তা ওই অঞ্চলে এক বিশাল বন্যার সৃষ্টি করে। আর এই বন্যার ফলে মরুভূমিতে তৈরি হয় দেড়শ কিলোমিটার দীর্ঘ উপত্যকা।

গবেষণা দলটি বলছে, ওই সময় এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল আফ্রিকার মৌসুমি বায়ুর কারণে, যা লোহিত সাগরের ওপার থেকে নিয়ে এসেছিল আর্দ্রতা। অঞ্চলে পাওয়া মাটি ও পলির ধরনের মাধ্যমে এ ধারণাটির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা, যা এর কাছাকাছি ‘আসির’ পর্বতমালা থেকে আসা বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মেলে।

প্রাচীন মানব জীবন নিয়ে গবেষণা করেন অধ্যাপক পেট্রাগ্লিয়া বলেছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সেই সময়ে সেখানে বসবাসকারী মানুষের ওপর এর বড় প্রভাব পড়েছে। হ্রদ, নদী ও বিভিন্ন সবুজ তৃণভূমির এমন পরিবেশ আকৃষ্ট হতে পারত শিকারী, সংগ্রহকারী ও প্রাথমিক কৃষকদের। এমন পরিবেশ বেঁচে থাকার পাশাপাশি আরও সহজে অন্যান্য অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ ছিল এসব গোষ্ঠীর।

তবে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাটি আবার শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং আরও পানির খোঁজে অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হন তারা।

গবেষকরা বলছেন, এসব কারণে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক যাযাবর গোষ্ঠী এই নতুন ও কঠোর মরুভূমির অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

কেবল পরিবেশ কতটা বদলেছে তা নয়, বরং প্রাচীন মানুষ কীভাবে তাদের আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল সে বিষয়টিও উঠে এসেছে এ গবেষণায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com