বিশাল সব নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ। দখিনা বাতাসের সঙ্গে কানে ভেসে আসছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। শোনা যাবে ঝিঁঁঝিঁ পোকা আর বনমোরগের ডাকও। এই সৌন্দর্য যে কাউকে কল্পনার জগতে নিয়ে যাবে! এমনই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন মিরসরাই থেকে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাটে গিয়ে শেষ হয়েছে সড়কটি। এ সড়ক ধরে যাওয়ার পথে মাতাল হাওয়ায় দেহ ও মন জুড়িয়ে যাবে।
যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজ আর সবুজ। চারপাশে প্রকৃতির ভিন্ন রূপ দেখার অন্যতম অনুভূতি যারা একবার গেছে তারাই বুঝবে। যা দেখলে চোখজুড়ে খেলে যাবে এক অপরূপ সৌন্দর্য ও সবুজের সমারোহ।
সড়কের দু’পাশে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, জারুল আর হরেক রকম বুনো গাছের সারি। বুনো ফুল, ফল ও লতা-গুল্মের বুনন সবখানে। সড়কঘেঁষা পাহাড়গুলোতে গাঢ় সবুজের সমারোহ দেয় চোখের প্রশান্তি। স্বীকৃত কোনো পর্যটনকেন্দ্র না হলেও এ সড়কের সৌন্দর্য দেখতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিরিবিলি এই সড়কের প্রায় পুরোটাই পাহাড়ি পথ। সড়কের দু’পাশেই ঘন জঙ্গলে ভরা। কখনো সড়ক ছেড়ে নামলেই চোখে পড়ে পাহাড়ি ঝরনার কলতান।
মূলত মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার বনজীবী মানুষদের যাতায়াতের অন্যতম একটি পথ হিসেবে ব্যবহার হতো এটি। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ নানা কাজে দুই উপজেলার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করেছে এ সড়ক।
সড়কের ঝরঝরি এলাকায় কথা হয় চট্টগ্রাম শহর থেকে ঘুরতে আসা দুই বন্ধু রাতুল ও আরিফের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু মিলে এখানে ঘুরতে এসেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এ রাস্তাটি সম্পর্কে জেনে কৌতূহলী ছিলাম।’
‘আজ এসে বেশ ভালো লাগছে। সড়কটিতে গাড়ি চলে খুব কম। প্রকৃতির শব্দ ছাড়া আর তেমন কোনো কোলাহল নেই। পথের ধারে এখানে সেখানে চোখে পড়ে নানা বুনো ফুল-ফল। পাখির কিচিরমিচির আছে সবখানে। এখানকার অকৃত্রিম সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে সবাইকে।’
এই সড়কপথে একটি ঘরে ২০ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘এক সময় এ রাস্তায় হেঁটে যাতায়াত করত মানুষ। এখন সড়ক উন্নত হওয়ায় গাড়ি চলাচল করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখানে এখন কমবেশি প্রতিদিন পর্যটক আসে। শুক্র ও শনিবার পর্যটক থাকে বেশি। খেয়াল করছি, দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে এখানে।’
ফটিকছড়িতে চাকরি করা মিরসরাইয়ের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সপ্তাহে বেশ কয়েকবার এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। সড়কটি নিরিবিলি, গাড়ি চলাচলও কম। আসা-যাওয়ার সময় দু’দিকের সবুজ পাহাড় আর গাছগাছালি দেখে খুব ভালো লাগে।’
মিরসরাই-নারায়ণহাট সড়কটির বড় একটি অংশ পড়েছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মিরসরাই ও বারৈইয়ারঢালা রেঞ্জের মধ্যে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ মিরসরাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেনশা নওশাদ বলেন,‘মিরসরাই-নারায়ণহাট পাহাড়ি সড়কটির দু’পাশে নানা প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা।’
‘সড়কটির পাশে বন বিভাগের লাগানো গর্জন গাছের সারি মনে অন্য রকম প্রশান্তি দেয়। এটি ঘোষিত কোনো পর্যটনকেন্দ্র না হলেও সড়কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক পর্যটককে টেনে আনছে এখানে।’
কীভাবে পৌঁছাবেন এই সড়কে?
মিরসরাই পৌরসদর থেকে পূর্বদিকে এই সড়ক দিয়ে যেতে হবে। ফটিরছড়ির নারায়ণহাট থেকে পশ্চিম দিকে যেতে হবে। বড় গাড়ির চেয়ে ছোট গাড়িতে চলাফেরা করলে ভালো হয়।
লোকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে। এছাড়া দু-একজন হলে বাইকে যাওয়া যেতে পারে। প্রাইভেটকার, হাইস, বা নোহা গাড়িতেও আসা-যাওয়া করতে পারেন।