যাঁরা কয়েক বছর হল পর্যটনের প্রেমে পড়েছেন, তাঁদের মাথায় হয়তো রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রিপের চিন্তা নেই। কিন্তু ভ্রমণের নেশা যাঁদের অনেকদিনের, তাঁদের কাছে গোটা দুনিয়া ঘুরে আসার স্বপ্ন শুধু অসাধারণ নয়, চিন্তার বিষয়ও বটে। কারণটা কে না জানে, গোটা পৃথিবীর ট্রিপে গেলে খরচার কোনও শেষ নেই।
কিন্তু তাও প্রতিটি পর্যটকের স্বপ্ন এটাই। দুনিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়ানো, আর মন যেখানে চায় সেখানে থামা। নেই কোনও স্থায়ী ঘরবাড়ি, বন্ধু বা রোজনামচা, শুধু একটা স্যুটকেসকে সঙ্গী করে নিয়ে বেঁচে থাকা। অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে চটজলদি স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্তের হাতছানি।
সারা পৃথিবী ঘুরতে কত টাকা লাগবে তা বলা সহজ নয়। কোথায় যাবেন, কখন যাবেন, এরকম অনেক পরিবর্তনশীল জিনিসের উপর খরচ নির্ভর করে। তবে সাধারণত, ৫টি প্রধান বিষয়ে খরচ হয় – ফ্লাইট টিকিট, থাকার জায়গা, স্থানীয় যানবাহন, খাবার এবং ড্রিংকসের উপর।
সম্প্রতি বেশ কিছু রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড পর্যটকরা রেডিটে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং জানান তাদের বেড়ানোর গল্প আর কীভাবে তাঁরা নিজের ইচ্ছে মতো দুনিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
আসুন দেখে নেওয়া যাক, তাঁদের থেকে আমরা কী কী জানতে পারি।
বেশিরভাগ পৃথিবীভ্রমণে উৎসাহী পর্যটকদের প্রথম চিন্তা হল তাঁরা তাঁদের কাজ আর সেভিংস কীভাবে সামলাবে
২০১৪ সালে ৩৩৩ দিনে বিশ্বভ্রমণ করা এক পর্যটক জানান, “ভাগ্যক্রমে আমার জব ফ্লেক্সিবিলিটি থাকার ফলে আমি ঘুরতে ঘুরতে কাজ করতে পারতাম। আমি সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ ঘন্টা প্রোগ্রামিং এর কাজ করতাম। এতে যা আয় হত, তাই যথেষ্ট ছিল, আমার সেভিংস থেকে সেরকম খরচ হয়নি”
তাহলে আপনি যদি সেভিংস থেকে খরচ না করতে চান বা সেভিংস যদি না থেকে থাকে, তাহলে এমন একটি জব খুঁজুন যেখানে আপনি নিজের সময় মতো যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করতে পারবেন। এর ফলে মাসের শেষে মাইনে আসা নিশ্চিত, যা ফ্রি-ল্যানসিং করলে হবে না।
বিশ্বভ্রমণ-এর খরচার ধাক্কা সামলানোর আরেকটি উপায় হল কয়েক বছর বেশি মাইনের চাকরি করা। এই পর্যটকের মতে, “আমার বয়স ৩২ এবং আমার স্ত্রীর ৩১। আমরা ট্রিপের জন্যে টাকা জমিয়েছিলাম, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমার ছোট একটি ব্যবসাও ছিল। আমাদের ভ্রমণকালে ব্যবসায়ে বেশ ভাল লাভ হতে থাকে। আর ঘুরতে যাওয়ার আগে আমার বেশ মোটা মাইনের চাকরিও ছিল।”
আপনি কী রকম ভাবে ঘুরবেন এবং কতটা বিলাসিতা চান, তার ওপর নির্ভর করবে সব মিলিয়ে কী রকম খরচ হবে। কিন্তু যদি বিভিন্ন ডিলের ওপর নজর রাখেন এবং আপনার কাছে যা আছে সেগুলো যদি ব্যবহার করেন, তাহলে খরচ আয়ত্বের মধ্যেই থাকবে।
যেমন এই পর্যটকের বর্ণনা থেকে জানতে পারি, কীভাবে বিভিন্ন ডিলের সুবিধে নিয়ে তিনি খরচ অনেকটা কমিয়ে এনেছিলেন। তিনি বললেন “আমি প্রায় ২ বছর একটানা ঘুরছি। আমার বান্ধবী সবেমাত্র আমাদের সারাবছরের হিসেবটা করেছে, আর সব প্লেন/ট্রেন/হোটেল/খাবার দাবার মিলিয়ে আমাদের প্রতিদিন খরচ হয়েছে ৩১.৪৫ ডলার। আমরা কিন্তু কষ্ট করে থাকিনি, ২ বা ৩ স্টার হোটেলে তিন বেলা খেতাম, সপ্তাহে দু বার অ্যাডভেঞ্চারে যেতাম। আসল ব্যাপারটা হল কীভাবে বাজেটের মধ্যে জায়গায় যাবেন, মাঝে মাঝে কাউচ্ সার্ফ করবেন, হোটেল ডিল / পয়েন্টস আর ক্রেডিট কার্ড মাইলসের সদ্ব্যবহার করবেন”।
আরেকটি উপায় হল সম্ভাব্য খরচাগুলি এক এক করে ভেঙে নেওয়া। এর ফলে একটা বড় খরচের বদলে আপনি দেখতে পাবেন কোথায় কত খরচ হচ্ছে আর কোথায় খরচ কমানো যাবে।
“প্রথমেই যেটা উচিত তা হল প্লেনভাড়ার ব্যাপারটা গুছিয়ে নেওয়া। গুগলের ফ্লাইট ম্যাট্রিক্স এটা করার সবচেয়ে ভাল উপায়, তবে যারা নিয়মিত ফ্লাইট ডিল খুঁজে বার করেন, তাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করলেও উপকার হতে পারে। মাসখানেক আগে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিউজিল্যান্ডের রিটার্ন টিকিটের দাম ছিল মোটে ২০০ ডলার!! আমি যখন আফ্রিকায় ছিলাম তখন আমেরিকার পূর্ব উপকূল থেকে দলে দলে লোকজন কেপ টাউন আসতে শুরু করে, ৫০০ ডলার-এ রিটার্ন টিকিট পেয়ে।” জানালেন আরেক পর্যটক, লম্বা সময় ধরে সফরের জন্যে আরও বেশ কিছু টিপসের সঙ্গে সঙ্গে।
রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড টিকিটও কিনতে পারেন, যা দিয়ে সহজেই ঘুরে আসা যায়। তাই বিভিন্ন এয়ারলাইন থেকে টিকিট না কেটে একটাই এয়ারলাইন থেকে টিকিট কাটতে পারেন, যা ব্যবহার করা যাবে বিভিন্ন পার্টনার এয়ারলাইনে। রুট বা স্টপের ওপর নির্ভরশীল এই টিকিট গুলির দাম হতে পারে ২৭০০ থেকে ১০০০০ আমেরিকান ডলারের মতন। দুই বা তিন স্টপের টিকিট মাত্র ১৫০০ ডলারেই পাওয়া যায়। আর ডেস্টিনেশন চেঞ্জ না করে, নিখরচায় আপনি যাত্রার সময় বা তারিখ বদলে নিতে পারেন।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক পর্যটক জানান “ট্রিপের আগে মাইলস জমিয়ে জমিয়ে অনেকটা খরচ বাঁচানো যায়। আমার ১৫টা স্টপের রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড টিকিটের দাম ছিল জনপ্রতি ৫৫০ ডলার, যার বেশিরভাগটাই ছিল এয়ারপোর্টের ফিজ আর ট্যাক্স, বাকি পুরোটাই দেওয়া হয়েছিল পয়েন্টস দিয়ে।”
এবার আসল খবর। বিশ্বভ্রমণের খরচ নয়, সেটা তো সামলানো যায়, কিন্তু এই বিশাল বড় ব্রহ্মাণ্ডের এমন এক জায়গা যেখানে আপনি দিন রাত মনের মতন কিছু না কিছু পাবেন করার জন্যে এবং এই গন্তব্যস্থলের তাপমাত্রা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং মানুষজন, সবকিছুই তুলনাহীন।
২ বছর ধরে ভ্রমণরত এক পর্যটকের মতে “ইউক্রেনের লভিভ আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। ঘরোয়া, জীবন্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ। লোকজন এসে আপনার সাথে আলাপ করবে, আপনাকে আপন করে নেবে। সত্যি খুব সুন্দর শহর। আমার চিয়াং মাই ও খুব ভাল লেগেছে, স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে একেবারে উপযুক্ত। আমরা দু’মাস ছিলাম, একদম বাড়ির মতো মনে হয়েছে। সেরা আবহাওয়া, খুব সুলভ, অত্যন্ত সুন্দর সংস্কৃতি আর করারও আছে অনেক কিছু।”
কিছু পর্যটক আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছেন যে এমন বেশ কিছু জায়গা আছে, যেখানে অন্য বড় বড় শহরের মতো সব কিছু না থাকলেও, জায়গাগুলো তাঁদের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
টোকিওর প্রেমে পড়া এক পর্যটকের মতে, “সবচেয়ে পছন্দের শহর টোকিও, পছন্দের দেশ বলতে পারব না। কিন্তু নিঃসন্দেহে প্যাটাগনিয়া আমার সবচেয়ে পছন্দের ডেস্টিনেশান। আমি এক সপ্তাহের জন্যে টোকিওতে ছিলাম। টোকিওতে সুন্দর সময় কাটানোর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল যে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ছিলাম, যে ওখানেই থাকে। তার বন্ধুদের সাথেও সময় কাটালাম। খুবই মজাদার একটা জায়গা। রাতের বেলা আকীহাবারাতে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে চারদিকে বিজ্ঞাপনের শব্দ, আলো দেখে মাথা ঘুরে যাচ্ছিল। নেশায় মত্ত হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যারাওকে গাইতেও খুব মজা।”