সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া একটি আকাঙ্খিত গন্তব্য। বাইরের দেশগুলো থেকে এদেশে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদেরকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসতে হয়। এ ভিসায় আগত এবং পড়ালেখা করা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট বা বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট হারে কাজ করারও সুযোগ পেয়ে থাকে। এভাবে কাজ করার সুযোগ থাকাতে সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ নিজেরাই উপার্জন করতে পারে।
পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করতে থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার কর্মপরিবেশ এবং কাজের সুযোগ সম্পর্কেও ছাত্রছাত্রীর সম্যক ধারণা অর্জন করার সুযোগ পেয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তাদের মাঝে যারা এদেশে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থেকে যায় তারাও পেশা ও কাজ পছন্দ করার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।
সর্বোপরি অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারাল পরিবেশে ছাত্রজীবন কাটানোর ফলে এদেশে পড়ালেখা করা ছাত্রছাত্রীরা পৃথিবীর যে কোন দেশে বা পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। উন্নত বিশ্বের গতিময় জীবন, প্রতিযোগিতার পরিবেশ এবং পেশাগত উৎকর্ষ সম্পর্কে তারা ছাত্রজীবনেই মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পেয়ে যায়।
সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা তাদের বেতন নিজেরাই পরিশোধ করে পড়ালেখা করে থাকে। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশে প্রায় ৮ লক্ষ বিদেশী ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছে। এদের মাঝে ক্ষুদ্র একটি অংশ পড়ালেখা করে স্কলারশিপ বা বৃত্তির মাধ্যমে।
অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা এবং গবেষণার মান বিশ্বপর্যায়ের। বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের বিভিন্ন শাখায় অনেক অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু মানের গবেষণার সুযোগ থাকাতে সারা পৃথিবী থেকে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং যোগ্য পন্ডিতরা এখানে কাজ করতে আসেন। গবেষণার এই মান উন্নত করার উদ্দেশ্যেই মূলত অষ্ট্রেলিয়ান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ ভালো পরিমাণের বৃত্তি দিয়ে থাকে।
সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্যই বেশি থাকে। ভালো রিসার্চ প্রপোজাল এবং আগে গবেষণা করার অভিজ্ঞতা থাকলে এই স্কলারশিপগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ সুবিধা বিভিন্নরকম। তবে গড়পড়তায় স্কলারশিপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মওকুফ পাওয়া যায়, যা বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশাল একটি খরচ। ক্ষেত্রবিশেষে চারবছরের এ টিউশন ফি’র পরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় চল্লিশ বা পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও বেশি হয়ে। এ টিউশন ফি মওকুফের পাশাপাশি স্কলারশিপগুলোর অধীনে ছাত্রছাত্রীদেরকে নিয়মিত বিভিন্ন পরিমাণের স্টাইপেন্ড বা মাসোহারাও দেয়া হয়।
এ সকল স্কলারশিপের মাঝে কিছু আছে অস্ট্রেলিয়ান সরকারী স্কলারশীপ, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায়। এছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরিই বিদেশী ছাত্রছাত্রীদেরকে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ান সরকারী স্কলারশিপের মাঝে অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ডস স্কলারশিপ, এনডেভার পোস্টগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ এবং ইন্টারন্যানশনাল পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ (আইপিআরএস) উল্লেখযোগ্য।
অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ডস স্কলারশীপ পরিচালিত হয় এদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন এফেয়ার্সের মাধ্যমে। এই বৃত্তি দেয়া হয় কেবলমাত্র উন্নয়নশীল দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদেরকে এবং এ বৃত্তির অধীনে কেবলমাত্র মাস্টার্স বা পিএইচডিই নয়, বরং আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়েও পড়ালেখা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারী ট্যাফে (টেকনিকাল এন্ড ফারদার এডুকেশন) ইনস্টিটিউটগুলোতে পড়ালেখা করার সুযোগ পায়।
বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য যেসব সরকারী বৃত্তি দেয়া হয় তার মাঝে অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ডস স্কলারশিপের সুযোগসুবিধা সবচেয়ে বেশি। টিউশন ফি মওকুফের পাশাপাশি এই বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা আসা যাওয়ার বিমান টিকেট, নিয়মিত মাসোহারা, স্বাস্থ্যবীমা এবং শুরুর দিকে এককালীন খরচ ইত্যাদি সুবিধা পায়।
এনডেভার স্কলারশিপ এবং আইপিআরএস এর মাধ্যমে কেবলমাত্র মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার সুযোগ দেয়া হয়। এনডেভার স্কলারশিপের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান এওয়ার্ডস স্কলারশিপের কাছাকাছি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় তবে তা কেবলমাত্র উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয় বরং পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকেই যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে ছাত্রছাত্রীরা এ বৃত্তি পেয়ে থাকে।
এসব সরকারী স্কলারশিপের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্তৃক প্রদত্ত নিজস্ব স্কলারশিপেও বিদেশী ছাত্রছাত্রীর পড়ালেখার ব্যয় নির্বাহ করার সুযোগ পায়। এসব স্কলারশিপের মাঝে ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ, ম্যাকোয়ারি ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন গ্রাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ, এডিলেইড স্কলারশিপ ইন্টারন্যাশনাল, ফ্লিন্ডারস ইন্টারন্যাশনাল পোস্টগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যাগুলোর প্রদত্ত নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর একেকটিতে একেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এসব স্কলারশিপের বিস্তারিত তথ্য এবং শর্তাবলী উল্লেখ করা আছে।
সরকারী ও বেসরকারী এসব স্কলারশিপ নিয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করছে। বাংলাদেশী উচ্চশিক্ষার্থী গবেষকদের কাজের মান এবং ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই এদেশে প্রশংসা অর্জন করেছে। পরিশ্রম এবং যোগ্যতার সমন্বয়ে এসব স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব এবং এমন একটি স্কলারশিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিগ্রি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা একজন মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া এবং চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে উচ্চতর গবেষণা করার মানসিকতা যাদের আছে এবং একই সাথে বিভিন্ন গবেষণাকর্মের পূর্বঅভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের পক্ষে সম্ভব চেষ্টা করে বেশ ভালো মানের একটি গবেষণা প্রস্তাবনা বা রিসার্চ প্রপোজাল জমা দেয়ার মাধ্যমে এসব স্কলারশিপ পাওয়া।