অস্ট্রেলিয়া এবং ভৌগোলিক অঞ্চল ওশেনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর সিডনির ব্যাপারে। তবে স্পেশাল ব্যাপারটা হলো যারা মাছ খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য। বিশ্বের তৃতীয় সব থেকে বড় মাছ বাজার রয়েছে সিডনিতে। সিডনি ফিস মার্কেট নামে পরিচিত এই বাজার প্রতিবছর 3.5 মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ করে। তাই আর দেরি না করে যারা সিডনিতে আছেন তারা একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যান আর নিয়ে আসুন আপনাদের পছন্দের মাছ আর প্রাণ ভরে খান। আপনাদের জানাবো অস্ট্রেলিয়ার প্রাণ কেন্দ্র সিডনি সম্পর্কে এমন কিছু অজানা তথ্য যা হয়তো আপনারা জানেন না।
অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনি শহর। প্রায় 30 হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার আদিম আদিবাসী মানুষ এই শহরে তাদের বসতি স্থাপন করে। ব্রিটিশ লেফটেনেন্ট জেমস কোক 1770 সালের কার্নেল উপদ্বীপের বোটানি উপসাগরের আদিবাসী জাতির মানুষের মুখোমুখি হয়। সেই সময়টা ছিল ব্রিটিশদের প্রথমেই এই অঞ্চলে পদার্পণ। ব্রিটিশরা স্থানীয়দের ইউরা বলে অভিহিত করতো। তাদের নতুন উপনিবেশ স্থাপনের জন্য কাঁদের নিয়ে আসে আপনি জানলে অবাক হবেন তারা হলো সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের। কিছু অপরাধী এবং উপযুক্ত কারিগর নিয়ে তারা তাদের উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে। কেবলমাত্র 1788 থেকে 1792 সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত 3546 জন পুরুষ এবং 766 জন মহিলাকে সিডনিতে নিয়ে আসা হয়। ব্রিটিশ রা তাদের দমন নীতি প্রমাণ দেয় যুদ্ধের মাধ্যমে। স্থানীয় অধিবাসী এবং ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে 1788 থেকে 1816 পর্যন্ত চলে। 1816 সালে যুদ্ধের তাৎক্ষণিক অবসান ঘটে কয়েকজন আদিবাসী মৃত্যুর পর। কিন্তু পরবর্তীকালে 1934 পর্যন্ত কয়েকটি যুদ্ধ ঘটে থাকে। তবে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর আধুনিকতার অনেক ছোঁয়া পেয়েছে।
2019 সাল পর্যন্ত সিডনির জনসংখ্যা 53 লক্ষ 12 হাজার 163 জন। যেহেতু এটি অস্ট্রেলিয়ার সবথেকে জনবহুল শহর তাই এখানকার জনঘনত্বও বেশি 463 জন। 2016 সালে এক তথ্য সামনে আসে সেখানে দেখা যায় সিডনির মোট জনসংখ্যার 42.9 শতাংশ জনগণ শহরের বাইরে জন্মেছেন। এই বিশাল জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভার, চীন এবং আরো কয়েকটি দেশ থেকে আগত ইমিগ্রেন্ট। সিডনিতে 38.2% মানুষ ইংরেজি ভাষা বাদে আরো কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে পারে। এই ভাষাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভাষা ক্যান্টোনিজ, গ্রিক, ম্যান্ডারিন, ভিয়েতনামি ভাষা।
বৃটেনের একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা অনুযায়ী 2009 সালে বিশ্বের পঞ্চম সবথেকে সুরক্ষিত শহর ছিল সিডনি। বিশ্বের এক ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে পরিচিতি প্রাপ্ত শহরের কিছু নিদর্শন, স্থান এবং নির্মাণের কয়েকটি সম্বন্ধে জানা যাক। প্রথমেই আসি সিডনি অপেরা হাউস– এই আনুষ্ঠানিক ভবনে অনেক ধরনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটক যখন অস্ট্রেলিয়াতে বেড়াতে আসে তখন তারা অবশ্যই সিডনি অপেরা হাউসে বেড়াতে আসে। বিশ্ব প্রসিদ্ধ সিডনি অপেরা হাউস জনসাধারণের জন্য 1973 সালে খোলা হয় এবং এটি 2007 সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম– নিউসাউথ ওয়েলসের এক স্থানে এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার সবথেকে পুরনো জাদুঘর হলো এটি। এই প্রাচীন জাদুঘর 193 বছর আগে 1827 সালে স্থাপিত। তখন এই জাদুঘর টি খুবই ছোটো ছিলো। যদি আপনারা পুরো চিত্র দেখতে ভালোবাসেন তাহলে আর্ট গ্যালারি নিউ সাউথ ওয়েলস এর থেকে ভালো জায়গার হতে পারে না। এই গ্যালারিতে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী 1874 সালে অনুষ্ঠিত হয়।
সারা বিশ্বজুড়ে অনেক ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম সেতু সিডনি হারবার ব্রিজ। ধনুক আকৃতির এই সেতুর নির্মাণ 1923 থেকে 1932 সাল পর্যন্ত চলে। এই ঝুলন্ত ব্রিজে গাড়ি, সাইকেল এগুলি চলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম উঁচু টাওয়ার সিডনি টাওয়ার। 309 মিটার উঁচু টাওয়ার সিডনির সবথেকে উঁচু এবং সমগ্র দক্ষিণ গোলার্ধে সবথেকে উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। বিখ্যাত এই টাওয়ার টি 1981 সালে নির্মিত হয়ে সাধারণ মানুষের সামনে আসে।
আপনার যদি সৈকত বা জলবন্দর ভালো লাগে তবে তার জন্য সিডনি হারবার রয়েছে। সিডনি হারবার বর্তমানে বিশ্বের গভীরতম প্রাকৃতিক বন্দর এর একটি। সঙ্গে সমস্ত ধরনের খেলা যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, হকি রাগবি এবং 2000 সালের সামার অলিম্পিক। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া কে সারা বিশ্বের মানুষ ক্রিকেটের জন্য চিনে। সেখানে অনেক ক্রিকেট খেলার স্টেডিয়াম রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড।
12367.7 বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরে অনেক কিছু দেখার জায়গা আছে। কিন্তু আকর্ষণের মধ্যে আরো কয়েকটি তথ্য রয়েছে। সিডনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচিত স্থান। কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। আর হলিউড সিনেমাতে তো আমরা এই শহরকে প্রায়ই দেখতে পাই।
সমগ্র অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ অর্থনীতি রয়েছে সিডনি শহরে। পর্যটন, ব্যাংকিং, অস্ট্রেলিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জ এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ অস্ট্রেলিয়ার সদর দপ্তর সিডনি শহরে রয়েছে। তারপর যেকোন শিল্প বলুন নানা রকম দ্রব্যের কারখানায় সমস্ত কিছু রয়েছে এই সিডনি শহরে। তার ফলে শহরে বিভিন্ন চাকরিও তুলনামূলক বেশি। সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র সিডনি শহর।
ভালো আবহাওয়া এবং বৈচিত্র্যময় সুন্দর শহর হলো এই সিডনি ।