রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

আতশবাজি ও ডিজে পার্টিতে সাকরাইন উদযাপিত

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

বাংলা মাসের পৌষ-সংক্রান্তির দিনকে ঘিরে শুরু হয়েছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় দিনব্যাপী চলে বাহারি রঙের ঘুড়ি ওড়ানো। তবে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় বাহারি সব আতশবাজিতে।

এরই মধ্যে তরুণদের কেউ মুখে আগুন নিয়ে দেখাতে থাকেন নানা কসরত। আকাশে উড়তে থাকে বাহারি সব ফানুস। ছিল আলোক ঝলকানি। বাড়িগুলোর ছাদে সাউন্ড বক্সে বাজে ডিজে গান।

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে পুরান ঢাকার বেশির ভাগ বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়ানোর দৃশ্য দেখা যায়। গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠেও মজে ছিল ঘুড়ি উৎসব। এ ছাড়া সূত্রাপুর, নারিন্দা, সুরিটোলা, নবাবপুর, শ্যামবাজার, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধোলাইখাল, শিংটোলা, ডালপট্টি মোড়, লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ গেন্ডারিয়া, মুরগিটোলাসহ পুরো এলাকায় দিনভর ছিল এই উৎসব।

তবে সন্ধ্যার পর সেই উৎসব পরিণত হয় আলোর খেলায়। সঙ্গে ছিল আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো ও ডিজে পার্টি। তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্ক— সবাই মেতে ছিলেন ঐতীহ্যবাহী এই উৎসবে।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের বাসিন্দা ফোরকান চৌধুরী। সাকরাইন উৎসবকে ঘিরে তার পাঁচ তলা বাড়ির ছাদে বসেছিল ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। সারা দিন পঙ্খীরাজ, কাউঠাবাজ, রকঘুড্ডি, গগন্দার ঘুড়ি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত দিন পার করেছেন তার নাতি-নাতনি ও ভাড়াটেরা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সবাই দিনভর ব্যস্ত ছিল সুতা, নাটাই আর মাঞ্জা নিয়ে। তবে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ডিজে পার্টি।

অতিরিক্ত উচ্চশব্দে চলা এই পার্টিতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে ফোরকান চৌধুরী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই এই উৎসব দেইখা আইতাছি। এখন উৎসবের আমেজ বদলাইছে। পোলাপান নানা আয়োজন করতেছে। এটা পুরান ঢাকার রীতি। সবাই এই উৎসব উদযাপন করে। তবে আমাদের সময় এসব ডিজে পার্টি ছিল না, আমরা সারা দিন ঘুড়ি ওড়াতাম, নানা পিঠা খেতাম আর আত্মীয়স্বজনের বাসায় যেতাম।

বছরের মাত্র একটা দিনে হয়। এটাকে খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই

বছরের মাত্র একটা দিনে হয়। এটাকে খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই

পুরান ঢাকার কলতাবাজারের ষাটোর্ধ্ব স্থায়ী বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, সাকরাইন উৎসবের ধরন অনেক বদলে গেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা সাকরাইন উৎসব মানে ডিজে পার্টি মনে করে। কার বাসায় কত বেশি সাউন্ড দিয়ে ডিজে পার্টি করা যায়, সেই প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের সময় এসব ডিজে পার্টি ছিল না। তখন মাইকের প্রচলন ছিল। আমরা ছাদে মাইক বাজাতাম, পিঠাপুলির উৎসব করতাম। এখন পিঠাপুলির উৎসব কমে গেছে। আগে ছিল ঘুড়ির সুতা কাটার প্রতিযোগিতা।

উৎসবে মেতেছিলেন লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা রনি বাড়ৈ ও তার বন্ধুরা। সন্ধ্যা থেকেই উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে বন্ধুদের নিয়ে বাসার ছাদে ডিজে পার্টি করছিলেন তিনি। সাকরাইন উৎসবের সঙ্গে ডিজে পার্টির কী সম্পর্ক, জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন যুগ বদলেছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রুচিবোধেরও পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া সাকরাইনের যে সংস্কৃতি তা দিনের বেলায় ঠিকই উদযাপন করা হয়। রাতে ডিজে পার্টি হচ্ছে বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ করা। এটা তো সব সময় হয় না, বছরের মাত্র একটা দিনে হয়। এটাকে খারাপ চোখে দেখার সুযোগ নেই।

পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা মনি আক্তার বলেন, মোঘল আমলের নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন হয়। তখন থেকে এই উৎসব উদযাপন করে আসছে পুরান ঢাকার স্থানীয়রা। সময়ের সঙ্গে উৎসবে যোগ হয়েছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ। তাদের মধ্যে একটা আতশবাজি আর ডিজে পার্টি। সাকরাইনের যে মূল সংস্কৃতি, সেটা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। এখন ঘুড়ি বা পিঠার মধ্যে কেউ সীমাবদ্ধ নেই। কমবেশি সবাই ডিজে পার্টির অন্তর্ভুক্ত। এটাকে আমি অপসংস্কৃতি আখ্যা দিচ্ছি না। তবে এর কারণে যেন অন্য কেউ অস্বস্তিতে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা শ্রেয়।

পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় বাহারি সব আতশবাজিতে

পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় বাহারি সব আতশবাজিতে

মূলত সাকরাইন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো। বর্তমান সাকরাইন ডিজে পার্টিময় হলেও ছোটদের কাছে বাহারি রকমের ঘুড়ি ওড়ানোই সবচেয়ে আনন্দের। শিশু-কিশোরদের এবারের পছন্দের শীর্ষে ছিল ছোট ভিম, মোটুপাতলু, পঙ্খীরাজ, বেনটেইন ঘুড়িগুলো। বড়দের হাতে ছিল চারগোয়া, দুই গোয়া, লাভ, ডাব্বা, গরুর মাথা, নাকবাহার, মুখবাহার, গগন্দার, মতিমহল, সিংহদার, মাজদারসহ আরও হরেক রকমের ঘুড়ি।

কুয়াশাচ্ছন্ন বিকালেও বাহারি রকমের ঘুড়ি আকাশে উড়তে শুরু করে। লড়াই ছিল কার ঘুড়ি উড়বে কত ওপরে। সঙ্গে জমে ওঠে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই, বলছেণ তিনি।

উল্লেখ্য, দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার সদরঘাট, লক্ষীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জসহ আশপাশের সাকরাইন উদযাপন করা হয়। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লালবাগসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন এই উৎসব উদযাপন করবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com