এতে বলা হয়েছে, শ্রমবাজারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী ধরে রাখতে হলে ২০৪০ পর্যন্ত প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ ৮৮ হাজার অভিবাসী কর্মীর প্রয়োজন হবে৷
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ৮৮ পৃষ্ঠার সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়৷ এর মধ্য দিয়ে মূলত ‘‘জার্মান শ্রমবাজার স্থিতিশীল রাখা এবং কর্মী চাহিদা মেটাতে অভিবাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ’’ তা তুলে ধরা হয়েছে৷
বার্টেলসমান সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন স্টেট ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ (আইএবি) এবং কোবুর্গ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেসের অর্থনীতিবিদেরা৷
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বার্টেলসমান স্টিফটুং জার্মানির বৃহত্তম ফাউন্ডেশনগুলোর একটি৷ চারটি দেশে ৩৩০ জন কর্মী রয়েছে এই সংস্থাটির৷ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি৷
অভিবাসন ছাড়া কী হবে জার্মানির শ্রমবাজারে?
জার্মানিতে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে৷ এর বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে জার্মান শ্রমবাজারে৷
নতুন এই সমীক্ষাটি বলছে, শ্রমঘাটতির প্রভাব বেশ নাটকীয়ভাবে আঘাত করবে দেশটির অর্থনীতিকে৷ এমন অবস্থায় জার্মানি যদি অভিবাসীদের তাদের শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ না দেয়, তাহলে ২০৬০ সালের মধ্যে চাহিদার তুলনায় কর্মী কমবে চার ভাগের এক ভাগ৷
বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে জার্মানিতে কর্মীর সংখ্যা ১০ শতাংশ কমে যাবে৷ বর্তমানে জার্মানির শ্রমবাজারে যুক্ত আছেন চার কোটি ৬৪ লাখ কর্মী৷ তা কমে হবে চার কোটি ১৯ লাখ৷ এ অবস্থা বজায় থাকলে ২০৬০ সালের মধ্যে শ্রমশক্তি ২৫ শতাংশ কমে হবে তিন কোটি ৫১ লাখ৷
বার্টেলসমান গবেষণার দুই গবেষকের একজন হলেন সুজানে শুলৎস ৷ তিনি বলেন, ‘‘জনসংখ্যাগত পরিবর্তন অর্থাৎ বেবি বুমারদের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে যারা জন্ম নিয়েছেন) অবসর নেয়াটা জার্মান শ্রমবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে৷ আর সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে অভিবাসীদের বিকল্প নেই৷’’
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী নিশ্চিত করতে হলে, ২০৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর জার্মানিতে দুই লাখ ৮৮ হাজার কর্মীর প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা৷ তারা বলছেন, এসব কর্মীদের নিয়োগ দিতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকেই৷
অভিবাসীদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান
গবেষক শুলৎস মনে করেন, জার্মানির অভিবাসন বিষয়ক সংশোধিত আইনটি দেশটির প্রতি আগ্রহী কর্মীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে৷ একইসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি এবং পৌরসভাগুলোকে অভিবাসীদের প্রতি আরো আন্তরিক হতে হবে৷ কারণ, কর্মী হিসাবে যারা জার্মানিতে আসবেন তারা দীর্ঘসময় ধরে এই দেশটিতে বসবাস করবেন৷
আরও পড়ুন
দক্ষ কর্মীদের ভিসা দেয়া বাড়িয়েছে জার্মানি
কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা এবং তাদের পরিচালিত গবেষণায় বারবার দেখা গেছে, জার্মানি আসার ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়৷ সম্প্রতি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) জানিয়েছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ভিসা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নানা সংকটে পড়ছেন অভিবাসী কর্মীরা৷ এর সঙ্গে সংস্থাটি আরো উল্লেখ করেছে, জার্মানিতে বাসস্থানের অভাব এবং শিশুদের যত্নআত্তির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাধার কারণে অনেক বিদেশি কর্মী আগ্রহ হারাচ্ছেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে অভিবাসন আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা এই বছরের মার্চে কার্যকর হয়েছে৷ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান ভিসা ইস্যু করেছে জার্মানি৷
সমীক্ষাটি বলছে, অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করা না হলে ২০৪০ নাগাদ জার্মানির ১৬টি কেন্দ্রীয় রাজ্যের মধ্যে কয়েকটির অবস্থা খুবই শোচনীয় হতে পারে৷ পূর্ব জার্মান রাজ্য টুরিংগিয়া এবং জারলান্ডে শ্রমশক্তি ১০ শতাংশের বেশি কমবে৷ আর হামবুর্গ, বার্লিনে ও ব্রান্ডেনবুর্গের শ্রমবাজারেও পড়বে বিরূপ প্রভাব৷
সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, বাডেন-ভ্যুর্টেমবের্গ, বাভারিয়া, হেসে, বার্লিন এবং হামবুর্গ রাজ্যে বিপুল সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন দেখা দেবে৷
অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা
অন্য একটি সমীক্ষা বলছে, জার্মানিতে অবস্থানরত অভিবাসীদের শ্রমবাজারে যুক্ত করার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত৷ এ বছরের শুরুতে জার্মানির ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চ (বিআইবি) এর করা সমীক্ষাতে দেখা গেছে, জার্মান শ্রমবাজারে বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম৷
বিআইবি জানিয়েছে, জার্মানিতে থাকা অভিবাসী বা অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত৷ এসব মানুষকে সমাজে এবং শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে জার্মানির উচিত ভাষা শেখানো ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া৷
ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চ বলছে, জার্মানিতে অভিবাসনের অতীত ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ৷ আর দেশটির মোট জনসংখ্যা আট কোটি ৫০ লাখ৷ অর্থাৎ প্রতি চার জনে অন্তত একজন মানুষের অভিবাসনের অতীত রয়েছে৷