অভিবাসন রোধে গত বছর ভিসা নীতিতে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এরপর থেকে গত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে ভিসার জন্য আবেদনকারী বিদেশি কর্মী, শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ কমেছে। খবর বিবিসি’র।
হোম অফিসের অস্থায়ী পরিসংখ্যান বলছে, ভিসার জন্য আবেদনকারী অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যের সংখ্যা ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার থেকে গত মাসে ৯১ হাজারে নেমে এসেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী বা কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০০ জনে।
পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকার কর্তৃক, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন কর্মীদের যুক্তরাজ্যে পরিবার নিয়ে আসা নিষিদ্ধ করার পর থেকেই অভিবাসীদের সংখ্যায় এ পরিবর্তন এসেছে।
হোম অফিসের ভাষ্যে, এটি তাদের দেশীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার ঘাটতি মোকাবেলা নিশ্চিত করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, অভিবাসন যুক্তরাজ্যের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে এনেছে, তবে এটি অবশ্যই একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণ করতে হবে।
ন্যাশনাল কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ কো-চেয়ারম্যান নাদ্রা আহমেদ বলেন, এই খাতের কিছু কর্মী দেশে ফিরে যেতে বা অভিবাসীদের প্রতি নমনীয় এমন দেশগুলোতে যেতে শুরু করেছে।
বিবিসির রেডিও ফোর টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, যদি আমাদের দেশীয় কর্মীরা কাজ করতে ইচ্ছুক থাকত তবে বিদেশ থেকে অভিবাসীদের এনে এখানে নিয়োগ দিতে হত না।
তার মতে দেশীয় কর্মীদের দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে অন্তত কয়েক বছর সময় লাগবে এবং এসময়ে এই খাতে শূন্যপদের সংখ্যা অস্থিতিশীল হারে বাড়তে পারে।
ভিসার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদন হ্রাস ইতিমধ্যে আর্থিক চাপের মুখোমুখি থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
মাইগ্রেশন অবজারভেটরি বলছে, নাইজেরিয়ার মুদ্রা সংকটের মতো দেশভিত্তিক কারণে শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন কমে যাওয়ার পেছনে আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক রেকর্ড উচ্চতা থেকে অভিবাসনের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য যে নতুন নিয়ম চালু করেছিলেন, তাতেও ভিসা আবেদনের পরিমাণ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সালে বৈধ নেট মাইগ্রেশন ৭ লাখ ৬৪ হাজারে পৌঁছালেও ২০২৩ সালে তা ১০ শতাংশ কমে। তবে, অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি দীর্ঘস্থায়ী নিম্নমুখী প্রবণতার সূচনা করে কিনা তা এখনও বলা খুব তাড়াতাড়ি হবে।
২০২১ সালে ব্রেক্সিটের পর নিয়োগ জটিলতা কমাতে কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য অভিবাসন বিধি শিথিল করা হয়েছিল।
দুই বছর পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ঘোষণা দেন, নেট মাইগ্রেশনের সংখ্যা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কেয়ার ওয়ার্কারদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনা নিষিদ্ধ করবে সরকার।
এর আগে বেশিরভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীল বা পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, কারণ শিক্ষার্থী নির্ভরশীলদের জন্য ইস্যু করা ভিসার সংখ্যা ২০১৯ সালে ১৬ হাজার থেকে নাটকীয়ভাবে বেড়ে ২০২২ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজারে উন্নীত হয়েছিল।
অভিবাসন রোধে ভিসা নীতিকে আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করে যুক্তরাজ্য। ২০২৩ সালের শেষের দিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি পাঁচ দফার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
যুক্তরাজ্যে আসতে ইচ্ছুক দক্ষ বিদেশি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড করে তৎকালীন সরকার।
এছাড়া, দক্ষ কর্মী হিসাবে যোগ্যতা অর্জনের জন্য আবেদনকারীদের ২০২০ সালে প্রবর্তিত পয়েন্ট সিস্টেমের অধীনে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।
কর্মী ঘাটতিসহ যেকোনো সেক্টরে চাকরির অফার থাকা বা পিএইচডি হোল্ড করা— বিভিন্ন উপায়ে ইমিগ্রেশন সিস্টেমের জন্য পয়েন্ট অর্জন করা যায়।
মাইগ্রেশন অবজারভেটরি থিংক ট্যাংক উল্লেখ করেছে যে হোম অফিসের সাম্প্রতিক তথ্যগুলো দক্ষ কর্মীদের জন্য ন্যূনতম বেতনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ানোর কোনো স্পষ্ট প্রভাব দেখায়নি।
আগের সরকার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনার জন্য ন্যূনতম বেতন ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড করার প্রস্তাব করেছিল। সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পরে, তারা কমিয়ে ২৯ হাজার ডলার করে।
গত মাসে হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেছিলেন, মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন লেবার সরকার এই সীমা ২৯ হাজার পাউন্ডে রাখবে।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন