কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অত্যাধুনিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির নির্মাতা। চ্যাটজিপিটির প্রধান সংস্থা ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট কমিটির সামনে নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং এর ত্রুটিগুলো সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু এআই মডেল বাজারে এসেছে। অল্টম্যান বলেন, এআই কম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠন হওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য অনুরূপ প্রগ্রামগুলো অবিশ্বাস্যভাবে মানুষের মতোই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করতে পারে। তবে এটি অনেক ভুল তথ্যও দিতে পারে।
৩৮ বছর বয়সী স্যাম অল্টম্যান যেন ক্রমবর্ধমান এআই শিল্পের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। এআইয়ের ফলে নৈতিকতা বিষয়ক যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে সেগুলোর সমাধান বের করতে পিছপা হননি তিনি। এ কারণে তাকে এই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে অনেক চাপের মুখেও পড়তে হয়। তিনি বলেছিলেন, এআই ‘ছাপাখানার’ মতো বড় শিল্প হতে পারে। তবে এর সম্ভাব্য ঝুঁকির কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
অর্থনীতিতে এআইয়ের যে বড় ধরনের প্রভাব থাকতে পারে তা-ও স্বীকার করেছেন অল্টম্যান। সেই সঙ্গে এআই প্রযুক্তি যে মানুষের চাকরির জায়গা দখল করতে পারে এবং এর প্রভাবে যে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে জনবল ছাঁটাই হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘চাকরিতে এর প্রভাব পড়বে। আমরা বিষয়টি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চেষ্টা করি।’
যা হোক, কিছু সিনেটর যুক্তি দিয়েছিলেন, ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মামলা দায়ের করা আরো সহজ করার জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন।
অল্টম্যান আইন প্রণেতাদের বলেছেন, তিনি গণতন্ত্রের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের সময় কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ভুল তথ্য পাঠাতে এআই কিভাবে ব্যবহার হতে পারে সে কথাও তিনি তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন সংস্থা এই শিল্পকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে ব্যাপারে তিনি বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে এআই কম্পানিগুলোকে অনুমোদন দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি।
তিনি আরো বলেন, ওপেনএআইয়ের মতো সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত।
রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলে বলেছেন, এটি একধরনের বৈপ্লবিক প্রযুক্তি হতে পারে, তবে নতুন প্রযুক্তিকে ‘পারমাণবিক বোমা’ আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল তার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা যে রকম ভবিষ্যৎ চাই, এআই নির্ভর ভবিষ্যৎ যে সে রকমই হতে হবে, তা অপরিহার্য নয়। আমাদের খারাপ দিকগুলোর চাইতে ভালো দিকগুলোকে আরো বাড়াতে হবে। কংগ্রেসের এখন বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
ব্লুমেন্থাল সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা যখন সামাজিক মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলাম, তখন আমাদের বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। তখন আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।’ এই সিনেটরের সাক্ষ্য থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, এই শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নতুন সংস্থা গঠনের বিষয়ে দুই পক্ষেরই সমর্থন রয়েছে।
প্রযুক্তিটি এত দ্রুত এগিয়ে চলছে যে আইন প্রণেতারাও ভেবেছিলেন এই জাতীয় সংস্থার টিকে থাকা আদৌ সম্ভব হবে কি না।
সূত্র : বিবিসি