দেশটির নতুন জোট সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পারিবারিক পুনর্মিলন বিধিমালায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ‘অস্থায়ী এবং জরুরিভিত্তিতে’ শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে৷
১৪ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করার কথাও বিবেচনা করছে জোট সরকার৷ তারা বলছেন, ‘‘অন্যদের চেয়ে আলাদা করা এবং নিপীড়ন থেকে’’ কিশোরীদের রক্ষা করতেই হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে৷
নবগঠিত সরকার ২১১ পৃষ্ঠার একটি কর্মসূচি তৈরি করেছে৷ দেশটির রাজধানী ভিয়েনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি এটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত উদ্যোগের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এতে৷
ভোটে জিতেও সরকারে নেই ফ্রিডম পার্টি
রক্ষণশীল অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি, মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং উদারপন্থি এনইওএস ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে৷ ফলে, গত সেপ্টেম্বরে হয়ে যাওয়া পার্লামেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও অতি-ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টি সরকারে আসতে পারছে না৷ তাদের থাকতে হচ্ছে বিরোধী দল হয়েই৷
অস্ট্রিয়ার নতুন সরকারের সোমবার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ফান ডেয়ার বেলেন তিন দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন৷
অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টির প্রধান ক্রিস্টিয়ান স্টকার দেশটির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন৷ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতা আন্ড্রিয়াস বাবলারকে দেখা যাবে ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্বে৷ এনইওএস এর প্রধান নেতা বিয়াটে মাইনল-রাইজিঙ্গারকে দেয়া হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব৷
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনে গত পাঁচ মাসের অপেক্ষার শেষ হতে যাচ্ছে৷
প্রতিটি দলই তাদের নিজ নিজ অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়েই ২১১ পৃষ্ঠার কর্মসূচি ঠিক করেছে৷ রক্ষণশীল পিপলস পার্টি অভিবাসন এবং নিরাপত্তার উপর বেশি জোর দিয়েছে৷ তবে, তাদের পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে অতি-ডানপন্থি ফ্রিডম পার্টির নীতির বেশ মিল রয়েছে৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ধনী এবং কর্পোরেশনগুলোর উপর উচ্চতর কর আরোপ করার কথা বলেছে৷ অন্যদিকে, এনইওএস কর কমানো এবং পেনশন সংস্কারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে৷
অভিবাসন ও শরণার্থী নীতিতে পরিবর্তন
নতুন সরকার জানিয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা ও নির্বাসন প্রক্রিয়া উন্নত করতে তৃতীয় দেশের সঙ্গে চুক্তিকে সমর্থন করবে তারা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত জোটের স্থানান্তর বা পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে অতিরিক্ত আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণেও বিরোধিতা করবে জোট সরকার৷
অস্ট্রিয়ায় আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র ছাড়া অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে নিজেদের আইনি অধিকার বাড়াতে চায় দেশটির নতুন জোট সরকার৷ তারা বলছেন, এর মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটানোই তাদের লক্ষ্য৷
নতুন নীতি কাঠামো অনুসারে, আশ্রয়প্রার্থীরা তখনই অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন, যদি তারা জার্মান ভাষা শেখেন এবং সমাজে ‘সফলভাবে অন্তর্ভুক্ত’ হতে পারেন৷ তবে, শরণার্থীর সংখ্যা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেলে’ আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন স্থগিত করার অধিকার থাকবে সরকারের৷
জোট সরকার আরো বলেছে, আগামীতে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের আলাদা একটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কেন্দ্রে রাখতে চায়, যাতে তারা পালাতে না পারেন৷ তবে, মানবিক পরিস্থিতি এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার নতুন সরকার৷