বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

অমর প্রেমের স্মৃতি সৌধ: তাজমহল

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

প্রেমের সমাধি তাজমহল। শ্বেতশুভ্র এই সৌধ অমলিন ভালোবাসার প্রতীক। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক থেকে সেলিব্রেটি সকলেই নিজেদের প্রেমকে বর্ণময় করে রাখতে এই সৌধের সঙ্গে এক ফ্রেমে জড়িয়ে নিতে চেয়েছেন যুগে যুগে। বিল ক্লিনটন, ওবামা, মুশাররফ, ট্রাম্প থেকে ইংল্যান্ডের রাজকুমার কে যে নেই, তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। প্রেমের এই সৌধ শুধু দেশের নয়, বিশ্বের অবশ্যই দর্শনীয় স্হানগুলী মধ্যে অন্যতম। তাই তাজমহল জীবনে একবার না দেখলে হয়তো অসমাপ্ত থেকে যাবে আমাদের এই ক্ষণিকের মনুষ্য জীবন।

কবি কল্পনায়  আঁকা তাজমহলের সঙ্গে বাস্তবের আঙিনায় দাঁড়িয়ে তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্য  দু’চোখে দেখা এক অভাবনীয়  ব্যাপার। ঐতিহাসিক স্হান – স্হাপত্যভূমি-প্রত্নস্হল -স্মৃতিসৌধ  চিরদিন আমার  কাছে অত্যন্ত আদনীয় ও আকর্ষণীয়।

এই অমোঘ আকর্ষণে সুযোগ পেয়েই চলে গিয়েছিলাম  দিল্লীতে সপরিবারে এক শারদীয়া দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিনে। বেশ কয়েক বছর আগে। সঙ্গে ছিলেন মা ও ছোট শ্যালিকা,মোট পাঁচজন। আজ তিনি বেঁচে নেই। চাকরিতে যোগদানের পর বলেছিলেন পারলে একটু  আগ্রা দেখাস‌। মায়ের ‘সাজাহান’ কবিতার প্রতি অসাধারণ আকর্ষণ ছিল। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময়  আবৃত্তি করে আমাকে শুনিয়েছিলেন। আজো শুধুই অমলিন স্মৃতি । বাঁকুড়া থেকে নীলাচল এক্সপ্রেসে রাত ১০টায়  উঠে পড়লাম। রিজার্ভেশন করা ছিল আগে থেকে। যে যার সিট খুঁজে নিয়ে  বসে পরলাম। শুরু হলো গল্প আর গল্প। জীবনে এটাই ছিল প্রথম দিল্লি যাওয়া।

রাত বাড়ছে ক্রমশ। বেশ গতিতে এগিয়ে চলেছে আমাদের ট্রেন। একটু পরে রাতের খাবার পর্ব সারলাম। রাতে ঘুমানোর সময় ভেসে উঠতে লাগলো দিল্লী-আগ্রার নানা বর্ণময় ইতিহাস যে গুলো ছোটবেলায় শুধুই  পাঠ্যবই -এ  পড়েছিলাম। আগ্রার প্রতি  আমার অমোঘ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু রবীন্দ্রনাথের  ‘সাজাহান’ কবিতা।  বাংলার স্যারের উদাত্ত কণ্ঠে শোনা কবিতা আজ  নিজের মানসপটে  জেগে উঠলো নতুন ভাবেই। ‘সাজাহান ‘কবিতার মর্মবাণী যেন শুনতে পেলাম। পরের দিন সকাল হলো। আমরা এসে পৌঁছলাম বিহারের পাটনা। সকালে টিফিন সেরে জানলা দিয়ে বাইরের পৃথিবীকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। একটা-একটা  অপরিচিত  জনপদ অতিক্রম করে আমরা কানপুরে পৌঁছলাম। তারপরের দিন দুপুরে পৌঁছলাম দিল্লী। সময় লাগলো ৩৭/৩৮ ঘন্টা।

এবার গন্তব্যস্হল দিল্লীর ওয়েস্ট প্যাটেল নগরে আমার শ্যালিকার বাড়ি। ওরা ওদের গাড়ি করে নিয়ে গেল বাড়িতে। থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে আমি একেবারেই চিন্তাভাবনা মুক্ত। শুধুই ঘুরবো, এই মনোভাব জেগে উঠলো। শ্যালিকার স্বামী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অফিসার  হওয়ায় নানা জায়গায় থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা বাড়তি পাওনা। ফলে পরিকল্পনা শুরু করলাম, দিল্লী  ঘুরে আগ্রায় থাকবো তিন দিনেক তারপর দিল্লি ফিরে  দেরাদুন-মুসৌরি-হরিদ্রার সহ গাড়োয়াল। ১৫দিনের বেশ লম্বা চওড়া সফর। খাওয়া-থাকার ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা ছিল না। পুরো সফরের দায়িত্ব পালন করলো দিল্লীর আত্মীয়-স্বজন। ওদের আন্তরিকতা ছিল হৃদয় ওপড়ানো। মাঝে মাঝে একটু অস্বস্তি লাগছিল ও আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগছিল। কোথাও আমাকে একটি টাকা খরচ করতে দেয়নি। দুপুরের খাওয়া পর্ব সারলাম এবং বাঙালিদের সুপ্রাচীন বসতি দিল্লির পুরাতন কালিবাড়িও জানুকিপুরি (বহিঃ দিল্লি) গেলাম, অনেক বাঙালি পুজোয় এসেছেন নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। এরপর গেলাম জানকীপুরি,এটাকে বহিঃ দিল্লি বলে।

ওখানকার বাঙালিদের কাছে পেয়ে ভালো লাগলো। পুরো কলোনিতে শুধু বাংলা-ভাষাভাষির মানুষজন। বেশ সময় কাটছিল একেবারে মসৃনভাবে,  করোলবাগে বাজার করে  ফিরে আসলাম। রাতের খাবার পর্ব সারলাম। নানা ধরনের ভাবনা মনে জায়গা করে নিল। দিল্লি মানে তো একটা শহর, একটা দেশের রাজধানী শুধু নয়। আরো অনেক কিছুই। পরতে পরতে বনেদিয়ানার ছাপ ও অতীত ঐতিহ্যের এবং  ইতিহাসের অপার বিস্ময়। তবে নয়া দিল্লি নয়, পুরোনা দিল্লিতে খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে ভারত আত্মার খোঁজ। একান্ত নিভৃতে অতীতের দিকে ফিরে ইতিহাসের  হলুদ পাতা উলটে- পালটে দেখতে চেষ্টা করলাম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com