বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

আন্দামান ভ্রমন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

প্লেন থেকে নেমেই সমুদ্রশহর পোর্ট বেøায়ার। ক্লান্তি কাটিযে বিকেলেবেলায় সেলুলার জেল। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখতেই হবে। জীবন্ত হয়ে উঠবে বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, বীর সাভারকর, আরও অজ¯্র বিপ্লবীর যন্ত্রণার গাথা। পরদিন সকালে উঠেই জেল দেখতে যাওয়া। আশ্চর্য গঠনশৈলী। জেলখানার ছাদে উঠলে বোঝা যাবে, এটি আসলে সাত ডানাবিশিষ্ট তারামাছের মতো।

সহকারী গাইড বলে যাবে, সাতটি উইংয়ে মোট সেলের সংখ্যা ৬৯৬। প্রতিটি সেলের আয়তন সাড়ে তেরো বাই সাড়ে সাত ফুট।
সামনে মোটা গরাদ, ভারী তালা। পিছনের দেওয়ালে ন’ফুট উচুঁতে তিন ফুট বাই এক ফুট জানালা। এই ছোট্ট ঘরেই হয়তো ঝরে
গিয়েছে কত বন্দি বিপ্লবীর জীবনের স্বপ্ন। জেলের বিশেষত্ব হল, কোনও বন্দি কাউতে দেখতে পেত না। জেলের সামনে ফাঁসিমঞ্চ। অত্যাচারের চরম নিদর্শন। এখনও খুজঁলে হয়তো পাওয়া যাবে লোহার ত্রিকোণ ফ্রেমে চাবুকের দাগ। এখন সাতটির জায়গায় তিনটি বøক অবশিষ্ঠ। ভারী হয়ে আসে মন।

গাইডের গল্পে জানতে পারি শুধু ব্রিটিশরা নয়, ১৯৪৪ সালের ৩০ জানুয়ারি জাপানিরা ৪৪ জনকে সেলুলার জেল থেকে বার করে, কিছুদূরে নিয়ে গিয়ে তাদের দিয়ে ‘এল’ সাইজের গর্ত খোঁড়ায়। তারপর সবাইকে গুলি করে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেয়। ঝোড়ো হাওয়া জেলের দেওয়ালে ধাক্কা মারছে। জেল কম্পাউন্ডের ভিতরে প্রাচীন অশ্বথ গাছের তলায় দাঁিড়য়ে শুনতে পাচ্ছি
প্রকাÐ এক ভোঁ দিয়ে জাহাজ বোঝাই স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী বন্দির দল মূল ফটক দিয়ে জেলে ঢুকছে। মন খারাপ। চলে এলাম সমুদ্র তীরে। র্কাবাইন বিচ। ওয়ান্ডুরের সৈকত। মেরিন মিউজিয়মও দেখার মতো। রয়েছে জলি বয় আইল্যান্ড। স্বচ্ছ জলের সমুদ্র। ভিজে বালির সৈকতে বসে মনে হল, উল্টোদিকে কালচে ঘন সবুজ জঙ্গলে লুকিয়ে আছে সবুজ দ্বীপের রাজা।

বেরিয়ে পড়ল বলে! জারোয়াদের দেশেঃ রাত্রে ঘুমনোর আগে হোটেলের মিষ্টি মেয়েটি এসে বলে গেল, “কাল কিন্তু ভোর তিনটায় রেডি হয়ে নেবেন।” জঙ্গলের পথ। লাইন দিতে হবে। ফর্ম ফিল-আপের ঝক্কি। কপাল ভাল থাকলে জংগি পথে জারোয়াদেও দেখা মিলতে পারে। তারপর লাইমস্টোন কেভ, মাড ভলক্যানো। সারাদিনের ঘোরাঘুরি। রাত দুটোয় উঠে প্রস্তুতি নিলাম।
ঘুমচোখে গাড়িতে উঠে যখন ঘুম ভাঙল পুবের আকাশ লাল। সামনে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলে প্রবেশপথের সামনে প্রশাসনিক ভবন। সামনে এবং পিছনে রক্ষীদের গাড়ি। ওভারটেক, ফোটা তোলা বারণ।

রাস্তায় কোথাও থামা যাবে না। নামানো যাবে না গাড়ির কাচ। গাড়ি চলেছে জঙ্গল ভেদ করে। বাধাঁনো পিচের রাস্তা উঁচু-নিচু। চুপ করে জানালায় চোখ রেখে বসে আছি। হঠাৎ দেখা মিলল। জনাচারেক জারোয়া। তির- ধনুক নিয়ে রাস্তার ধারে। গল্প করছে বোধহয়। গাড়ি গিয়ে যেখানে থামল, সেখানে একটা নদী। চারপাশে ঘন ম্যানপ্রোভ। কাছাকাছি যেতেই গাইড সাবধানবাণী শোনাল, জলের বেশি কাছে যাবেন না। সামুদ্রিক কুমিরের উপদ্রব আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে এল একটা প্রকাÐ বার্জ। নদী পেরিয়ে যেখানে পৌঁছলাম, সেখানে অজ¯্র বোট অপেক্ষায়। এক-একটা বোটে আটজন। দৌড়ে গিয়ে লাইন দিয়ে কাটতে হল টিকিট। তারপর গভীর কালো জলের নদীতে ঢেউয়ের ¯্রােতে ভেসে পড়া। গন্তব্য, লাইমস্টোন কেভ। বোট এসে যেখানে
থামল, সেখান থেকে সুন্দর কাঠের সুদীর্ঘ ব্রিজ পেরিয়ে কাদাজল মাখা রাস্তায় বনের পথে হাটঁতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম লাইমস্টোন কেভে। গুহার ভিতরে ঘন অন্ধকার। টর্চলাইট জ্বালিয়ে যে আর্শ্চয প্রকৃতির কারুকাজ দেখলাম, তা লিখে এবং ছবিতে বলা অসম্ভব।

গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছি। হাটঁতে হাটঁতে পৌঁছে গিয়েছি মাড ভলক্যানোর কাছে। ফিরতি পথে বৃষ্টি। ভয় লাগছে যদি বোট উলটে জলে পড়ি। যা হোক, ফিরে আসা গেল নিরাপদে। জঙ্গল পেরনোর পথে আবার দেখা মিলল জারোয়াদের। রাতে হোটেলে ফিরেই ঘুমোতে যাচ্ছি, রিসেপশনের সুন্দরী বলল, কাল কিন্তু হ্যাভলক।

হ্যাভলক, অপরূপা নীলঃ সকালবেলায় জাহাজ। গ্রিন ওশান। প্রমোদভ্রমন করতে করতে এসে নামলাম হ্যাভলক। সুমদ্রসৈকতের স্বর্গরাজ্য। অনেক সৈকতের মধ্যে মনোরম বিচ রাধানগর। চারপাশে অজ¯্র বাঙালি খাবারদাবার। পূর্ণিমা রাত। পাশের হোটেলের ছেলেটি গল্প করছিল, ২০০৪ সালে সুনামির ভয়াবহতা। রিসর্টের বাইরে, ইজিচেয়ারে বসে জলের দিকে তাকিয়ে মনে হল, সমুদ্র সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর। সাদা-নীল

জলের মায়াবি শব্দে ঘুমিয়ে পড়লাম। একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন, পোর্ট বেøয়ার থেকে হ্যাভলক, জাহাজে যাতায়াতের টিকিট সুনিশ্চিত না হলে সমস্যায় পড়তে পারেন। হ্যাভলক থেকে সোজা নীল আইল্যান্ড। অনেকে এটাকে কোরাল
ক্যাপিটাল অফ আন্দামান বলে থাকেন। সৌন্দর্যে অপরূপ কোরাল রিফ দেখা যায় এখানে। ছবি তোলার আর্দশ জায়গা।

রস আইল্যান্ড- প্যারিস অফ দি ইস্টঃ ছোট্ট জাহাজে যেখানে এসে ভিড়ল, সেখানে প্রকৃতির রূপ ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। অজ¯্র হরিণ চরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আইল্যান্ড।

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় আন্দামানের রাজধানী ছিল রস আইল্যান্ড। ভাঙাচোরা ভৌতিক বাড়িঘর। স্যার ড্যানিয়েল রস,
ব্রিটিশ মেরিন সার্ভেয়ারের নামে এই দ্বীপ। শোনা যায়, ১৮৫৭-ও সিপাহি বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের সাজা হিসেবে রাখা হয়েছিল
এই নির্জনতম দ্বীপে। ব্রিটিশ শাসনে এখানে ছিল বাজার-দোকান, রুটির কারখানা, ছাপাখানা, হাসপাতাল এমনকী টেনিস কোর্ট,
সুইমিং পুলও। আমেদ-প্রমোদেও জন্য ছিল ওপেন এয়ার থিয়েটার এবং নাচের বলরুম। ১৯৪১। ভয়াবহ ভূমিকম্প। ১৯৪২। জাপানিরা দখল করল রস আইল্যান্ড। ১৯৪৩-এর ডিসেম্বরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র নামলেন এই দ্বীপে। উত্তোলন করলেন ত্রিবর্ণ পতাকা। দ্বীপের ভিতর দিয়ে হাটঁছি।

জীবন্ত হয়ে হাটঁছি। জীবন্ত হয়ে উঠেছে ইতিহাস। সি স্পোর্টস, নর্থ বে আইল্যান্ডেঃ, স্কুবা ডাইভিং, সি- ওয়াকিং- এই সব রোমাঞ্চকর খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে নর্থ বে আইল্যান্ডে। এক বিশেষ ধরনের মাস্ক এবং ডুবুরির পোশাক পরে প্রথমে অগভীর জলে, পরে অতল জলের আহŸান। রং-বেরংয়ের কোরাল আর সামুদ্রিক মাছের দেখা মিলতে পারে। যারা এই সাহসী খেলার
অভিযানে নেই, তাদের জন্য রয়েছে গøাস বোট এবং সাবমেরিন ঘোরার ব্যবস্থা। বোটের তলাটি পুরো কাচের। সেখানে চোখ
রেখে দেখা যেতে পারে সমুদ্রতলের কোরাল দেশ। সাবমেরিন বিষয়টি বেশি আরামের। কেবিনে বসে চা-কফি খেতে খেতে পায়ের তলার কাচের ভিতর দিয়ে কোরাল দেখার আনন্দ। মাঝারি সাইজের বোট আপনাকে পৌঁছে দেবে নর্থ বে আইল্যান্ডে। সেখানে খেলাধুলার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়াও করতে পারেন জমিয়ে।

আন্দামানঃ এই নামটি প্রায়ই শুনতে পারেন। আন্দামানের একদম দক্ষিণে। নিকোবর থেকে টেন ডিগ্রি চ্যানেল নামের
জলরাশিতে বিভাজিত। টাকা, সময়, অভিযানের ইচ্ছে থাকলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ঘন জঙ্গলে ঢাকা খাড়িঁর মধ্যে দিয়ে নৌকো চালানো এবং চিরহরিৎ রেন ফরেস্টের সৌন্দর্য দেখার এ এক আদর্শ পাঠস্থান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com