1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
আমেরিকা সম্পর্কে জানা অজানা কিছু তথ্য
শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

আমেরিকা সম্পর্কে জানা অজানা কিছু তথ্য

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

আমেরিকা, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। অর্থনীতি, সামরিক, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, শিল্প, বানিজ্য সবক্ষেত্রেই সবচেয়ে এগিয়ে আমেরিকা। কিন্তু আজকে আমরা যে আমেরিকা, অর্থাৎ উন্নত, শক্তিশালী, আগ্রাসী, আধিপত্যকামী আমেরিকাকে দেখি, সেই আমেরিকা কিন্তু সবসময় আজকের মতো ছিল না। একটা সময় ছিল, যখন আমেরিকা ছিল বিশ্বরাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন, নিরীহ একটি দেশ। চলুন আজকে বিচ্ছিন্ন, নিরীহ দেশ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে পরিনত হওয়া আমেরিকা সম্পর্কে জানা অজানা কিছু তথ্য জেনে নেই।

আমেরিকা পরিচিতি

আমেরিকার পুরো নাম ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা (USA) যা যুক্তরাষ্ট্র নামেও পরিচিত। ইতালীয় আবিষ্কারক ও মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে দেশটির নাম হয় “আমেরিকা”। এটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত। দেশটি ৫০টি রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া নিয়ে গঠিত। আমেরিকার রাজধানীর নাম ওয়াশিংটন ডিসি এবং সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্ক। দেশটির প্রধান ভাষা ইংরেজি। তবে স্প্যানিশ, চাইনিজ, ফ্রেঞ্চ ভাষার ব্যবহারও লক্ষণীয়। আমেরিকার মুদ্রার নাম আমেরিকান ডলার। এই আমেরিকান ডলার বাংলাদেশী টাকার তুলনায় অনেক শক্তিশালী। ১ আমেরিকান ডলার সমান বাংলাদেশের প্রায় ৮৪.৫ টাকা [জুন, ২০২০]।

আমেরিকার ইতিহাস

হাজার হাজার বছর ধরে আমেরিকায় বিস্তৃির্ন সমভূমি জুড়ে স্থানীয় মানুষেদের বসবাস ছিলো। ধারণা করা হয় কমপক্ষে ১২,০০০ বছর আগে সাইবেরিয়া থেকে মানুষের আগমন ঘটে আমেরিকাতে। কিছু কিছু গবেষণায় ১২ হাজার বছরের আগেও আমেরিকাতে মানুষের বাস ছিল বলে দাবী করা হয়। যাই হোক, সময়ের সাথে সাথে আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতি জটিল হয়ে উঠল এবং কিছু কিছু আদিবাসী মিসিসিপির সংস্কৃতি হিসাবে কৃষি, স্থাপত্য এবং রাজ্য-সদৃশ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।

আদিবাসী আমেরিকানদের সাথে ইউরোপীয়দের প্রথম পরিচয় হয় যখন বিখ্যাত ইউরোপীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালের ১৯ নভেম্বর আমেরিকা অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোতে আসেন। আর ক্রিস্টোফার কলম্বাস সমুদ্রযাত্রার উদ্যোক্তা হিসাবে, স্পেনই প্রথম ইউরোপীয় শক্তি যারা আমেরিকায় ঘাঁটি স্থাপন করে এবং উপনিবেশ স্থাপন করে। এরপর আসে পর্তুগীজরা। পর্তুগীজরা আমেরিকায় বেশ প্রভাব ফেলে। এরপর ১৪৯৭ সালে স্প্যানিশ এবং পর্তুগীজদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমেরিকায় পৌঁছায় ব্রিটিশরা। প্রথমদিকে সফল না হলেও একপর্যায়ে ব্রিটিশরা উত্তর আমেরিকার পূর্বাংশ, ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অংশই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। পরে ফ্রেঞ্চ এবং ভারত যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ফ্লোরিডা এবং কিউবেকেও নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধ

ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধ (American Revolutionary War) ই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম সফল উপনিবেশিক যুদ্ধ। এরপরে অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, ব্রিটিশদের একচেটিয়া ব্যবসা, নিজ অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা, জাতীয়তাবোধ প্রভৃতি কারনে তারা ব্রিটিশদের প্রাধান্য অস্বীকার করতে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়। এরপর ১৭৭৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিটিশদের কাছ থেকে বোস্টনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তবে স্বভাবতই ব্রিটিশরা এই স্বাধীনতা মেনে নেয়নি। তাই এরপরেও আরো কিছু যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কিন্তু ১৭৮৩ সালে ভার্সাই নগরে ফ্রান্স, স্পেন ও আমেরিকার সাথে ইংল্যান্ডের ভার্সাই সন্ধির মধ্য দিয়েই ইংল্যান্ড আমেরিকার স্বাধীনতাকে চূড়ান্তভাবে স্বীকার করে নেয়।

আমেরিকার আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থা

আমেরিকার আয়তন প্রায় ৯৮,২৬,৬৭৫ বর্গকিলোমিটার (৩৭,৯৪,১০০ বর্গমাইল)।  দেশটির পশ্চিম দিকে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব দিকে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত কানাডার সাথে এবং দক্ষিনাঞ্চলে রয়েছে মেক্সিকো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে প্রায় দুইগুন বড় দেশটির পশ্চিমাঞ্চল পাহাড়ী এবং মধ্যাঞ্চল সমতল। দেশটির সর্বোচ্চ স্থান হলো ম্যাকিনলে পর্বতের চূড়া যা উচ্চতায় প্রায় ৬ হাজার ১শ ৯৮ মিটার যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮৬ মিটার গভীর।

আমেরিকার ভৌগলিক অবস্থা খুবই বৈচিত্রময়। বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, মরুভূমি সবই আছে আমেরিকাতে। ভূমির মতো প্রাণীজগতেও দেখা যায় বৈচিত্রতা। আমেরিকায় পাওয়া যায় কালো ভাল্লুক, হরিন সদৃশ গৃজলি, মেরু অঞ্চলের শ্বেত ভাল্লুক ইত্যাদি। এখানে ২০০০০ প্রজাতির বেশি ফুল পাওয়া যায়। আর আমেরিকার জাতীয় পাখি এবং প্রতীক হলো ঈগল।

আমেরিকার রাজনীতি

আমেরিকা বিশ্বের ২য় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। প্রতি ৪ বছর পরপর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদি কেউ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর আমেরিকায় অবস্থান করতে হবে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ৩৫ বছর।

নাগরিকদের সরাসরি ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। বরং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি হলো পরোক্ষ। প্রথমে জনগণ ভোট দিয়ে ইলেক্ট্রোরাল কলেজ ভোট বা নির্বাচকমণ্ডলী নির্বাচিত করেন। প্রতিটি রাজ্যে বরাদ্দকৃত ইলেক্ট্রোরাল ভোটের সংখ্যা সেই রাজ্যে জনপ্রতিনিধি ও সিনেটরের সংখ্যার সমান থাকে। গোটা আমেরিকায় মোট ইলেক্ট্রোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি যার মধ্যে শুধু ক্যালিফোর্নিয়াতেই রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চাইলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্ট্রোরাল ভোট পেতে হবে।

রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম ডেমোক্রাটিক পার্টির জো বাইডেন
রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম ডেমোক্রাটিক পার্টির জো বাইডেন

আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ট্রাম্প ছিলেন রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত। তিনি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ৫৮তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার নিকটতম ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিটন কে পরাজিত করেন। এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প পান ২৭৯টি ইলেকটোরাল কোলাজ ভোট এবং হিলারি ক্লিনটন পান ২১৮টি ইলেকটোরাল কোলাজ ভোট। ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তেসরা নভেম্বর। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়বেন ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন।

আমেরিকার অর্থনীতি
আমেরিকার অর্থনীতি
আমেরিকার অর্থনীতি

আমেরিকার অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি। আমেরিকার জিডিপি বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ২৪ শতাংশ। আমেরিকার ওপর বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। কারন আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পণ্য আমদানিকারক এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য অংশীদার হল কানাডা, চীন, ভারত, মেক্সিকো, জাপান এবং জার্মানি।

১৯ শতক থেকেই আমেরিকায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অর্থনীতি রয়েছে যাতে আছে বিশেষত কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং চিকিৎসা সেবা, মহাকাশ, এবং সামরিক সরঞ্জাম ইত্যাদি। গুগল, অ্যাপল, ফেসবুকটুইটার, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, আইবিএমইন্টেলটেসলা ইত্যাদি বড় বড় টেক জায়ান্টরা আমেরিকার অধীনেই। যার কেন্দ্র হল সিলিকন ভ্যালি। আমেরিকার অর্থনীতির অন্যান্য মূল কারনগুলো হল পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্টিল, মোটর যানবাহন, রাসায়নিক, টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ রপ্তানি, কাঠ, খনন, প্রতিরক্ষা ও সামরিক সরঞ্জাম, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য প্রযুক্তি, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক পরিষেবা ইত্যাদি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com