অস্ট্রেলিয়ান সরকারি শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস, এনডেভার পোস্টগ্র্যাজুয়েট বৃত্তি, ইন্টারন্যানশনাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ (আইপিআরএস), জন অলরাইট ফেলোশিপ, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ, ম্যাকোয়ারি ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ, এডিলেইড স্কলারশিপ ইন্টারন্যাশনাল, ফ্লিন্ডারস ইন্টারন্যাশনাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর ডিগ্রিতে বছরপ্রতি গড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষাবৃত্তি যেমন রয়েছে, তেমন অস্ট্রেলিয়ার সরকারের নিজস্ব শিক্ষাবৃত্তিও রয়েছে। সাধারণত এই বৃত্তিগুলো কয়েক ধরনের হয়ে থাকে, যেমন: সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ও থাকা-খাওয়ার খরচসহ, শুধু বেতন মওকুফ এবং ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত বেতন মওকুফ বৃত্তি।
অস্ট্রেলিয়ার সব শিক্ষাবৃত্তিগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস শীর্ষে। এ শিক্ষাবৃত্তিতে বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া, যাবতীয় পড়াশোনার খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচসহ প্রতি মাসে নগদ অর্থও। এই শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রমটি পরিচালনা করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাধারণত অন্যান্য শিক্ষাবৃত্তি মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য হলেও এই বৃত্তির জন্য ব্যাচেলর পর্যায়েও আবেদন করা যাবে।
বেশির ভাগ বৃত্তিগুলো কেবল মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের জন্য। এদের একেকটিতে একেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। তবে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে প্রাথমিকভাবে আবেদনকারীকে শিক্ষার্থী ভিসা পাওয়ার আবশ্যিক শর্তগুলোর পাশপাশি প্রাথমিকভাবে ভালো পূর্বের একাডেমিক রেকর্ড, ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি দেওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ সবার আগে বিবেচ্য। এ ছাড়া আবেদনকারীর নির্বাচিত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিও গুরুত্ব রাখে। কিছু বৃত্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ডও সুবিধা হিসেবে কাজ করে।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষাবৃত্তি প্রদানকারী সংস্থার ওয়েবসাইটে বৃত্তির বিস্তারিত তথ্য এবং শর্তাবলি উল্লেখ করা থাকে। নির্বাচিত বৃত্তি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে তাঁদের গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম যোগ্যতা, কোনো কোনো বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে, বৃত্তিটির কী কী সুবিধা থাকছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবেদনের শেষ তারিখ সম্পর্কে জেনে নিন। সেখান থেকেই বৃত্তির আবেদনপত্র, স্টেটমেন্ট অব পারপাস লেটারের নমুনা সংগ্রহ করুন। আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে ক্ষেত্রবিশেষে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করুন এবং সব প্রমাণাদির কাগজপত্রসহ বৃত্তি প্রদানকারীর প্রদেয় পন্থায় তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। আবেদন মঞ্জুর হলে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তির আবেদন মঞ্জুর হলেও আবেদনকারীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হবে। বৃত্তি পেলেই স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া শতভাগ নিশ্চিত হয় না। অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসাতে আবেদন করার আগে আবেদনকারীকে কয়েকটি দিক থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়াতে আসতে হলে উদ্দেশ্য অবশ্যই শিক্ষা হতে হবে। এর ব্যতিক্রম ভাবনা নিয়ে এ ভিসায় আবেদন না করাই শ্রেয়। আর সে ক্ষেত্রে সত্যিকার মেধাবী হওয়াটাই প্রাধান্য পায় সবার আগে। এর পরপরই অর্থনৈতিক ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। এখানে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নিজের খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতা আবেদনকারীর পরিবারের রয়েছে কি না, তা ভালো করে বিবেচনা করতে হবে।
যদিও পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের বেশ সুযোগ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, তবে সে উপার্জনে অনেক সময় খরচ চালাতে হিমশিম খান অনেকে। তাই এ বিষয়টাকে অনেকটা বোনাস হিসেবে ধরে রাখাই ভালো। পরিশ্রম এবং যোগ্যতার সমন্বয়ে পাওয়া এ শিক্ষাবৃত্তি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে বাস্তব করে দিতে পারে। তাই উচ্চশিক্ষায় যাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় আসতে আগ্রহী, তাঁদের অবশ্যই উচিত আরও সচেতন হয়ে এ শিক্ষাবৃত্তিগুলোতে আবেদন করা।
কাউসার খান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া