আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (Andaman Islands) নীলপানির দ্বীপ নামে খ্যাত। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ৫৭২টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে নিকোবর ও আন্দামান আইল্যান্ড গঠিত হয়েছে। এখানে মোট স্থল ভূমি ৮২৪৯ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বনভূমি ৭০৯৮ বর্গ কিলোমিটার। সামুদ্রিক তটরেখা ১৯৬২ কিলোমিটার। এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.১ সেন্টিগ্রেড এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬.৭ ডিগ্রি। এই দ্বীপপুঞ্জের এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখি নিয়ে। ব্রিটিশদের কাছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জটি কালাপানি নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে নীল পানির দীপ হিসেবে পরিচিত। এখানে চারদিকে শুধু নীল জলরাশি।
এখানে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের অরণ্য আর রূপালী বালুকাবেলা। নারিকেল গাছের ছায়ায় নিরব এই দ্বীপপুঞ্জের কোথাও কোথাও দেখা যাবে হরিণের দল। বিশাল এই নীল জলরাশির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রঙের প্রবাল ও বিভিন্ন রঙের মাছ। বঙ্গোপসাগরের কিছু উত্তরে দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান দ্বীপ যার রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার। আরো কিছু দক্ষিণের দ্বীপ নিয়ে গঠিত নিকোবর যারা রাজধানী কার নিকোবর। পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও নিকোবর আইল্যান্ডের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বীর সাভারকার বিমানবন্দর যা দেখতে ছোট কিন্তু ছিমছাম। নিকোবর ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণ পর্যটকদের জন্য সরকারি কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে, তাই নিকোবর ভ্রমণ বন্ধ।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যা যা দেখার রয়েছে
এই দ্বীপপুঞ্জে আছে ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ব্যারেন আইল্যান্ড এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি জড়ানো সেলুলার জেল ও ভাইপার দ্বীপ। এই সুন্দর গুছানো শহর গড়ে উঠেছে চারদিকে পাহাড় ও সমুদ্রের বেষ্টনীর কারনে। ১৪ তলার একটি লাইট হাউস রয়েছে ভাইপার দ্বীপে। এই ১৪ তলা বেয়ে লাইট হাউসের উপরে উঠলে আপনি সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেখানের কিছু দ্বীপ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য দেওয়া হলো আপনারা চাইলে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।
হ্যাভলক আইল্যান্ড
হ্যাভলক দ্বীপ হল আন্দামান দ্বীপ-পুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। ২০০৪ সালের টাইম ম্যাগাজিনের মতে এই বীচ ছিল “বেস্ট বীচ ইন এশিয়া”। হ্যাভলক আইল্যান্ড পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ব্রিটিশ জেনারেল স্যার হেনরি হ্যাভলকের নাম অনুসারে এই দীপের নামকরণ করা হয়েছিল। অর্ধচন্দ্রাকৃতির বীচে শেতোশুভ্র রুপালি বালু চিকচিক করতে থাকে এবং সমুদ্রের তীরে রয়েছে অসংখ্য নারিকেল গাছের সাড়ি।
লং আইল্যান্ড
ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য অন্যতম ভ্রমণের স্থান হচ্ছে লং আইল্যান্ড। এই লং আইল্যান্ডে গেলে অনেক ডলফিন এর দেখা পাবেন। সেখানে গেলে দেখতে পারবেন বালুময় সৈকত ও ডলফিনদের রক্ষণাবেক্ষণ।
রস আইল্যান্ড
রস আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট্ট দ্বীপ যেখানে মটর বোটে ১০ মিনিটে যাওয়া যায়। রস আইল্যান্ডে জীবন যাপনের উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য সে সময়ে এই দ্বীপ তখন “প্যারিস অব ইস্ট “নামে পরিচিত ছিল। এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে। এই দ্বীপে তখনকার উন্নত জীবনযাপন ব্যবস্থাপনার অংশ এখনো কিছু দৃশ্যমান রয়েছে যেমন- ছাপাখানা, সুইমিং পুল, বেকারি, পানি শোধনাগার, ক্লাব, চার্চ,ডিজেল জেনারেটর ও উন্মুক্ত মঞ্চ দেখে এখনো কিছু উপলব্ধি করা যায়।
নীল আইল্যান্ড
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের নীল দ্বীপ তার জীবন্ত প্রবালের জন্য বিখ্যাত। এই দ্বীপের সৈকতে ছড়িয়ে আছে অজস্র সাদা প্রবাল। এই দ্বীপের তীরে বিভিন্ন রঙের ঝিনুক ও ছোট শাখা ছড়ানো আছে। দ্বীপের এসব কিছু সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ রয়েছে। এই দ্বীপের মধ্যে রয়েছে কোরাল ব্রিজ। এখানের স্বচ্ছ পানিতে প্রবাল ও নানা রঙের মাছ দেখার দৃশ্য আপনার সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এগুলো ছাড়াও আরো আইল্যান্ড রয়েছে যেমন- লিটল আন্দামান, নর্থ বে আইল্যান্ড, কচল আইল্যান্ড, এলিফ্যান্ট বীচ, কালা পাথর বীচ, বিজয়নগর বীচ।
প্রবেশ অনুমতি
ভারতের রেস্ট্রিকশন এরিয়ার মধ্যে একটি হচ্ছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। আন্দামান প্রবেশের জন্য এখানে সব পর্যটকদেরই বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। এখানে নির্দিষ্ট কাউন্টারে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি ফরম পূরণ করে অনুমতি পেতে পারবেন। আপনি এয়ার বা নৌ যে রুটেই আসেন না কেন আপনি পারমিশন নিতে পারবেন আর আপনাকে পারমিশন নিতে হবে। আন্দামান এয়ারপোর্ট বা সী পোর্টে ও আপনি এই অনুমতি নিতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বিমানের মাধ্যমে গেলে দুই ঘন্টা সময় লাগবে। আর সমুদ্রপথে জাহাজে করে যেতে চাইলে আন্দামান পৌঁছতে চারদিন সময় লাগবে। জাহাজে করে বিশাখাপত্তন ও চেন্নাই থেকে ও আন্দামান যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশাখাপত্তন থেকে মাসে একটি জাহাজে আন্দামান যায়। কলকাতা ও চেন্নাই থেকে মাসে তিন থেকে চার বার পোর্ট ব্লেয়ার গামী জাহাজ চলাচল করে।সুতরাং এখান থেকে যেতে চাইলে আপনাকে এক মাস আগে টিকিট সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড অফিসের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার নিম্নে দেয়া হলো:
★ মুম্বাই অফিস: এপিকে হাউস, পঞ্চম তলা, ডিনসা ওয়াচা রোড, মুম্বাই – ৪০০০২০,ফোন -০২২২২৮২- ৩৩১৬, ০২২২২- ৮২২১০১।
★ কলকাতা অফিস: শিপিং হাউস, ১৩ স্ট্যান্ড রোড কলকাতা – ৭০০০০১, ফোন- ০৩৩২২৪৮- ২৩৪৪৫, ২২৪৮-৮০১৩।
★ চেন্নাই অফিস: জওহর বিল্ডিং, রাজাজি সান্দাই, চেন্নাই- ৬০০০০১, ফোন- ০৪৪২৫২- ৩১৪০১।
★ পোর্ট ব্লেয়ার অফিস: আবেরদিন বাজার, পোর্ট ব্লেয়ার- ৭৪৪১০১, ফোন- ০৩১৯২- ২৩৩৫৯০, ২৩৩৯১৬।
কোথায় থাকবেন
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে রাত্রি যাপনের জন্য অসংখ্য বিভিন্ন মানের বিভিন্ন ধাপের হোটেল, কটেজ এবং গেস্ট হাউস রয়েছে। এখানে অনেক বাজেট হোটেল ও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু অনেক বাজেট হোটেল রয়েছে সেখানে বিদেশীদের রাখতে চায় না। আবার অনেক বাজেট হোটেল ও পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৭০০ রুপিতে।
আন্দামান দ্বীপ-পুঞ্জ সম্পর্কিত ভ্রমণ টিপস
★ আন্দামান দ্বীপ ভ্রমণের আদর্শ সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।
★ দ্বীপ গুলো ঘুরার জন্য আগে থেকেই ফেরির টিকেটের বন্দোবস্ত করে রাখুন।
★ সি সিকনেসের ওষুধ যেমন বমির ওষুধ সহ অন্যান্য ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।
★ কিং কোকোনাট অবশ্যই খাবেন।
★ সব সময় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্ট সঙ্গে রাখুন।
★ আবহাওয়া খারাপ থাকলে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকতে পারে।
★ আন্দামানের স্মারক কিনলে এর বিল সাথে রাখুন।
★ জারোয়াদের ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, ধরা পরলে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
★ পোর্ট ব্লেয়ার হ্যাভলক এবং নীল আইল্যান্ডে এটিএম আছে।
★ দ্বীপের প্রাকৃতিক কোন জিনিস সাথে করে নিয়ে আসবেন না।