পুরোনো ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার পাশাপাশি লোক-শিল্প ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বড় পরিসরে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ এর আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই। জুলাই অভ্যুত্থানের নানা প্রতীকের পাশাপাশি ২৮ জাতিগোষ্ঠী যোগ হয়েছেন এবারের শোভাযাত্রায়। তবে এ বছর প্রধান ৭টি মোটিফের মধ্যে প্রধান আকর্ষণ থাকছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’।
বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরতে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ রাখা হয়েছে। বাঁশের বেত-কাঠ দিয়ে মুখাকৃতিটি তৈরির পর গত শনিবার ভোরে এক দুর্বৃত্ত এটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। পরে ককশিটের ওপর পুনরায় তৈরি করা হয় এটি।
এছাড়াও এবারের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি থাকছে।
এ বছর ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
বড় মোটিফের পাশাপাশি এ বছর মাঝারি মোটিফ রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস রয়েছে।
এছাড়া ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডোলা থাকবে।
এবারের শোভাযাত্রায়বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে।
পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপট আঁকা হয়েছে। প্রত্যেকটি চিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘ এবং বাঘের রং।
আজ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করবেন।
শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
শোভাযাত্রার শুরুতে ৮টি ঘোড়া থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবার সামনে পুলিশের বহর থাকবে না। পুলিশ শোভাযাত্রার পাশে অবস্থান করবে। এরপর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থাকবেন। শোভাযাত্রার একদম শেষে সাধারণ মানুষ থাকবেন।
এবারের শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী পিস্টন বাঁশি, বাংলা ঢোল ও করনেট বাঁশি নিয়ে ৩০ জন শিল্পী সম্মিলিত দেশাত্মবোধক সঙ্গীত গাইবেন। এছাড়া চারুকলার অভ্যন্তরে নাগর দোলা, চরকি, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, বৈশাখী খাবারের দোকান থাকছে।