- ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় মোটর গাড়ি চালানোর বৈধ অনুমতিপত্র
- অস্ট্রেলিয়ার একেক স্টেট ও টেরিটরিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে
- পূর্ণ লাইসেন্স পাওয়ার আগে ড্রাইভারদের বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় পাশ করতে হয়
- অভিবাসীরা একটি সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিদেশী লাইসেন্সকে অস্ট্রেলিয়ান লাইসেন্সে রূপান্তর করার যোগ্য হতে পারে, তবে তা বেশ কিছু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে
ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে মূলত বৈধ ভাবে গাড়ি চালানোর প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন।
ফ্র্যাঙ্ক টুমিনো অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ড্রাইভিং স্কুল এল ট্রেন্টের একজন মাস্টার ড্রাইভিং প্রশিক্ষক।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়।
এছাড়াও, কোন ধরণের গাড়ি অর্থাৎ বড় আকারের নাকি ছোট, তার উপরেও নির্ভর করে কোন পরীক্ষা পদ্ধতির ভেতর দিয়ে গিয়ে লাইসেন্স পাওয়া যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, গাড়ির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সাধারণত যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা মোটরসাইকেল, বাস বা ভারী যানবাহনের লাইসেন্সের প্রক্রিয়ার চেয়ে আলাদা।
প্রতিটি স্টেট ও টেরিটরিতে কিছু কিছু নিয়ম আলাদা, আবার কিছু নিয়মে মিল রয়েছে।
লুইস হিগিন্স হুইটন নিউ সাউথ ওয়েলস ট্রান্সপোর্টের রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির পরিচালক।
তিনি বলেন, সবার শুরুর ধাপ হচ্ছে রোড রুলস্ বা রাস্তার নিয়ম কানুন শেখা। তারপরে একটি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়, যেটিকে বলা হয় ‘এল-স্’।
‘এল’ লাইসেন্স থাকলে কারও তত্ত্বাবধানে থেকে গাড়ি চালানো অনুশীলন করা যায়।
Expert driving instructors are especially trained to teach learner drivers in a stress-free environment, L Trent’s Frank Tumino says. Source: Getty / Getty Images Source: Getty / Getty Images
শিক্ষানবীশ বা লার্নার ড্রাইভারদের বয়সের উপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘এলস্’ হিসেবে গাড়ি চালাতে হয়।
কারও তত্ত্বাবধান ছাড়াই নিজে নিজে গাড়ি চালানোর আগে তাদের অবশ্যই ‘প্রভিশনাল’ বা ‘প্রবেশনারি’ লাইসেন্স পেতে হয়, যা একটি ব্যবহারিক ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাওয়া যায়। এটি ‘পি-স্’ নামেও পরিচিত।
ফ্র্যাঙ্ক টুমিনো আরও বলেন, বৈধভাবে গাড়ি চালানোর জন্য অভিবাসীদের অবশ্যই তাদের বিদেশী লাইসেন্সকে অস্ট্রেলিয়ান লাইসেন্সে রূপান্তর করাতে হয়।
লুইস হিগিন্স হুইটন বলেছেন যে এই রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি সবার জন্যে এক নয়, বরং উৎস দেশ এবং লাইসেন্সের প্রকারভেদ অনুসারে তা আলাদা হয়ে থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি বৈধ বিদেশী লাইসেন্সকে একটি পূর্ণ অস্ট্রেলিয়ান লাইসেন্সে রূপান্তর করতে হলে ব্যবহারিক ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কেবল মাত্র একটি সুযোগ দেওয়া হয়। সেটিতে পাশ করতে ব্যর্থ হলে তখন লার্নার বা এল লাইসেন্স দেওয়া হয়।
মি. টুমিনো বলেন, যারা অন্য দেশে গাড়ি চালানো শিখেছেন, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে তাঁদের বিশেষ কোচিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
The Australian graduated licensing scheme ensures novice drivers slowly build up their driving and road safety skills before they are fully licensed. Source: Getty Source: Getty
পি-লাইসেন্সধারীদের গাড়ি চালানোর আগে মদ্যপান করা নিষিদ্ধ। এবং গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট গতিসীমা বজায় রাখতে হয়।
আর পি-লাইসেন্স থেকে ফুল বা পূর্ণ লাইসেন্সের জন্যে আবেদন করার আগে সম্ভাব্য বিপদ সনাক্ত করার ক্ষমতা প্রমাণের জন্যে একটি পরীক্ষায় পাশ করতে হয় যেটির নাম ‘হ্যাজার্ডস পারসেপশন টেস্ট’।
যদিও একবার পূর্ণ লাইসেন্স পেয়ে গেলে বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যায়, তারপরেও সব ড্রাইভারকেই রাস্তার সমস্ত নিয়ম সবসময় মেনে চলতে হয়।
নিয়ম লঙ্ঘন করলে বড় জরিমানা পেতে হতে পারে, এবং তা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল পর্যন্তও গড়াতে পারে।
Police in Australia conduct frequent roadside breath tests to ensure drivers are not intoxicated. Heavy fines apply for those who flaunt road rules. Credit: wikimedia commons Credit: wikimedia commons
অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি এবং সেটেলমেন্ট পরিষেবা সংস্থা বিশেষত শরণার্থী এবং অভিবাসীদের জন্য কিছু কম খরচের এবং বিনামূল্যের ড্রাইভিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে।
এমানুয়েল মুসোনি গ্রেট লেকস এজেন্সি ফর পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা GLAPD – গ্লাপেড এর নির্বাহী ব্যবস্থাপক, এটি একটি তৃণমূল সংস্থা যা সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগতভাবে বৈচিত্র্যময় পটভূমি থেকে আসা লার্নার ড্রাইভারদের জন্য একটি সহায়তা প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে।
মি. মুসোনি বলেন যে GLAPD এই প্রোগ্রামটি প্রথম পরিচালনা শুরু করেছিল কারণ তারা দেখতে পায় যে অনেক নতুন এবং ‘সিঙ্গেল’ অভিবাসী মা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের যাতায়াতের জন্যে লিফট পেতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
এ সংস্থাটি সর্বোত্তম ফলাফলের আশায় একই অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই একজনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা শুরু করে।
মিশেলিন নিয়ান্টাবারা এই প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হওয়া নতুন মায়েদের মধ্যে একজন।
মিজ নিয়ান্টাবারা তাঁর নিজের দেশ কঙ্গোতে কখনও গাড়ি চালাননি এবং এ দেশে এসেও প্রথম দিকে গাড়ি চালাতে শুরু করতে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন।
যদিও তিনি পেশাদার প্রশিক্ষকের কাছ থেকে ড্রাইভিং শিখেছেন এবং বন্ধুরাও তাঁর অনুশীলনে সহায়তা করেছে, তারপরেও তিনি ব্যবহারিক ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে দু’বার ব্যর্থ হয়েছিলেন – যতক্ষণ না তিনি GLAPD-র মাধ্যমে ড্রাইভিং শিখেছিলেন।
তিনি মনে করেন, তাঁর সাফল্যের কৃতিত্বের পেছনে ছিল একই সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আসা তাঁর প্রশিক্ষক, যিনি তাঁর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সহায়তা করেছেন।
তিনি বলেন, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়া তাঁর এবং তাঁর ছেলের জীবনকে বদলে দিয়েছে।
মিজ নিয়ান্টাবারা সকল নারীদের গাড়ি চালানোর ভয় কাটিয়ে উঠতে উৎসাহ প্রদান করেন, কারণ এর সুবিধাগুলি অপরিহার্য্য।
বিভিন্ন স্টেট ও টেরিটরিতে লাইসেন্স পেতে হলে: