বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। দেশটির মাথাপিছু আয় ৫৩ হাজার ৭৪৫ ডলার। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে জীবনযাত্রার মান অনেক বেশি উন্নত। উত্তর ইউরোপের দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও শেনজেনভুক্ত। ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৫ বর্গ কিলোমিটারের ফিনল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বড়। কিন্তু আয়তনে অনেক বড় হলেও বর্তমান জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭১ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ১৭ জন। সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জনসংখ্যা খুবই কম। তাই বিপুল সংখ্যক অভিবাসী খুঁজছে ফিনিশ সরকার।
ফিনল্যান্ডে কর্মজীবী মানুষের সংকট। সেখানে জন্মহার নিম্নগামী, যা দেশটির সরকারের জন্য বেশ উদ্বেগের। গত বছরের নভেম্বরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডে বিভিন্ন কাজের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার অভিবাসী খুঁজছে দেশটির সরকার। দেশটির প্রযুক্তিখাতে আগামী ১০ বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার নতুন লোক প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ফিনল্যান্ডে প্রতি ১০০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির প্রায় ৩৯ জনেরই বয়স ৬৫ বছরের বেশি।
তবে ফিনল্যান্ডে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বেশ প্রবল। অভিবাসী নিয়োগে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। এই মনোভাব কাজে লাগিয়ে চরম ডানপন্থী দল ‘ফিনস পার্টি’ যথেষ্ট সমর্থন লাভ করে। তবে দীর্ঘ সময় স্থিতি অবস্থার পর সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংকট চরমে পৌঁছেছে।
তবে শুধু তাই নয়, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য, ভীষণ ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং কঠিন ফিনিশ ভাষাও দেশটিতে অভিবাসীদের না থাকার অন্যতম কারণ। ২০১৩ সালে সেখানে ৮ স্প্যানিশ নার্স কাজ করতে আসেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনই কয়েকমাস পর চলে যান। না থাকার কারণ হিসেবে তারা এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।
ফিনল্যান্ড শেনজেনভুক্ত দেশ হওয়ায় সেই দেশের অভিবাসীরা সহজেই অন্য দেশে যেতে পারে। এটিও সেই দেশে অভিবাসী না থাকার একটি অন্যতম কারণ।
সেই দেশের সরকারি হিসাব মতে, দেশত্যাগী মানুষের বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত।
ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী অভিবাসীরা জানান, ফিনল্যান্ডের নিয়োগকারীরা অন্য দেশে কাজের অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা মেনে নিতে চায় না। এছাড়াও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
তবে ফিনল্যান্ডে অভিবাসন আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশটি ছেড়ে যাওয়া মানুষের চেয়ে থাকতে আসা মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।