রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

আপনি কি সরাসরি কানাডার সিটিজেন হবার আবেদন দাখিল করতে পারেন

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩

একজন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) হিসেবে আমি যখন বলি- এভাবে সরাসরি কানাডার সিটিজেন হবার আবেদন দাখিল করা যায় না, তখন আমার উত্তর শুনে তারা আঁতকে উঠেন। তাই, কানাডার পিআর এবং সিটিজেন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে এ লেখায় প্রয়াস চালিয়েছি।

কানাডার পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট (পিআর) বা স্থায়ী বাসিন্দা বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি কানাডার মাটিতে পা রেখেছেন এবং যাকে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস বা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী বাসিন্দারা কানাডার নাগরিক নন, অন্য কোনও দেশের নাগরিক বা সিটিজেন।

কানাডার নাগরিক হওয়ার আগে একজন বিদেশি নাগরিককে প্রথমে কানাডার পিআর হতে হবে। সাধারণভাবে, কেউই সরাসরি কানাডার সিটিজেন হতে পারেন না। পিআর স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কানাডা পিআর কার্ড ইস্যু করে থাকে। পিআর কার্ডকে এক অর্থে আমেরিকার গ্রিন কার্ডের কানাডিয়ান রূপ বা ভার্সন বলা চলে। পিআর কার্ডের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে যা উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই, তা নবায়ন করতে হয়। অর্থাৎ, এটি কোন স্থায়ী ডকুমেন্ট নয়।

কানাডায় পিআর স্ট্যাটাস অর্জনে সক্ষম হলে আপনি যেসব সুবিধা ভোগ করার অধিকার পাবেন: স্বাস্থ্যসেবা কভারেজসহ কানাডিয়ান নাগরিকদের মতো সকল সামাজিক সুযোগ-সুবিধাভোগ; কানাডার যেকোনও প্রদেশ বা অঞ্চলে বসবাস করা, কাজ করা, বা লেখাপড়া করার সুযোগ; কানাডিয়ান আইন, অধিকার ও স্বাধীনতার সনদ অনুসারে সুরক্ষাপ্রাপ্তির সুবিধা; পিআর হিসেবে বসবাসের নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তির পর কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের অধিকার।

অপরদিকে, একজন কানাডিয়ান স্থায়ী বাসিন্দা বা পিআর যেসব কাজ করতে পারেন না তা হলো: কানাডার নির্বাচনে ভোট দেওয়া, বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া; কিছু সরকারি চাকরি যেখানে উচ্চ-স্তরের সুরক্ষা ছাড়পত্রের (হাই লেভেল সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) প্রয়োজন হয় সেসবের প্রার্থী হওয়া। এছাড়া, কানাডার বাইরে বেড়াতে বা কাজে গেলে পুনরায় কানাডা প্রবেশের সময় একজন পিআর অগ্রাধিকার (প্রিভিলেজ) পেতে পারেন, তবে, তাকে কানাডায় প্রবেশ করতে দিতে কানাডা সরকার বাধ্য নয়।

ক্রিমিনাল হিস্ট্রি, কানাডার নিরাপত্তা বা এজাতীয় কোন গুরুতর কারণে সন্দেহ হলে ইমিগ্রেশন অফিসার একজন পিআর এর কানাডায় পুনর্প্রবেশ প্রয়োজনে আটকে দিতে পারেন; মেয়াদোত্তীর্ণ পিআর কার্ড দিয়েও একজন পিআর কানাডায় পুনর্প্রবেশ করতে পারেন না।

কানাডায় পিআর স্ট্যাটাস গ্রহণের পর তা বজায় রাখতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। যেমন, একজন পিআর-কে সাধারণভাবে প্রতি পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে কানাডায় সশরীরে অন্তত দুই বছর বসবাস করতে হয়। এর কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। যেমন, একজন পিআর তার কানাডিয়ান নাগরিক স্বামী, স্ত্রী, কমন-ল পার্টনার, পিতা বা মাতার সাথে একত্রে কানাডার বাইরে যেটুকু সময় কাটাবেন সেই সময়টা তিনি কানাডায় বসবাস করেছেন বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া, একজন পিআর যদি কোনও কানাডিয়ান ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে কানাডার বাইরে অবস্থান করেন সে সময়টুকুও তিনি কানাডায় বসবাস করেছেন বলে গণনা করা হয়। আরেকটি বিষয় হলো, কানাডার সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুনগুলো যথাযথভাবে মেনে না চললে পিআর স্ট্যাটাস হুমকির মুখে পড়তে পারে, তবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিআর স্টেটাস রহিত হয়ে যায় না।

পিআর স্ট্যাটাস ত্যাগ বা রহিত করতেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে এ লেখা শেষ করবো। কানাডিয়ান সিটিজেন হতে হলে একজন অভিবাসীকে প্রথমে কানাডার পিআর হতে হয়। আগেই বলেছি, কানাডার পিআর-রা ভিন্নদেশের পাসপোর্টের মালিক, কানাডার নয়। কানাডিয়ান পাসপোর্ট পেতে হলে প্রথমে কানাডার সিটিজেন বা নাগরিক হতে হয়। পিআর হিসেবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কানাডায় সুনাগরিক হিসেবে বসবাসের পর আরও কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে একজন পিআর কানাডার সিটিজেন হবার আবেদন দাখিল করতে পারেন।

সিটিজেনশিপের আবেদন অনুমোদিত হলে কানাডার প্রতি আনুগত্যের শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে কানাডার নাগরিকত্বের সনদ দেওয়া হয়। একজন কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী পৃথিবীর প্রায় সব দেশ ভিসা ছাড়াই ভ্রমন করতে পারেন, যা একজন কানাডিয়ান পিআর নাও পারতে পারেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অনেকে বলে থাকেন, কানাডায় গিয়ে সিটিজেন যারা হয় তারা সেদেশের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন বা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। বাস্তবে কানাডায় দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে কিছু নেই; এটা স্রেফ অপপ্রচার। বাস্তবতা হলো, কানাডার নাগরিক হিসেবে আপনি সরাসরি কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ যে কারো প্রকাশ্য সমালোচনা করতে পারবেন, বা মন চাইলে কারো বিকৃত ছবিও আঁকতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে কেউ আপনি কোন দেশে জন্মগ্রহণ করে কানাডায় এসেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না; কারণ, ফ্রিডম অব স্পিচ আপনার নাগরিক অধিকার।

যাক, এ লেখা আর দীর্ঘ না করি। কানাডায় পড়াশোনা, বা ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোনও বিশেষ প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচের ইমেইল ঠিকানায় জানাতে পারেন। পরের কোনও লেখায় আপনার আগ্রহের প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস থাকবে। এছাড়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিয়মিত চোখ রাখুন কানাডা ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার লেখা পড়তে। ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের আগ্রহ নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।

লেখক:এম এল গনি কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com