দেশে আকাশ পথে যাত্রী পরিবহনে বাড়ছে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের সংখ্যা। বর্তমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৪টি বিদেশি এয়ারলাইন্স বিভিন্ন দেশের ৫২টি বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী নভেম্বরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স যোগ হলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৫টিতে।
শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করছে যেসব এয়ারলাইন্স তাদের মধ্যে রয়েছে– বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার এশিয়া, এয়ার অ্যাস্ট্রা, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স, ড্র্যাগন এয়ার, ড্রুক এয়ার, পারো এমিরেটস, ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার, জেট এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, কিংফিশার এয়ারলাইন্স, মালেশিয়ান এয়ারলাইন্স, মালদিভিয়ান এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, রাখ এয়ারওয়েজ, সৌদি আরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও ইয়েমেনিয়া। এর সঙ্গেই যোগ হচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বর্তমানে বছরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট মিলে প্রায় ৯০ লাখের মতো যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যাত্রী সংখ্যা আলাদাভাবে নিরুপন করা হয় না।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া জানান, বর্তমানে যে কয়েকটি সংস্থা ঢাকা থেকে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট অপারেশন করছে তাদের সংখ্যা ৩৪টি। এর সঙ্গে নতুন আরেকটি যুক্ত হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে এয়ারলাইন্সের সংখ্যা আরও বাড়বে। ফ্লাইট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজস্বও বাড়বে।
তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে জানানো হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস বাংলা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে। তাদের বহরের উড়োজাহাজের সংখ্যাও ২৩টি। এই এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে অফলাইনে তিনটি সাপ্তাহিক নন-শিডিউল কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা। আগামী নভেম্বর থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স আদ্দিস আবাবা ও ঢাকার মধ্যে যাত্রীবাহী ফ্লাইট শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস ১৪৭টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যাত্রী বহন, বহরের আকার এবং আয়ের দিক থেকে এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারলাইনস। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এয়ারলাইন হিসেবে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক আলোচনার পর গত বছর ৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে দুই দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এয়ার সার্ভিস চুক্তি সই করে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) প্রতিষ্ঠান রিদম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহাগ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেবিচকের অনুমতি সাপেক্ষে আদ্দিস আবাবা-ঢাকা-আদ্দিস আবাবা সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকার ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বেবিচকের অনুমতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ফ্লাইট অপারেশনের কাজটি শুরু করতে পারবো।
এভিয়েশন বিশ্লেষক নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যত বাড়বে, ততই আমাদের জন্য ভালো। এতে করে যাত্রী সেবার মান বাড়বে, কমবে টিকিটের দামও। অনেক সময় যাত্রীদের চাপে বিভিন্ন রুটে সিন্ডিকেট করে টিকিটের দাম বাড়ায়। এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন আর এটি থাকবে না। প্রতিযোগিতা বাড়লে টিকিটের দাম কমবে, পাশাপাশি যাত্রী সেবাও উন্নত হবে। আর থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি ওপেন হলে এয়ারলাইন্সের সংখ্যাও অনেক বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।