বহু কৃষ্টির দেশ অস্ট্রেলিয়া। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা, লেখাপড়ার চমৎকার পরিবেশ দেশটিকে সবার পছন্দের শীর্ষে রেখেছে। ২০১৭’র এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া সরকার হঠাৎ তাদের জনপ্রিয় প্রোগ্রাম সাব-ক্লাস ৪৫৭ বন্ধ করে দেয়। এ কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। তখন বিকল্প হিসেবে চালু করে সাব-ক্লাস ৪৮২ বা টেম্পোরারি স্কিলড শর্টেজ ভিসা (টিএসএসভি)। সাব-ক্লাস ৪৮২ মূলতঃ টিএসএসভি’র অন্তর্গত একটি ভিসা। এর অধীনে শর্ট টার্ম, মিডিয়াম ও শ্রমচুক্তিতে ভিসা হয়। এ ভিসায় বিদেশি শ্রমিকরা অস্ট্রেলিয়ায় যেকোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারেন।
সাব-ক্লাস ৪৮২ ভিসা সর্ম্পকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলতঃ ভারতীয়রা সাব-ক্লাস ৪৫৭-তে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশীরাও দ্রুত ও দক্ষতার সাথে ফাইল প্রসেস করলে স্বল্প সময়ে এই ভিসা পাওয়া সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ার ডিমান্ড লিস্টে ৪৩২টি পেশা রয়েছে। অতএব বিভিন্ন সাব-ক্লাসে আবেদন করে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করা সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য কয়েক ডজন ভিসা প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে চারটি ক্যাটাগরিতে সেখানে যাওয়া তুলনামূলক সহজ। এর মধ্যে অন্যতম হলো- স্কিলড মাইগ্রেশন উইথ পিআর। মোট ৬০ পয়েন্ট প্রয়োজন এ ভিসার জন্য। পয়েন্ট হিসাব করা হয় ভিসাপ্রার্থীর বয়স, কাজের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা এবং ভাষার ওপর চূড়ান্ত দখলের ওপর। এরপর রয়েছে স্কিলড নমিনেটেড ১৯০ ভিসা। শর্ট লিস্টেড পেশাজীবীরা অত্যন্ত জনপ্রিয় এই প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। এজন্য টেরিটরি থেকে স্পন্সর থাকতে হবে, যা পাওয়া খুব সহজ।
টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট, সাব-ক্লাস ৪৮৫ ভিসা হলো আরেকটি জনপ্রিয় ক্যাটাগরি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা আছে বা কমপক্ষে দুই বছরের মধ্যে লেখাপড়া শেষ করেছেন এমন ব্যক্তিরা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। গ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক স্টিম ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক স্টিমের ভিসার মেয়াদ ১৮ মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত হতে পারে।
স্কিলড রিকগনাইজড গ্র্যাজুয়েট ৪৭৬ ভিসা। সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছেলেমেয়েরা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩১। এছাড়া গত এক বছরের মধ্যে যারা পড়াশোনা শেষ করেছেন তাঁরাই এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। কোন ধরনের ভিসার জন্য আপনি উপযুক্ত, তা সঠিক ও বিস্তারিতভাবে জানা সবচেয়ে জরুরি। এজন্য অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণের বিকল্প নেই।
আরেকটি ভিসা ক্যাটাগরি হলো ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ভিসা (৪০৭)-অকুপেশনাল ট্রেইনিং স্কিম। এই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসে দুই বছর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে বসবাস ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে । মেয়াদ শেষে ভিসা নবায়নেরও সুযোগ রয়েছে। এ ভিসার জন্য প্রার্থীর আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৪.৫ থাকতে হবে, বয়স হতে হবে ১৮ বা তার বেশি।
এমপ্লয়ার নমিনেশন স্কিম (১৮৬)। এই স্কিমের আওতায় স্থায়ীভাবে পরিবারসহ বসবাস ও কাজ করা সুযোগ রয়েছে। নাগরিকত্বও পাওয়া সম্ভব এই স্কিমের মাধ্যমে। এজন্য প্রার্থীর অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। রিজিওনাল স্পন্সরড মাইগ্রেশন স্কিম (১৮৭)। স্কিল অ্যাসেসমেন্টের প্রয়োজন নেই এই ভিসায়। এই ক্যাটাগরিতে চাকরিদাতার দায়-দায়িত্ব কিছুটা কম, স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়াও সম্ভব। রিজিওনাল এরিয়া থেকে জব অফারের প্রয়োজন হয়। পড়াশোনা করারও সুযোগ পাওয়া যায়।
স্কিলড রিজিওনাল সাব-ক্লাস ৪৮৯ ভিসা। রিজিয়নে দুই বছরের পড়াশোনার অভিজ্ঞতা, আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬ থাকলেই এই ক্যাটাগরিতে ভিসা পাওয়া সম্ভব। ভিসা প্রার্থীকে পড়াশোনা শেষে রিজিয়নে এক বছর কাজ করতে হবে। চাকরিদাতার বর্তমান কাজের ঠিকানা, কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বেতনের ওপর নির্ভর করে ভিসা পাওয়ার বিষয়টি।
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের জন্য সবচেয়ে জরুরি সততা ও দক্ষতা। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো জটিলতা নেই। প্রসংগত উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ান ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে যেক’টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার মধ্যে ওয়ার্ল্ডওয়াইড মাইগ্রেশন কনসালট্যান্টস লিমিটেড অন্যতম।
তথ্যসূত্র: ভয়েস বাংলা