দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প। কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর গত দুই বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষের মধ্যে ভ্রমণ চাহিদা পুনরায় জাগ্রত হয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্রগুলোও আবারো মুখর হচ্ছে পর্যটকদের পদচারণে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণও প্রাক-মহামারী স্তরে ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা জানায়, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটন ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কমেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালের আগে পুরোপুরি পর্যটন খাত পুনরুদ্ধার নাও হতে পারে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিন দিন অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাত আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। অনেকেই এখন নিজের মাতৃভূমি অন্বেষণ করতে নিজের দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ট্রাভেলোকায় ফ্লাইট বুকিং ২০ শতাংশ বেড়েছে।
পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীবিকা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করছে। এটি মহামারী পরবর্তী সময়ে পর্যটন খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
অভ্যন্তরীণ পর্যটন দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভ্রমণ খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে একে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি। ২০১৯ সালে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ৫১০ কোটি ডলার আয় করেছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যটন থেকে ১৪ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার আয়ের প্রায় সমান।
স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় বিনিয়োগের ফলে স্থানীয়দের বেশি উপকৃত হয়ে থাকে। স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্প্রসারণ করা হলে সেখানকার স্থানীয়দের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও স্থিতিশীল কর্মসংস্থান হয়। এ ধরনের কার্যক্রম গ্রামীণ অঞ্চলে আয়ের একটি উৎস তৈরি করে। পাশপাশি সড়ক ও টেলিযোগাযোগের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে অন্যতম একটি উদাহরণ। চলতি বছর দেশটি ১৪০ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে মাধ্যমে আয়ের লক্ষ্য নিয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে ৪৪ লাখ পর্যটন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দেশটি পাঁচটি বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য অবকাঠামো, কর্মী প্রশিক্ষণ ও বিপণনে ১২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
থাইল্যান্ডের অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। দেশটিতে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা চীনাদের তুলনায় এখনো কম। থাই সরকারের তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে চীনা ভ্রমণার্থীরা থাইল্যান্ডে প্রতিদিন প্রায় ১৯৭ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। ভারতীয়রা ব্যয় করেছে প্রায় ১৮০ মার্কিন ডলার। থাইল্যান্ডও বর্তমানে হাইওয়ে ১২ নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নত করছে। ভিয়েতনাম ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ কোটি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে উদ্ভাবনী চিন্তার সংমিশ্রণ অপরিহার্য। এ অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারগুলোকে ছুটি, ভ্রমণ ভর্তুকিসহ সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণে কাজ করতে যেতে হবে। অভ্যন্তরীণ পর্যটন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করেছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি খাতকেও অভ্যন্তরীণ পর্যটনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সমর্থন করা প্রয়োজন। অভ্যন্তরীণ পর্যটনে বিনিয়োগকারী দেশগুলো ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় আরো স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছে খাতসংশ্লিষ্টরা।