নানা জীববৈচিত্র্যে আর ঘন জঙ্গলে ঘেরা আমাজন নদী। এই নদীর অন্যতম এক রহস্য বলা যায় পিরানহা মাছ। এরই মধ্যে যা আমাজন ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্যান্য সাগর-নদীতে। মানুষের ভয় ও কৌতূহলের কারণও বটে রাক্ষুসে এই মাছ।
বিশেষ করে পিরানহার ধারালো দাঁত এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য এর চর্চা সর্বত্র। এমনকি পিরানহাকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নানা গল্প, চলচ্চিত্র। হলিউডের চলচ্চিত্র এবং সাহিত্যে প্রায়শই পিরানহাদের অতিমাত্রায় ভয়ংকর রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। তাদের আক্রমণাত্মক প্রকৃতি এবং তীক্ষ্ণ দাঁতের কারণে আমাদের কল্পনায় পিরানহা এক ভয়ংকর স্থান দখল করে আছে।
কিন্তু এই মাছ সম্পর্কে বাস্তব তথ্য জানলে চলচ্চিত্র ও লোককথায় শোনা গল্প বাড়িয়ে বলাই মনে হবে। পিরানহা মাছের আনুমানিক ৩০ থেকে ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। যাদের প্রধান আবাসস্থল আমাজন নদী। সচরাচর পিরানহার গায়ের রং কিছুটা লালচে ও ধুসর বর্ণের। এদের দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়, তবে কিছু প্রজাতি ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। এরা ঝাঁক বেঁধে শিকার করতে ভালোবাসে।
পিরানহাদের দেহ চ্যাপ্টা ও শক্তিশালী। দাঁত তীক্ষ্ণ ও ধারালো যা শিকারের দেহ নিমেষেই ছিন্নভিন্ন করতে পারদর্শী। অনেকের ধারণা, পিরানহা শুধু মাংসাশী। তবে বাস্তবে এদের খাদ্যাভ্যাস বৈচিত্র্যময়। অধিকাংশ পিরানহা উদ্ভিদ, ফলমূল, ছোট মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীসহ সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে।
পিরানহা মাছের মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণের কাহিনি অনেকাংশে অতিরঞ্জিত। প্রকৃতপক্ষে পিরানহা মানুষের প্রতি এতো আগ্রাসী হয় না। তবে খাদ্যে সংকট বা নিজ এলাকা রক্ষার স্বার্থে আক্রমণাত্মক হতে পারে। এছাড়াও প্রজনন মৌসুমে নিজেদের ডিম রক্ষার জন্য আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে।
শুধু আমাজন নদীর বাস্তুসংস্থানের জন্য নয়, পিরানহা মাছ স্থানীয় মানুষের জীবনেও প্রভাব ফেলে। স্থানীয় জেলেরা তাদের জীবিকার তাগিদে পিরানহা মাছ ধরে। আমাজন নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্য এই মাছ গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিবিসি আর্থ, এনিম্যাল প্ল্যানেট, উইকিপিডিয়া