বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহজ হচ্ছে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বাইডেন প্রশাসনের কাছে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বেশ কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। দ্রুতই এ ব্যাপারে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকা কঠিন হয়ে ওঠে। নানা বিধিনিষেধ আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাইরের শিক্ষার্থীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে আমেরিকার কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে চাপ পড়ে। মার্কিন অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও টানা লকডাউনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিক্ষার্থীরাই বিপাকে আছেন। স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের পর কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিয়ে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শিক্ষাবর্ষগুলো। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষার্থে প্রতিবছর আমেরিকায় আসা শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী গ্রহণ করে থাকে। গড়ে ১০ লাখের বেশি বাইরের দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীর কারণে প্রতি বছর আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রায় ৪১ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়। সাড়ে ৪ লাখের বেশি কর্মসংস্থানে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অবদান রেখে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা উচ্চ হারে টিউশন ফি প্রদান করে থাকে। ফলে কলেজ-ইউনিভার্সিটির বহু শিক্ষাকার্যক্রমে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ শিক্ষার্থীদের কম টিউশন ফি দিতে হয়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চার বছর ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আসা কমেছে বা কঠিন হয়ে উঠেছে।

কর্নেল ইউনিভার্সিটির ইমিগ্রেশন ও আইন বিষয়ের অধ্যাপক স্টিফেন ইয়েল-লোহর বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনকে অগ্রাধিকারমূলকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তা না করা হলে শুধু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই নয়, আমেরিকার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২০০৬ থেকে ২০১৬ সালে আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন ৮০ শতাংশ বেড়েছিল। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিলে লেখা এক নিবন্ধে অধ্যাপক স্টিফেন বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আসা ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে আমেরিকার অর্থনীতিকে ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ও ৬৫ হাজার কর্মসংস্থানের মাশুল দিতে হয়।

ট্রাম্প তাঁর পুরো মেয়াদেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আসা নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা প্রয়াস চালিয়ে যান। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের সুযোগ তিনি বাতিল করে দেন। ডিগ্রি নেওয়ার পর স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর তিনি দেন।

ট্রাম্প অভিযোগ করছিলেন, বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে গোয়েন্দাগিরিতে লেগে যান। বাইরের দেশ থেকে আসা উচ্চশিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মেধাসম্পত্তি চুরির অভিযোগও ট্রাম্প এনেছিলেন।

বাইরের দেশ থেকে আসা উচ্চশিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপ্ত করে আমেরিকায় কর্মজীবী হিসেবে থাকার জন্য এইচ-১ ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন করে তুলেছিলেন ট্রাম্প। নানা ধরনের তল্লাশি ও নথিপত্র টানাটানির কারণে ট্রাম্পের সময় এইচ-১ ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার চার গুণ হয়েছিল।

করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর খড়্গ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বাইরের দেশগুলোতে লকডাউনের কারণে মার্কিন দূতাবাস কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এমন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। আমেরিকায় কর্ম-অনুমতির (ওয়ার্ক পারমিট) আবেদনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা এশীয় লোকজনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাব ও হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে।

ফলে, ২০২০ সালের শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির হার ৭২ শতাংশ কম হয়েছে। অধ্যাপক স্টিফেন তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, শুধু এ কারণে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মার্কিন অর্থনীতি ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া আমেরিকায় ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের ঘাটতি হয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মার্কিন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন ইতিমধ্যে বহুগুণে বেড়ে গেছে।

অধ্যাপক স্টিফেন বলেছেন, ৪০টি দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ৭৬ শতাংশের মধ্যে এখন ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর মনোভাবই যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। দ্রুত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরও একটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন অর্থনীতি আরেক দফা ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দ্রুত করণীয় কাজের মধ্যে রয়েছে—শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়ার জটিলতা দূর করা। গত মাসের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার মাত্র ১৮ শতাংশ কনস্যুলেট অফিস পুরোদমে কাজ করতে পারছে।

কোভিড-১৯-এর কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমেরিকায় শিক্ষার্থীদের আগমন দুরূহ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন উঠে গেলেও ভিসার আবেদনের স্তূপ পড়ে আছে মার্কিন দূতাবাসগুলোয়। শিক্ষার্থীদের এসব আবেদন দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি না করলে শিক্ষাবর্ষের আগে শিক্ষার্থীরা আমেরিকায় আসতে পারবে না।

অধ্যাপক স্টিফেন বলেছেন, শিক্ষার্থী ভিসার জন্য দূতাবাসে উপস্থিতি হয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া যেতে পারে। অন্য সব ভিসার চেয়ে শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। ট্রাম্পের সময়ে আরোপিত সব বিধিনিষেধ উঠিয়ে দিতে হবে। শিক্ষা সমাপ্ত করার পর এইচ-১ ভিসার অনুমোদন সহজ করার জন্যও প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

ইমিগ্রেশন আইনের আওতায় উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদনের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক স্টিফেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কাছে একটি একাডেমিক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল মার্কিন সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো একনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করতে পারবে বলে মনে করেন অধ্যাপক স্টিফেন।

অধ্যাপক স্টিফেনসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী লোকজন এ নিয়ে ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছেন। প্রশাসন ও আইনপ্রণেতাদেরও এ ব্যাপারে ইতিবাচক কাজ করতে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com